চুয়াডাঙ্গার জাহাপুরে একুশে পদকপ্রাপ্ত মরমী কবি খোদা বকশ শাহ’র দুই দিনব্যাপী ২৭তম স্মরনোৎসব আজ থেকে শুরু
- আপলোড টাইম : ০৭:৪৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৭
- / ৪৪৪ বার পড়া হয়েছে
এমএ মামুন/হুসাইন মালিক: দেশের মরমী কবী বাউল সাধক, অমর একুশের পদকপ্রাপ্ত ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী’র লালন সঙ্গীতের শিক্ষক এবং বাংলা একাডেমী’র ফেলো প্রাপ্ত খ্যাতিমান মরহুম খোদা বকশ শাহ’র দু’দিনব্যাপি ২৭তম স্মরন উৎসব শুরু হচ্ছে আজ থেকে। এই মরমী কবির স্মরণ উৎসবকে ঘিরে ভক্ত অনুসারীরা তার চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার জাঁহাপুর গ্রামের মাজার প্রাঙ্গণে ইতোমধ্যে জমায়েত হয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আজ বেলা ১০টায় কবির মাজারে ফুল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শ্্রদ্ধাঞ্জলী ও সন্ধ্যা সাতটায় আলোচনা সভা ও সঙ্গীত পরিবেশন। আগামীকাল রবিবার বেলা ১০টায় মরমী বাউল গান ও বিকেল ৪টায় সাধুদের পূর্ণ সেবাদান। আর এই সাধুসেবার মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরনোৎসব শেষ হবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা একমাত্র একুশে পদক প্রাপ্ত লালন সাধক ব্যক্তিত্ব মরমী কবি খোদা বকশ শাহ বাংলা ১৩৩৪ সালের ৩০ চৈত্র (১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে) আলমডাঙ্গার জাহাপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৯ সালের শেষ দিকে তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে ১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারী বাংলা ১পহেলা মাঘ তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী রাহেলা খাতুন, পুত্র আব্দুল লতিফ শাহ ও কন্যা মালঞ্চকে রেখে যান। মৃত্যুর পরে তার প্রতিষ্ঠিত নিজস্ব আখড়া সমাহিত করা হয়। ১৯৯১ সালে খোদাবকশ শাহকে বাংলা একাডেমী মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে সরকার। উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই কবির ওফাত দিবস উপলক্ষে তার নিজ বাড়ি আলমডাঙ্গা উপজেলার জাহাপুর গ্রামে দু’দিনব্যাপি স্মরণোৎসবের আয়োজনে দেশের বাইরে থেকেও তার ভক্তরা সমাবেত হন। খোদাবকশ শাহ’র ঘোলদাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি অভিনয় ও সঙ্গীতের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। একটি যাত্রাদলে যোগ দেন। অসাধারণ সুরেলা কণ্ঠের জন্য যাত্রামঞ্চে তিনি বিবেকের ভূমিকায় বিবেক সঙ্গীত পরিবেশন করতেন । ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত যাত্রাদলে অতিবাহিত করেন। ১৭ বছর বয়সে খোদা বকশ শাহ ভাবসঙ্গীত শিখতে হরিণাকুন্ডর শুকচাঁদ শাহ’র শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পরে তিনি যান অমূল্য শাহ’র আখড়ায়। সেখানে অতি অল্প সময়ে ভাবসঙ্গীতে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি ফকিরি পোশাক গ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালের ৯জুন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে লালন সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমী খোদাবকশ শাহকে বাংলা একাডেমী ফেলো পদক পান। ১৯৮৬ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ১৯৮৭ সালের ৩১ মার্চ তিনি শিল্পকলা একাডেমীর চাকুরী ছেড়ে নিজের প্রতিষ্ঠিত আখাড়া আলমডাঙ্গার জাহাপুরে ফিরে আসেন। খ্যাতিমান এই মরমী কবি খোদা বকশ শাহ’র একমাত্র উত্তরসুরী আব্দুল লতিফ শাহ কবি হ্নদয়ে অব্যক্ত সাধনার তীরধরে তার অপ্রকাশিত গান নিয়ে ভক্তদের মাঝে চর্চাবৃত্তি অব্যাহত রেখেছেন। কবিপুত্র আব্দুল লতিফ শাহ ভারতের মনের মানুষ চলচ্চিত্রে লালনের আদি সুরের গান গেয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। খোদা বকশ সাঁই স্মৃতি সংসদ ও তার অগণিত ভক্ত অনুরাগীরা প্রতিবছরই তার জন্ম ও মৃত্যুদিন পালন করে আসছে। মরমী এই কবি জীবদ্দশায় ৯৫০টি গান রচনা করেন। তার মাজারটি এখনো অযতœ অবহেলায় পড়ে আছে। জাহাপুরে কবির সমাধিস্থলকে ঘিরে পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং কবির ওফাদ দিবসটি সরকারিভাবে পালনের দাবি তুলেছেন তার ভক্ত-অনুরাগী, গুণীজনেরাসহ এই অঞ্চলের সর্বসাধারণ। অনুষ্ঠিত স্মরনোৎসবে সকল ভক্তবৃন্দ ও শুভাকাংঙ্খীদের উপস্থিত থাকার জন্য মরমী কবি খোদাবকশ শাহ’র একমাত্র পুত্র প্রখ্যাত বাউল শিল্পী আব্দুল লতিফ শাহ বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।