শীতের আগমনে ব্যস্ত তিতুদহের কুমারপাড়াগুলো শুরু হয়েছে মৃৎ শিল্পের বিভিন্ন ধরণের জিনিস তৈরির কাজ
- আপলোড টাইম : ০১:৩৯:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জানুয়ারী ২০১৭
- / ৯৫৭ বার পড়া হয়েছে
তিতুদহ প্রতিনিধি: সারাদেশে কুমার শিল্প বিলীন হতে চললেও চুয়াডাঙ্গার তিতুদহের কয়েকটি গ্রামের চিত্র ব্যতিক্রম। শীতের শুরুতেই এসব গ্রামের কুমাররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন হরেক রকম মাটির জিনিস তৈরির কাজে। আর পুরুষের পাশাপাশি এ কাজ করছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও। কাজ চলছে কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত। তবে আধুনিকতার আগ্রাসনে এখন এ কাজে তেমন লাভ নেই। পেটের দায়ে এবং বাপ-ঠাকুরদার দীর্ঘ দিনের পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এখনও এ পেশাকে আকড়ে ধরে রেখেছেন তারা। এসব মৃৎ শিল্পের ইতিহাস শত বছরের। এক সময় এখানকার কুমারদের সুনিপুণ হাতে তৈরি মাটির জিনিসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন গ্রাম এবং হাটবাজারেও বিক্রি হতো এখানকার তৈরি জিনিসপত্র। কিন্তু কালের বিবর্তনে মাটির তৈরি হাড়ি পাতিলের চাহিদা কমতে থাকে। তার জায়গা দখল করে নেয় অ্যালুমিনিয়াম ও প¬াস্টিক- মেলামাইন সামগ্রী। এক সময়ের রান্নাঘরের হাড়ি, কড়াই, বদনা, ঢাকুন, ফুলের টব, কলস, পিঠার ছাচ, মুড়ি ভাজার সামগ্রী তৈরি করে গৃহস্থলির চাহিদা মেটানো সেই সব কুমারদের অধিকাংশেরই চাকা (মাটির সামগ্রী তৈরি করা যন্ত্র) বন্ধ হয়ে গেলেও চুয়াডাঙ্গা সদরের গড়াইটুপি (মুচিপাড়া) গ্রামে তা সচল রয়েছে। এই গ্রামে মোট ৭৮টি পরিবারের মধ্যে কুমার পরিবারের সংখ্যা ৩২। এসব পরিবারের দেড় শতাধিক সদস্য এখনও মাটির তৈরি জিনিসপত্র নিজ হাতে বানিয়ে বাজারে বিক্রয় করে সংসার চালায়। তবে প¬াস্টিকের তৈরি আধুনিক জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কদর কমেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের। তাই বেকার হয়ে পড়েছে মাটির কারিগররা। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কুমারদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে ফেলেছে। এখন তাদের কেউ ভ্যান, রিক্সা, কেউবা মাটি কাটা ইত্যাদি দিন মজুরের কাজ করছে। জানা যায়, এ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে দিনরাত ঘুরছে কুমারের চাকা। কেউ মাটিতে পানি মিশিয়ে কাঁদা নরম করছে, কেউ মাটির তৈরি জিনিস রোদে শোকানোর কাজ করছে, কেউ ব্যস্ত এগুলো পোড়ানোর কাজে। আবার অনেকের মনোযোগ পোড়ানো জিনিসপত্রে রং-তুলির কাজে। বিমাল কুমার পাল “সমীকরণকে” জানান, শীতের শুরু হওয়ার সাথে সাথে তাদের কাজও বেশি হয়। একই গ্রামের অর্চনা পাল বলেন, এখন কাজের খুব চাপ। তাই স্বামীর কাজে তিনি সহযোগিতা করেন। পঞ্চানন পাল অভিযোগ করে বলেন, এ পেশায় এখন আর লাভ নেই। অন্য কোন কাজ জানিনা। তাই বাপ দাদার পেশাকে কোন রকমের আঁকড়ে ধরে আছি মাত্র। জেলায় কুমার পরিবার ও তাদের সংখ্যার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে লিপিবদ্ধ নেই। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোন পৃষ্ঠপোষকতাও নেই এ শিল্পে। এমনটি চলতে থাকলে অচিরেই সম্পূর্ণ রূপে হারিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে মৃৎ শিল্পের। এজন্য এখনই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন জেলার সুধী সমাজের লোকেরা।