ইপেপার । আজ শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোটাবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল শিক্ষাঙ্গন

শাহবাগে শিক্ষার্থীদের অবস্থান, ট্রেন আটকে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৪১:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪
  • / ৬৪ বার পড়া হয়েছে

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। গতকাল বুধবার বেলা আড়াইটায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে একত্রিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এ আন্দোলনে অংশ নেন। এরপর মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মোড়, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগ আসেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল পৌনে ৪টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা সেখানে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের কোটা না মেধা, মেধা মেধা; কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক; আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই ইত্যাদি স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানীর শাহবাগ মোড়। শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে শাহবাগে সব যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল সোয়া ৫টায় শাহবাগ থেকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে আবারও সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল কোটাপ্রথা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা প্রায় এক ঘণ্টা ট্রেন আটকে রেললাইন অবরোধ করে রাখেন। কাফনের কাপড় পরে সড়ক অবরোধ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন মহাসড়কও অবরোধ করে রাখা হয়। এছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল-পদযাত্রা ও সমাবেশের কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় :
শাহবাগে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি উল্লেখ করেন। দাবিগুলো হলো—২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহালসাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্যপ্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। অবরোধস্থলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ঢাবির গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফারাবী রহমান শ্রাবণ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা কোনো বৈষম্য চায়নি। সরকারি চাকরিতে এ ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা কখনোই সবার অধিকার নিশ্চিত করে না। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের আহ্বান জানাব, আপনারা ন্যায্য দাবির পাশে দাঁড়ান। নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় :
চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে ট্রেন অবরোধ করে আন্দোলন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সর্বস্তরের ছাত্রসমাজ। গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে সমবেত হন বাকৃবির প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সেখান থেকে আব্দুল জব্বার মোড় পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি আব্দুল জব্বার মোড়ে পৌঁছলে ঐ সময় ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কমিউটার ট্রেন আটকে রেখে রেললাইন অবরোধ করে মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় এক ঘণ্টা (দুপুর ১টা ২০ মিনিট থেকে ২টা ২০ মিনিট) যাবৎ রেললাইন অবরোধ করে রাখার পর আবার ট্রেন চলাচল সচল হয়। আন্দোলন চলাকালীন মেডিসিন বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মাশশারাত মালিহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ, চাকরিতে নিয়োগ এবং অন্য সব প্রতিযোগিতার জায়গায় আমরা মেধার শতভাগ মূল্যায়ন চাই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় :
কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় ২০১৮ সালে সরকার ঘোষিত পরিপত্রের পুনর্বহালসহ চার দফা দাবি উত্থাপন করেন তারা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট পর্যন্ত শোডাউন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে এসে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলা অবরোধে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে কোনো সহিংসতায় জড়াননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় :
কাফনের কাপড় পরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে সাড়ে তিন ঘণ্টা ঢাকা-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে। ববির গেট-সংলগ্ন মহাসড়কে গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া শত শত যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন আটকে পরে। নগরীর রূপাতলী বাসটার্মিনালের কাঁঠালতলা এলাকা থেকে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার জিরো পয়েন্ট তীব্র যানজট দেখা দেয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকায় যাত্রীরা ব্যাগ-বস্তা মাথায় নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ কয়েক কিলোমিটার মহাসড়ক পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন। এতে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন প্রবীণসহ নারী ও শিশুরা। পরে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছাড়লে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় :
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পূর্বের পরিপত্র বহাল রেখে কমিশন গঠন করে কোটা সংস্কারের দাবিতে পদযাত্রা ও সমাবেশ করেছে। গতকাল বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে মিছিলটি বের হয়ে ঢাকা-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক-সংলগ্ন মডার্ন মোড় প্রদক্ষিণ করে ২ নম্বর গেটে গিয়ে সমাবেশ করে। শিক্ষার্থীরা বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমরা চাই না কোটা সম্পূর্ণ বাতিল হোক।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় :
গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে কোটাবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার গোল চত্বরে এসে সমবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদ শিকদার বলেন, আমরা কোটায় ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল রাখতে চাই। হাইকোর্টের এ সিদ্ধান্তকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে প্রহসন মনে করি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাব।
হাবিপ্রবিতে মাঠে ছাত্রলীগ :
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে দেশ ও ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা ঠেকাতে মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রলীগ। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আলমগীর হোসাইন আকাশ বলেন, কোটাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো অপশক্তি শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এম মাসুদ রানা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দোসরদের এ অরাজকতা রুখে দিতে হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ সব সময় মাঠে ছিল এবং থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ায় আর কোনো বাধা রইল না। এ রায়ের বিরুদ্ধে পর দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কোটাবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল শিক্ষাঙ্গন

শাহবাগে শিক্ষার্থীদের অবস্থান, ট্রেন আটকে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ

আপলোড টাইম : ০৭:৪১:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। গতকাল বুধবার বেলা আড়াইটায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে একত্রিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এ আন্দোলনে অংশ নেন। এরপর মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মোড়, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগ আসেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল পৌনে ৪টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা সেখানে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের কোটা না মেধা, মেধা মেধা; কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক; আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই ইত্যাদি স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানীর শাহবাগ মোড়। শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে শাহবাগে সব যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল সোয়া ৫টায় শাহবাগ থেকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে আবারও সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল কোটাপ্রথা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা প্রায় এক ঘণ্টা ট্রেন আটকে রেললাইন অবরোধ করে রাখেন। কাফনের কাপড় পরে সড়ক অবরোধ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন মহাসড়কও অবরোধ করে রাখা হয়। এছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল-পদযাত্রা ও সমাবেশের কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় :
শাহবাগে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি উল্লেখ করেন। দাবিগুলো হলো—২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহালসাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্যপ্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। অবরোধস্থলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ঢাবির গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফারাবী রহমান শ্রাবণ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা কোনো বৈষম্য চায়নি। সরকারি চাকরিতে এ ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা কখনোই সবার অধিকার নিশ্চিত করে না। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের আহ্বান জানাব, আপনারা ন্যায্য দাবির পাশে দাঁড়ান। নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় :
চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে ট্রেন অবরোধ করে আন্দোলন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সর্বস্তরের ছাত্রসমাজ। গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে সমবেত হন বাকৃবির প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সেখান থেকে আব্দুল জব্বার মোড় পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি আব্দুল জব্বার মোড়ে পৌঁছলে ঐ সময় ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কমিউটার ট্রেন আটকে রেখে রেললাইন অবরোধ করে মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় এক ঘণ্টা (দুপুর ১টা ২০ মিনিট থেকে ২টা ২০ মিনিট) যাবৎ রেললাইন অবরোধ করে রাখার পর আবার ট্রেন চলাচল সচল হয়। আন্দোলন চলাকালীন মেডিসিন বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মাশশারাত মালিহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ, চাকরিতে নিয়োগ এবং অন্য সব প্রতিযোগিতার জায়গায় আমরা মেধার শতভাগ মূল্যায়ন চাই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় :
কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় ২০১৮ সালে সরকার ঘোষিত পরিপত্রের পুনর্বহালসহ চার দফা দাবি উত্থাপন করেন তারা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট পর্যন্ত শোডাউন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে এসে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলা অবরোধে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে কোনো সহিংসতায় জড়াননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় :
কাফনের কাপড় পরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে সাড়ে তিন ঘণ্টা ঢাকা-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে। ববির গেট-সংলগ্ন মহাসড়কে গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া শত শত যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন আটকে পরে। নগরীর রূপাতলী বাসটার্মিনালের কাঁঠালতলা এলাকা থেকে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার জিরো পয়েন্ট তীব্র যানজট দেখা দেয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকায় যাত্রীরা ব্যাগ-বস্তা মাথায় নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ কয়েক কিলোমিটার মহাসড়ক পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন। এতে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন প্রবীণসহ নারী ও শিশুরা। পরে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছাড়লে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় :
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পূর্বের পরিপত্র বহাল রেখে কমিশন গঠন করে কোটা সংস্কারের দাবিতে পদযাত্রা ও সমাবেশ করেছে। গতকাল বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে মিছিলটি বের হয়ে ঢাকা-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক-সংলগ্ন মডার্ন মোড় প্রদক্ষিণ করে ২ নম্বর গেটে গিয়ে সমাবেশ করে। শিক্ষার্থীরা বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমরা চাই না কোটা সম্পূর্ণ বাতিল হোক।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় :
গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে কোটাবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার গোল চত্বরে এসে সমবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদ শিকদার বলেন, আমরা কোটায় ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল রাখতে চাই। হাইকোর্টের এ সিদ্ধান্তকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে প্রহসন মনে করি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাব।
হাবিপ্রবিতে মাঠে ছাত্রলীগ :
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে দেশ ও ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা ঠেকাতে মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রলীগ। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আলমগীর হোসাইন আকাশ বলেন, কোটাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো অপশক্তি শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এম মাসুদ রানা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দোসরদের এ অরাজকতা রুখে দিতে হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ সব সময় মাঠে ছিল এবং থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ায় আর কোনো বাধা রইল না। এ রায়ের বিরুদ্ধে পর দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।