চুয়াডাঙ্গায় পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ডিপিডি’র বিরুদ্ধে মৃত্যুদাবী চেক জালিয়াতির অভিযোগ : গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের পাঁচ বছর পর ফেরত দিলেন আজাদ আলী

- আপডেট সময় : ০৩:১৬:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ এপ্রিল ২০১৭ ৩০৮ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ফেরত দিলেন পুপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ডেপুটি প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (ডিপিডি) আজাদ আলী। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের গ্রাহক নজরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের হাতে বীমার অংক ৫০ হাজার টাকা তুলে দেয়া হয়। পরে তিনি জানতে পারেন গ্রাহকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে বীমা অংকের দ্বিগুন টাকা দেয়া হয়। এ বিষয়ে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের (জনপ্রিয় বীমা) প্রধান কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন সাবিনা ইয়াসমিন। পরে ডেপুটি প্রজেক্ট ডাইরেক্টর আজাদ আলী বাধ্য হয়ে গত বৃহস্পতিবার দামুড়হুদায় গিয়ে বাকী ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা ফেরত দেন।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে দামুড়হুদার জয়রামপুর গ্রামের বারুইপাড়ার মৃত নজরুল ইসলাম পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের (জনপ্রিয় বীমা) বর্তমান ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর আজাদ আলীর মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকার একটি একক বীমা করেন। ২০১১ সালে তিনি হাউলি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ২নং ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচিত হন। ওইদিনই ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় নজরুল ইসলাম নিহত হন। ২০১২ সালে বীমা কর্তৃপক্ষ ৫০ হাজার টাকার একটি মৃত্যুদাবী চেক দিয়েছে বলে নজরুল ইসলামের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে জানান আজাদ আলী। ওই ৫০ হাজার টাকা সাবিনাকে না দিয়ে তার মেয়ের নামে একটি বীমা করে দেন আজাদ। এদিকে, এ ঘটনার পর সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেন সাবিনা ইয়াসমিন। সেখান থেকেই জানতে পারেন মৃত্যদাবী চেক প্রদানের বিষয়ে। বীমা নিয়ম অনুযায়ী কোন গ্রাহকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে, তার পরিবারের মাঝে বীমা অংকের দ্বিগুন টাকা ফেরত দেয়া হয়। তখনই আজাদ আলীর জালিয়াতির মাধ্যমে ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি বুঝতে পারেন সাবিনা। পরে তিনি বাকী টাকার বিষয়ে জানতে গেলে আজাদ আলী জানায়, অনেক কষ্ট করে বীমা অংকের ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আসা হয়েছে। এ নিয়ে বেশি বাজাবাজি করলে যে টাকা পেয়েছেন, তাও ফেরত দিতে হবে। সুতরাং চুপ থাকুন। অপরদিকে, গ্রাহক নজরুল ইসলামের মৃত্যুর পর ২০১২ সালে চুয়াডাঙ্গা সার্ভিসিং সেল ১ এর উপ সহকারি প্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) আজাদ আলীর কাছে সাবিনা ইয়াসমিনের নামে ১ লাখ ৩ হাজার ৩০০ টাকার একটি মৃত্যুদাবী চেক পাঠায় বীমা কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাত করেন আজাদ আলী। বাকী বীমা অংকের ৫০ হাজার টাকা সাবিনাকে ফেরত না দিয়ে তার মেয়ের নামে একটি বীমা করে দেন আজাদ আলী। পরে এ বিষয়ে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মৃত্যুদাবীর ৫৩ হাজার ৩শ টাকা আত্মসাতের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন সাবিনা ইয়াসমিন। এরপরই টনক নড়ে কর্মকর্তাদের। অবশেষে আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন আজাদ। শুধু তাই নয় তিনি জেলা সদরের ঠাকুরপুর গ্রামের দাউদের ছেলে শাহনুর ও শাহানুরের স্ত্রী মুক্তা বীমা চালাতে চালাতে বন্ধ করে দিলে মেয়াদপূর্ণ হলেও সেই টাকা আজ দেবো কাল দেবো বলে ফেরৎ দিতে চেয়েও দিচ্ছে না। পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিনিয়র ম্যানেজার জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গ্রাহকের প্রাপ্য বীমা অংকের দ্বিগুন টাকা সাবিনা ইয়াসমিনের নামে চেক ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএম ইউসুফ আলীর সাথে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় সাধারণ গ্রাহকরা আশঙ্কায় রয়েছেন তাদের বীমা নিয়ে।তারা বলছেন, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহকের টাকা নিয়ে গড়িমশি না করলেও আজাদের মতো এমন কর্মকর্তারাই কোম্পানীর সুনাম ক্ষুন্ন করছেন। কোম্পানীর ইস্যুকৃত সাবিনা ইয়াসমিনের নামে আসা চেকের টাকা কিভাবে আজাদ ক্যাশ করলেন সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি আজাদকে বহিষ্কার করারও দাবি তুলেছেন সাধারণ গ্রাহকরা।