ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

প্রয়োজন নিরপেক্ষ সরকার বিশিষ্টজনদের অভিমত শক্তিশালী ইসি সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত নয়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:২৪:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৭
  • / ৩৫৪ বার পড়া হয়েছে

eeerdfgdfgসমীকরণ ডেস্ক: স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হলেও নির্বাচনকালীন শক্তিশালী সহায়ক সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ ইসি প্রয়োজন, কিন্তু সেটাই মুখ্য নয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন নির্বাচনকালীন সরকারের সদিচ্ছা। এ ধরনের সরকার নিরপেক্ষ হলেই নির্বাচন কমিশনে কারা এলো, তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ শক্তিশালী সরকার ছাড়া যদি বিএনপির বড় কোনো নেতাকেও প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলেও তার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। কারণ কাগজে-কলমে ইসি স্বাধীন, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি সরকারের ওপর নির্ভর করতে হয়। নির্বাচন পরিচালনার মতো যথেষ্ট জনবল ও আর্থিক সুবিধা ইসির নেই। নেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো নির্বাচন করার পরিবেশও। তাই ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এতটা হইচই না করে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দিকে বেশি নজর দেয়া উচিত।  তারা বলেন, বর্তমান সংবিধান পরিবর্তন না করেও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কিন্তু এজন্য সর্বাগ্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন। দেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সত্যিকারভাবে চাইলে সবকিছুই সম্ভব। এজন্য বর্তমান সরকারকেই দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ সরকার না চাইলে কোনো কিছুই সম্ভব নয়।
তারা বলেন, সরকার চাইলে বিএনপিকেও নির্বাচনকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে পারে। কেননা মন্ত্রিসভায় একদশমাংশ অনির্বাচিতদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া যায়। সেক্ষেত্রে ১০ সদস্যের নির্বাচনকালীন সরকার হলে একজন বা ২০ সদস্যের হলে দুইজনকে টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রিসভায় আনা সম্ভব। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী তার ইচ্ছেমতো মন্ত্রী পদমর্যাদায় উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বিএনপি থেকে একাধিক উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া যাবে। উদাহরণ হিসেবে যদি ১৫ সদস্যের নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হলে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বাকি ১৪ জনের মধ্যে বিএনপি থেকে ৪-৫ জন এবং বাকিদের আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রতিনিধি নেয়া যেতে পারে। এছাড়া সরকার চাইলে এক ঘণ্টার মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে সবাইকে নিয়ে নির্বাচনকালীন যৌথ সরকার গঠন করাও সম্ভব।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন অত্যন্ত হাস্যকর। সংসদীয় নিয়মে পৃথিবীর কোথাও তা হয় না। সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করতে হয়। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর কেউ নির্বাচিত থাকেন না। বর্তমানে আমাদের যে বিধান রয়েছে, তা ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক। যুক্তরাজ্যে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর রানী সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকার পরিচালনার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভোট চুরির রাজনীতি। সেই রাজনীতিতে দলীয় সরকারকে ক্ষমতায় রেখে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অর্থহীন। সেখানে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কিংবা যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেবে তারা যদি নিরপেক্ষ আচরণ না করে তবে ইসি যতই শক্তিশালী হউক, সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বিএনপি বা অন্য কোনো দলের প্রধান বা কোনো পালোয়ানকে বসালেও সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি দিতে পারবে না। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যেমন নিরপেক্ষ ইসি ছাড়া হয় না, তেমনি সবার সহযোগিতা ছাড়া ইসির পক্ষে তা করাও সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বর্তমান বিধান অনুযায়ী সব সংসদ সদস্য বহাল থাকবেন। তাদের প্রায় সবাই সরকারদলীয়। একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রায় ছয় লাখ জনবল লাগে। এরাও সবাই সরকারি ও আধা সরকারি। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক থাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য- যারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ওই সময় যে সরকার থাকে সেই সরকারের ভূমিকাই সবচেয়ে বড়।
জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ না হলে সবই প-শ্রম। স্বাধীন ও শক্তিশালী ইসি সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট তখনই হবে যখন নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ করবে। নির্বাচনকালীন সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ইসিরও প্রয়োজন পড়ে না। নির্বাচন কমিশন ছাড়াই তো যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন হয়েছিল। তিনি বলেন, সংবিধান পরিবর্তন না করেও সব দলকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব। টেকনোক্রেট কোটায় বিএনপির প্রতিনিধিদের নিয়োগ দেয়া যায়। এছাড়া দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে আওয়ামী লীগের কয়েক সংসদ সদস্যকে পদত্যাগ করিয়ে ওইসব আসনে বিএনপির প্রতিনিধিদের সংসদ সদস্য করে আনা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদেও নিয়োগ দিতে পারেন। তবে ওই সময়কার উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতো চলবেন- এমনটা হলে চলবে না।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন কমিশন কেমন হবে সে আলোচনা অবান্তর। দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা বা সদিচ্ছা জাগ্রত না হলে যত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ইসি হোক তা কাজে লাগবে না। সব দলকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা আসছে, কারণ তাদের মধ্যে সদিচ্ছা বা আস্থার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধন না করেও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। টেকনোক্র্যাট কোটা বা পদত্যাগ করিয়ে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য বানিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব। এটা আকাশকুসুম কল্পনা হলেও তা আশা করা যায়। কিন্তু বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা খুব কম।

শাহদীন মালিক আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন ভালো বা খারাপ করে সেটা একটা ব্যাপার, তবে তা গৌণ। মুখ্য ব্যাপার হল রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক চর্চা ও তাদের সদিচ্ছা। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও আমাদের দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই। সেজন্য স্বাধীনতার এত বছর পরও কিভাবে একটা সুষ্ঠু র্নির্বাচন হতে পারে তা আমরা ঠিক করতে পারিনি। নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে বা কিভাবে করব, শুধু এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। অথচ রাজধানীর যানজটসহ জনদুর্ভোগ নিয়ে এ মুহূর্তে আমাদের আলোচনার প্রয়োজন। সেদিকে কারও নজর নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) যতই শক্তিশালী হোক না কেন নির্বাচনের সময় দলীয় সরকার থাকলে কমিশন অসহায় হয়ে থাকবে। কারণ অভিজ্ঞতা বলে, কোনো নির্বাচন কমিশন দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বলেছে রাষ্ট্রপতি সবার সঙ্গে আলোচনা করে যে কমিশন গঠন করবেন তা তারা মেনে নেবে। আওয়ামী লীগের এ অবস্থানকে স্বাগত জানাই। বিএনপি চেয়ারপারসন যে প্রস্তাব দিয়েছেন এবং অন্যরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন বা দেবেন, সব বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি কমিশন গঠন করবেন। এটি হবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রথম পদক্ষেপ। দ্বিতীয় ও প্রধান পদক্ষেপ হল, কী ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা ঠিক করা। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বাংলাদেশে সে ঐতিহ্য এখনও গড়ে ওঠেনি। তাই নির্বাচনকালীন সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। কিভাবে সেই সরকার গঠন করা যায় সেজন্যই প্রয়োজন সংলাপ। বর্তমান সংবিধানের আলোকে, না সংবিধান সংশোধন করে হবে তা ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা সম্ভব।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

প্রয়োজন নিরপেক্ষ সরকার বিশিষ্টজনদের অভিমত শক্তিশালী ইসি সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত নয়

আপলোড টাইম : ১২:২৪:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৭

eeerdfgdfgসমীকরণ ডেস্ক: স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হলেও নির্বাচনকালীন শক্তিশালী সহায়ক সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ ইসি প্রয়োজন, কিন্তু সেটাই মুখ্য নয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন নির্বাচনকালীন সরকারের সদিচ্ছা। এ ধরনের সরকার নিরপেক্ষ হলেই নির্বাচন কমিশনে কারা এলো, তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ শক্তিশালী সরকার ছাড়া যদি বিএনপির বড় কোনো নেতাকেও প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলেও তার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। কারণ কাগজে-কলমে ইসি স্বাধীন, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি সরকারের ওপর নির্ভর করতে হয়। নির্বাচন পরিচালনার মতো যথেষ্ট জনবল ও আর্থিক সুবিধা ইসির নেই। নেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো নির্বাচন করার পরিবেশও। তাই ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এতটা হইচই না করে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দিকে বেশি নজর দেয়া উচিত।  তারা বলেন, বর্তমান সংবিধান পরিবর্তন না করেও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কিন্তু এজন্য সর্বাগ্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন। দেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সত্যিকারভাবে চাইলে সবকিছুই সম্ভব। এজন্য বর্তমান সরকারকেই দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ সরকার না চাইলে কোনো কিছুই সম্ভব নয়।
তারা বলেন, সরকার চাইলে বিএনপিকেও নির্বাচনকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে পারে। কেননা মন্ত্রিসভায় একদশমাংশ অনির্বাচিতদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া যায়। সেক্ষেত্রে ১০ সদস্যের নির্বাচনকালীন সরকার হলে একজন বা ২০ সদস্যের হলে দুইজনকে টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রিসভায় আনা সম্ভব। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী তার ইচ্ছেমতো মন্ত্রী পদমর্যাদায় উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বিএনপি থেকে একাধিক উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া যাবে। উদাহরণ হিসেবে যদি ১৫ সদস্যের নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হলে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বাকি ১৪ জনের মধ্যে বিএনপি থেকে ৪-৫ জন এবং বাকিদের আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রতিনিধি নেয়া যেতে পারে। এছাড়া সরকার চাইলে এক ঘণ্টার মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে সবাইকে নিয়ে নির্বাচনকালীন যৌথ সরকার গঠন করাও সম্ভব।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন অত্যন্ত হাস্যকর। সংসদীয় নিয়মে পৃথিবীর কোথাও তা হয় না। সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করতে হয়। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর কেউ নির্বাচিত থাকেন না। বর্তমানে আমাদের যে বিধান রয়েছে, তা ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক। যুক্তরাজ্যে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর রানী সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকার পরিচালনার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভোট চুরির রাজনীতি। সেই রাজনীতিতে দলীয় সরকারকে ক্ষমতায় রেখে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অর্থহীন। সেখানে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কিংবা যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেবে তারা যদি নিরপেক্ষ আচরণ না করে তবে ইসি যতই শক্তিশালী হউক, সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বিএনপি বা অন্য কোনো দলের প্রধান বা কোনো পালোয়ানকে বসালেও সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি দিতে পারবে না। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যেমন নিরপেক্ষ ইসি ছাড়া হয় না, তেমনি সবার সহযোগিতা ছাড়া ইসির পক্ষে তা করাও সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বর্তমান বিধান অনুযায়ী সব সংসদ সদস্য বহাল থাকবেন। তাদের প্রায় সবাই সরকারদলীয়। একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রায় ছয় লাখ জনবল লাগে। এরাও সবাই সরকারি ও আধা সরকারি। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক থাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য- যারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ওই সময় যে সরকার থাকে সেই সরকারের ভূমিকাই সবচেয়ে বড়।
জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ না হলে সবই প-শ্রম। স্বাধীন ও শক্তিশালী ইসি সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট তখনই হবে যখন নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ করবে। নির্বাচনকালীন সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ইসিরও প্রয়োজন পড়ে না। নির্বাচন কমিশন ছাড়াই তো যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন হয়েছিল। তিনি বলেন, সংবিধান পরিবর্তন না করেও সব দলকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব। টেকনোক্রেট কোটায় বিএনপির প্রতিনিধিদের নিয়োগ দেয়া যায়। এছাড়া দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে আওয়ামী লীগের কয়েক সংসদ সদস্যকে পদত্যাগ করিয়ে ওইসব আসনে বিএনপির প্রতিনিধিদের সংসদ সদস্য করে আনা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদেও নিয়োগ দিতে পারেন। তবে ওই সময়কার উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতো চলবেন- এমনটা হলে চলবে না।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন কমিশন কেমন হবে সে আলোচনা অবান্তর। দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা বা সদিচ্ছা জাগ্রত না হলে যত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ইসি হোক তা কাজে লাগবে না। সব দলকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা আসছে, কারণ তাদের মধ্যে সদিচ্ছা বা আস্থার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধন না করেও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। টেকনোক্র্যাট কোটা বা পদত্যাগ করিয়ে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য বানিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব। এটা আকাশকুসুম কল্পনা হলেও তা আশা করা যায়। কিন্তু বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা খুব কম।

শাহদীন মালিক আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন ভালো বা খারাপ করে সেটা একটা ব্যাপার, তবে তা গৌণ। মুখ্য ব্যাপার হল রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক চর্চা ও তাদের সদিচ্ছা। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও আমাদের দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই। সেজন্য স্বাধীনতার এত বছর পরও কিভাবে একটা সুষ্ঠু র্নির্বাচন হতে পারে তা আমরা ঠিক করতে পারিনি। নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে বা কিভাবে করব, শুধু এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। অথচ রাজধানীর যানজটসহ জনদুর্ভোগ নিয়ে এ মুহূর্তে আমাদের আলোচনার প্রয়োজন। সেদিকে কারও নজর নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) যতই শক্তিশালী হোক না কেন নির্বাচনের সময় দলীয় সরকার থাকলে কমিশন অসহায় হয়ে থাকবে। কারণ অভিজ্ঞতা বলে, কোনো নির্বাচন কমিশন দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বলেছে রাষ্ট্রপতি সবার সঙ্গে আলোচনা করে যে কমিশন গঠন করবেন তা তারা মেনে নেবে। আওয়ামী লীগের এ অবস্থানকে স্বাগত জানাই। বিএনপি চেয়ারপারসন যে প্রস্তাব দিয়েছেন এবং অন্যরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন বা দেবেন, সব বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি কমিশন গঠন করবেন। এটি হবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রথম পদক্ষেপ। দ্বিতীয় ও প্রধান পদক্ষেপ হল, কী ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা ঠিক করা। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বাংলাদেশে সে ঐতিহ্য এখনও গড়ে ওঠেনি। তাই নির্বাচনকালীন সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। কিভাবে সেই সরকার গঠন করা যায় সেজন্যই প্রয়োজন সংলাপ। বর্তমান সংবিধানের আলোকে, না সংবিধান সংশোধন করে হবে তা ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা সম্ভব।