সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: বুশের পথেই ট্রাম্প?

- আপডেট সময় : ০৫:১৫:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ এপ্রিল ২০১৭ ২৮৬ বার পড়া হয়েছে
শুক্রবার ভোররাতে সিরিয়ার একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে মার্কিন ক্রুজ মিসাইল হামলা সকালে উঠে আচমকা শোনা খবর হলেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হিসাব করেই পদক্ষেপটি নিয়েছেন বলে ধারণা করা যায়। পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যম অবশ্য বেসামরিক নাগরিকদের ওপর অবৈধ রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করার ফলে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রতি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ‘হঠাৎ বদলে যাওয়ার’ তথ্যকে গুরুত্ব দিয়েছে। ট্রাম্পের হিসাব যা-ই থাকুক, এই হামলায় বিশ্ববাসীর উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। এতে ছয় বছর ধরে চলা সিরীয় গৃহযুদ্ধ শেষ না হয়ে আরও দীর্ঘায়িত ও জটিল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলো। আরও বেশি বিদেশি রাষ্ট্র ও বিশেষত পারমাণবিক অস্ত্রে বলীয়ান বৃহৎ শক্তিগুলোর সরাসরি জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিসহ এ যুদ্ধ কোথায় কতদূর বিস্তৃত হবে, সে আশঙ্কাও তৈরি হলো। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ভাসমান দুটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ার থেকে সিরিয়ার সারিয়াত বিমান ঘাঁটিতে ৪৯টি টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের টেলিভিশন-সংবাদচিত্রে আমাদের ১৯৯০-৯১ উপসাগরীয় যুদ্ধের কথা স্মরণে আসবে। ওই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নতুন কৌশলগত অস্ত্র পরীক্ষা করে। তারপর ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে সাদ্দামকে উৎখাত করার পর এখনও বীভৎস মৃত্যুর মিছিল চলছেই। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ সাদ্দামের হাতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার মিথ্যা অজুহাতে ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মহান লক্ষ্য দেখিয়ে আক্রমণটা চালিয়েছিলেন। শুক্রবার সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেছেন, ইদলিব প্রদেশের খান শেইখুম শহরে আসাদ বাহিনী বিষাক্ত সারিন গ্যাস ব্যবহার করায় শিশুসহ ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিরীয় সরকার ও রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কোন পক্ষ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে, তার কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি। আর নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ট্রাম্প হামলার আদেশ দিয়ে দিলেন। সিরিয়ায় ২০০১ সালে গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভকে সমর্থন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা প্রেসিডেন্ট আসাদকে সরে যেতে বলে। শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। ট্রাম্প সরাসরি হামলার আদেশ তখনই দিলেন, যখন সিরিয়া ও ইরাকে জঙ্গি ইসলামিক স্টেট হেরে যাচ্ছে ও আসাদ জিতে যাচ্ছেন। আদেশটি তখনই দিলেন যখন নিজ দেশে তিনি অভিবাসনবিরোধী নীতি, রুশপ্রীতির অভিযোগ ও তার প্রশাসনিক টিম নিয়ে প্রবল সমালোচনার চাপে ও বিব্রত। ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক মিডিয়া এখন আসাদকে ‘শাস্তি দেওয়া’ যুক্তিযুক্ত প্রমাণ করার তথ্যগুলোর ওপর জোর দিচ্ছে। ডেমোক্র্যাট দল প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপকে শর্তযুক্ত সমর্থন দিয়েছে। ট্রাম্প হয়তো সাময়িক স্বস্তি পাচ্ছেন। সারাবিশ্ব খুবই অস্বস্তিতে। শান্তির জন্য আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।