ভূমিকম্প ঝুঁকিতে দর্শনা কেরু চিনিকলের আবাসিক কোয়ার্টারসহ শতাধিক স্থাপনা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও শত শত মানুষের প্রাণ রক্ষা করতে এখনই ব্যাবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করছেন সচেতনমহল
- আপলোড টাইম : ১০:২৮:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জানুয়ারী ২০১৭
- / ৫০২ বার পড়া হয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধি: দর্শনার কেরু চিনিকলের মিল ক্যাম্পাসের মিলহাউস, জেনারেল অফিস, ডিষ্টিলারী বিল্ডিং, আবাসিক কোয়ার্টার, হাইস্কুল বিল্ডিংসহ শতাধিক স্থাপনা মারত্বকভাবে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। গত বছর মিল বাউন্ডারীর ৩টি পুকুর থেকে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করে বিপুল পরিমান বালি উত্তোলনের ফলে এ আশঙ্কা আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্পেও এসব স্থাপনা ধসে পড়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদহানিসহ মিলের কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারীসহ শত শত মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শত শত মানুষের জানমাল রক্ষার্থে চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত কার্যবরী ব্যাবস্থা নেয়ার দাবী ভুক্তভোগিদের। ১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় দেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল ও ডিষ্টিলারির সমন্বয়ে কেরু এ্যান্ড কোম্পানি স্থাপিত হয়। ওই সময় কেরু এন্ড কোম্পানি ক্যাম্পাসে মিলহাউস, জেনারেল অফিস ও ডিষ্টিলারী বিল্ডিং নির্মান করা হয়। সেই সাথে মিল কর্তৃপক্ষ মিলের শ্রমিকদের আবাসন সুবিধা দিতে মিল বাউন্ডারীতে আবাসিক কোয়ার্টার ও তাদের ছেলেমেদেরদের লেখাপড়ার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সমন্বয়ে একটি স্কুল নির্মান করে। একদিকে বয়সের ভার ও সেইসাথে সঠিক রক্ষণাবেক্ষন ও সংস্কারের অভাবে পৌনে একশ বছর আগে নির্মিত এসব স্থাপনার বেশিরভাগই বর্তমানে ব্যাবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফাটল ধরেছে ছাদসহ দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে। সারা বছরই খসে পড়ে দেয়ালসহ ছাদের প্লাষ্টার। চাকরির স্বার্থে অনেকটা বাধ্য হয়েই জ্বরাজীর্ণ এসব বিভিন্ন ভবনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শত শত শ্রমিক। অনেকের অভিমত, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের কোথাও স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হলেও এসব জ্বরাজীর্ণ ভবনের বেশিরভাগই ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল ও মায়ানমারে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পর ভূ-তত্ববিদরা বাংলাদেশেও যেকোন সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন যা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিলের আবাসিক কোয়ার্টারে বসবাসকারীদের বেশ কয়েকজন জানান, প্রায় এক যুগ আগে গণপূর্ত বিভাগ এসমস্ত কোয়ার্টার পরিত্যক্ত হিসাবে চিহ্নিত করে কেরু কর্তৃপক্ষকে জানায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে কেরু কর্তৃপক্ষ বিষয়টি চেপে রেখে নুতন করে আবাসিক কোয়ার্টার নির্মান না করে এসব পরিত্যাক্ত কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা ভাড়া আদায় করছে। আর শ্রমিকরাও চাকরির স্বার্থে অনেকটা বাধ্য হয়েই মাসে মাসে মোটা অংকের ভাড়া পরিশোধ করে জীবনের ঝুঁকি মধ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে এ সমস্ত পরিত্যক্ত ভবনেই বসবাস করছেন। বিগত আশির দশকে চিনিকল বাউন্ডারীতে রেলবাজার সংলগ্ন স্থানে একটি দ্বিতল আবাসিক ভবন নির্মিত হয়। ভবনটি নির্মানে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও ঠিকাদারের নি¤œমানের নির্মান সামগ্রীর ব্যাবহারের কারনে অল্প সময়েই এর আয়ুস্কাল শেষ হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ৪/৫টি পরিবার এ ভবন ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। ভবনে বসবাসকারীরা জানান, ভবনের অবস্থা এতই খারাপ যে, বর্ষাকালে এখানে বসবাস করার মত কোন অবস্থা নেই। দীর্ঘদিন এভাবে চললেও এ ব্যাপারে মিল কর্তৃপক্ষের কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ অনেকের। তাই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও শত শত মানুষের প্রাণ রক্ষা করতে এখনই ব্যাবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করছেন সচেতনমহল। এব্যাপারে কেরু এন্ড কোম্পানীর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন বলেন, আমরা চারটি বড় বিল্ডিং নির্মানের জন্য কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি যা বর্তমানে প্রত্রিয়াধীন রয়েছে।