ইপেপার । আজ রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে চিৎলা ভিত্তি পাটবীজ খামার অব্যবস্থাপনা

নিম্নমানের আগাছানাশক প্রয়োগে নষ্ট হচ্ছে দেড়শ বিঘা ধান খেত

প্রতিবেদক, গাংনী:
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৬:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০২৪
  • / ৪০ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুর গাংনী উপজেলার চিৎলা ভিত্তি পাটবীজ খামারের অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হতে বসেছে প্রায় দেড়শ বিঘা জমির ধান খেত। অভিযোগ উঠেছে অতিমাত্রায় নিম্নমানের আগাছানাশক প্রয়োগের ফলে দেড়শ বিঘা জমির ধান পুড়ে গেছে। এতে সরকারের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তবে কেন ধান খেতে আগাছানাশক প্রয়োগ করা হলো এর কোনো জবাব দিতে পারেননি খামারের যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম। তবে ওই জমিতে কাজ করা কয়েকজন শ্রমিক বলেন, জেডি স্যারের ব্যক্তিগত লোক আমাদের কাছে আগাছানাশক স্প্রে করা জন্য সরবরাহ করেন। তার নির্দেশনা মতেই আমরা শুধু ফসলে স্প্রে করেছি।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রায় একমাস আগে চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামারে ১২০ একর জমিতে ব্রী ২১ ও ব্রী ৭২ উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের চারা রোপণ করা হয়। ধান রোপণের পর জমিতে আগাছা বৃদ্ধি পেলে খামারের যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলামের একান্ত কাছের লোক নাজিম উদ্দিন ধানের জমিতে কীটনাশক ও আগাছানাশক প্রয়োগ করার জন্য কর্মরত শ্রমিকদের নির্দেশ দেন। নাজিম উদ্দিন নিজেই ওই কীটনাশক বালতিতে ভরে শ্রমিকদের কাছে সরবরাহ করেন। চলতি মাসের ২ তারিখে শ্রমিকরা ধানখেতে কীটনাশক প্রয়োগ করেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই ধানের চারা গাছগুলো মরতে শুরু করে।

তবে কী ধরনের কীটনাশক ও আগাছানাশক ব্যবহার করা হয়েছে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি কর্মরত শ্রমিকদের। নিম্নমানের কীটনাশক ও সার, যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত শ্রমিক নাজিম উদ্দিনের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার একটি দোকান থেকে সংগ্রহ করেন। নিম্নমানের কোম্পানির সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় এই খামারে দিন দিন ফলন কমছে।

খামারে কর্মরত শ্রমিক সর্দার আব্দুল মান্নান বলেন, ধানের জমিতে অনেক আগাছা জন্মায়। তাই নাজিম উদ্দিন তাদেরকে কীটনাশক প্রয়োগ করতে বলেন। সেই কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে জমির ধান গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। জমিতে কতটুকু কীটনাশক দিতে হবে নাজিম উদ্দীন আমাদের বলে দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে। মাস্টার রোলের শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের যুগ্ম পরিচালক স্যারের লোক নাজিম উদ্দীন কীটনাশক পানির সাথে মিশিয়ে দেন। আমরা তার নির্দেশমত জমিতে স্প্রে করি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিকরা জানান, জমির ধান মরে যাওয়া শুরু হলে ওই কীটনাশকের বোতলের আলামত নষ্ট করার জন্য তড়িঘড়ি করে নাজিম উদ্দিন বোতলগুলো পুড়িয়ে ফেলেন। তাদের মতে, যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলামের একান্ত কাছের লোক নাজিম উদ্দিনের দেওয়া নিম্নমানের কীটনাশকের জন্য মাঠের পর মাঠের ধান পুড়ে গেছে। নাজিম উদ্দিনের অনুমতি ব্যতীত কোনো কাজ করতে পারেন না শ্রমিক ও খামারের উপসহকারী কর্মকর্তারা (ডিএডি)।

এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা ওই খামারে উপস্থিত হলে ফার্মের উপসহকারী কর্মকর্তারা ও নাজিম উদ্দিন ফার্ম ছেড়ে বেরিয়ে যান। চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামারের যুগ্ম পরিচালক মোরশেদুল ইসলামও সেসময় কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। ওই ধান খেতে প্রয়োগ করা কীটনাশক সংগ্রহ করে শ্রমিকেরা। কিটনাশকের বোতল গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেনের কাছে নিলে তিনি বলেন, এগুলো আগাছানাশক। এসব নিম্নমানের আগাছানাশক বা কীটনাশক জমিতে বেশি ব্যবহার করলে ধান গাছের গোড়ায় ধীরে ধীরে পচন ধরে ও খেত মরে যায়।

এ বিষয়ে চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামারের যুগ্ম পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘৩টি ব্লকের ধানগাছ পুড়ে গেছে বলে আমি জানতে পেরেছি। জমির আইলে এখনো যাওয়া হয়নি। উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি করা হবে। তারপর আমরা কারণ নির্ধারণ করতে পারব। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে ডিপার্টমেন্ট থেকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মেহেরপুরে চিৎলা ভিত্তি পাটবীজ খামার অব্যবস্থাপনা

নিম্নমানের আগাছানাশক প্রয়োগে নষ্ট হচ্ছে দেড়শ বিঘা ধান খেত

আপলোড টাইম : ০৮:২৬:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০২৪

মেহেরপুর গাংনী উপজেলার চিৎলা ভিত্তি পাটবীজ খামারের অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হতে বসেছে প্রায় দেড়শ বিঘা জমির ধান খেত। অভিযোগ উঠেছে অতিমাত্রায় নিম্নমানের আগাছানাশক প্রয়োগের ফলে দেড়শ বিঘা জমির ধান পুড়ে গেছে। এতে সরকারের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তবে কেন ধান খেতে আগাছানাশক প্রয়োগ করা হলো এর কোনো জবাব দিতে পারেননি খামারের যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম। তবে ওই জমিতে কাজ করা কয়েকজন শ্রমিক বলেন, জেডি স্যারের ব্যক্তিগত লোক আমাদের কাছে আগাছানাশক স্প্রে করা জন্য সরবরাহ করেন। তার নির্দেশনা মতেই আমরা শুধু ফসলে স্প্রে করেছি।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রায় একমাস আগে চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামারে ১২০ একর জমিতে ব্রী ২১ ও ব্রী ৭২ উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের চারা রোপণ করা হয়। ধান রোপণের পর জমিতে আগাছা বৃদ্ধি পেলে খামারের যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলামের একান্ত কাছের লোক নাজিম উদ্দিন ধানের জমিতে কীটনাশক ও আগাছানাশক প্রয়োগ করার জন্য কর্মরত শ্রমিকদের নির্দেশ দেন। নাজিম উদ্দিন নিজেই ওই কীটনাশক বালতিতে ভরে শ্রমিকদের কাছে সরবরাহ করেন। চলতি মাসের ২ তারিখে শ্রমিকরা ধানখেতে কীটনাশক প্রয়োগ করেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই ধানের চারা গাছগুলো মরতে শুরু করে।

তবে কী ধরনের কীটনাশক ও আগাছানাশক ব্যবহার করা হয়েছে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি কর্মরত শ্রমিকদের। নিম্নমানের কীটনাশক ও সার, যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত শ্রমিক নাজিম উদ্দিনের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার একটি দোকান থেকে সংগ্রহ করেন। নিম্নমানের কোম্পানির সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় এই খামারে দিন দিন ফলন কমছে।

খামারে কর্মরত শ্রমিক সর্দার আব্দুল মান্নান বলেন, ধানের জমিতে অনেক আগাছা জন্মায়। তাই নাজিম উদ্দিন তাদেরকে কীটনাশক প্রয়োগ করতে বলেন। সেই কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে জমির ধান গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। জমিতে কতটুকু কীটনাশক দিতে হবে নাজিম উদ্দীন আমাদের বলে দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে। মাস্টার রোলের শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের যুগ্ম পরিচালক স্যারের লোক নাজিম উদ্দীন কীটনাশক পানির সাথে মিশিয়ে দেন। আমরা তার নির্দেশমত জমিতে স্প্রে করি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিকরা জানান, জমির ধান মরে যাওয়া শুরু হলে ওই কীটনাশকের বোতলের আলামত নষ্ট করার জন্য তড়িঘড়ি করে নাজিম উদ্দিন বোতলগুলো পুড়িয়ে ফেলেন। তাদের মতে, যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলামের একান্ত কাছের লোক নাজিম উদ্দিনের দেওয়া নিম্নমানের কীটনাশকের জন্য মাঠের পর মাঠের ধান পুড়ে গেছে। নাজিম উদ্দিনের অনুমতি ব্যতীত কোনো কাজ করতে পারেন না শ্রমিক ও খামারের উপসহকারী কর্মকর্তারা (ডিএডি)।

এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা ওই খামারে উপস্থিত হলে ফার্মের উপসহকারী কর্মকর্তারা ও নাজিম উদ্দিন ফার্ম ছেড়ে বেরিয়ে যান। চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামারের যুগ্ম পরিচালক মোরশেদুল ইসলামও সেসময় কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। ওই ধান খেতে প্রয়োগ করা কীটনাশক সংগ্রহ করে শ্রমিকেরা। কিটনাশকের বোতল গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেনের কাছে নিলে তিনি বলেন, এগুলো আগাছানাশক। এসব নিম্নমানের আগাছানাশক বা কীটনাশক জমিতে বেশি ব্যবহার করলে ধান গাছের গোড়ায় ধীরে ধীরে পচন ধরে ও খেত মরে যায়।

এ বিষয়ে চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামারের যুগ্ম পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘৩টি ব্লকের ধানগাছ পুড়ে গেছে বলে আমি জানতে পেরেছি। জমির আইলে এখনো যাওয়া হয়নি। উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি করা হবে। তারপর আমরা কারণ নির্ধারণ করতে পারব। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে ডিপার্টমেন্ট থেকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।