ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

ঝুঁকি জেনেও অস্ত্রপচারে সন্তান জন্মদান বাড়ছে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০১৭
  • / ৩৬৫ বার পড়া হয়েছে

dsfsdসমীকরণ ডেস্ক: দেশে অস্ত্রোপচারের (সিজার) মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার বেড়েই চলছে। স্বাভাবিক ডেলিভারি কষ্টদায়ক হওয়ায় অনেক প্রসূতি মা-ই এই পদ্ধতিকে বেছে নিচ্ছেন। সিজারের কারণে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে তথ্য জানার পরও অনেকে এ পদ্ধতি বেছে নেন। আবার বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় সন্তান সম্ভাবা মাকে ঝুঁকি না নিয়ে ছুরি-চাকুর নিচে সেধে দেন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ রকম কাটাছেড়া জন্মদান পদ্ধতিতে মায়ের শরীরে বিভিন্ন ধরনের অ্যানেসথেটিক বা চেতনা নাশক ওষুধ প্রয়োগ করার ফলে অনেক সময় গর্ভনষ্ট, শিশুর প্রতিবন্ধিত্ব ঝুঁকিসহ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ওপর প্রভাব ফেলে। অস্ত্রোপচার জন্মদানের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে মহানগর মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মাদ মোশারফ হোসাইন বলেন, অনেক মেডিকেল ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত অস্ত্রোপচার করে থাকে। এতে করে প্রসূতির শরীরে অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক জাতীয় মেডিসিন প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে মা ও নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়। অস্ত্রোপচারে প্রসূতির এন্ডোমেটাইটিস বা ক্ষতস্থান ইনফেকশনের কারণে মায়ের জ্বর, পেটব্যথা, মাসিকের রাস্তায় অস্বাভাবিক নিঃসরণ হতে পারে। অ্যাম্বোসিস বা পায়ের শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। সিজারের সময় অতিরিক্ত ক্ষরণ ও সিজার-পরবর্তী বুকে দুধ আসতেও দেরি হয়। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (ডিবিএইচএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে ৪ শতাংশ, ২০০৭ সালে ৯ শতাংশ, ২০১১ সালে ১৭ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে শতকরা ২৩ ভাগ শিশুর অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে। অন্যদিকে সেভ দ্য চিল্ড্রেনের কর্মশালায় জানানো হয়, দেশে শিক্ষিত ও অর্থবিত্ত পরিবারে সিজারের হার সবচেয়ে বেশি। এছাড়া মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা ও মাতৃমৃত্যু জরিপ ২০১০-এর রিপোর্টে বলা হয়, শুধু ২০০৯ সালে ৪ লাখের বেশি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জন্ম নিয়েছে। যেটা ২০০১ সালের তুলনায় ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হেলথ বুলেটিনে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারে জন্মদান প্রায় ৮ গুণ বেড়েছে। শুধুমাত্র ২০১৩ সালে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭২১ জন প্রসূতি মা ভর্তি হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ১৬৪ জন শিশু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেয়। কিন্তু এদের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ প্রসূতিকে নরমাল ডেলিভারি করা যেত। জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত বছর মোট ১২ থেকে ১৩ হাজার শিশুর জন্ম হয়। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ বা প্রায় ৬ হাজারের মতো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। আরেক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেলে ৬০ শতাংশ ও বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে ৮০ ভাগ নবজাতক সিজারের মাধমে জন্ম নেয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর মোহাম্মাদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিস ও ট্রেনিং সেন্টারে ১ হাজার ৫৯ জন শিশু নরমাল ডেলিভারি হয়েছে আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ২ হাজার ৭৫০ জন নবজাতক জন্ম নিয়েছে। সাধারণত সিজার বা সি-সেকশন মা ও শিশুর জীবন রক্ষায় কার্যকর মনে হলেও অদূর ভবিষ্যতের জন্য এটা মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এর মাধ্যমে জন্ম নেয়া শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিও কখনো বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং সিজারিয়ান শিশু বেশি পরিমাণে ইনফেকশনের ঝুঁকিতে থাকে। আর এই মাধ্যমে সাধারণত ২৫ শতাংশ নবজাতকের নির্ধারিত সময়ের (২৫ থেকে ২৮ দিন) আগেই জন্ম হয়ে থাকে যেটা ইনফেকশনের বড় কারণ হতে পারে। এতে প্রথম ৩ দিন নবজাতকের ট্রান্সমিয়েন্ট ট্যাকিপ্নিয়া বা ঘনঘন শ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি সিজারিয়ান শিশুর ব্লাড ইনফেকশনের হার বেশি বলে জন্ডিসের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিতে শিশু মা থেকে কিছু অণুজীবাণু পেয়ে থাকে যা বাচ্চার রোগ প্রতিরোধে সহয়তা করে। কিন্তু সি-সেকশনের শিশু হাসপাতালের কাঁচি ছুড়ির অণুজীবাণু পায় যেটা তার জন্য খুবই মারাত্মক।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ঝুঁকি জেনেও অস্ত্রপচারে সন্তান জন্মদান বাড়ছে

আপলোড টাইম : ০২:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০১৭

dsfsdসমীকরণ ডেস্ক: দেশে অস্ত্রোপচারের (সিজার) মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার বেড়েই চলছে। স্বাভাবিক ডেলিভারি কষ্টদায়ক হওয়ায় অনেক প্রসূতি মা-ই এই পদ্ধতিকে বেছে নিচ্ছেন। সিজারের কারণে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে তথ্য জানার পরও অনেকে এ পদ্ধতি বেছে নেন। আবার বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় সন্তান সম্ভাবা মাকে ঝুঁকি না নিয়ে ছুরি-চাকুর নিচে সেধে দেন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ রকম কাটাছেড়া জন্মদান পদ্ধতিতে মায়ের শরীরে বিভিন্ন ধরনের অ্যানেসথেটিক বা চেতনা নাশক ওষুধ প্রয়োগ করার ফলে অনেক সময় গর্ভনষ্ট, শিশুর প্রতিবন্ধিত্ব ঝুঁকিসহ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ওপর প্রভাব ফেলে। অস্ত্রোপচার জন্মদানের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে মহানগর মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মাদ মোশারফ হোসাইন বলেন, অনেক মেডিকেল ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত অস্ত্রোপচার করে থাকে। এতে করে প্রসূতির শরীরে অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক জাতীয় মেডিসিন প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে মা ও নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়। অস্ত্রোপচারে প্রসূতির এন্ডোমেটাইটিস বা ক্ষতস্থান ইনফেকশনের কারণে মায়ের জ্বর, পেটব্যথা, মাসিকের রাস্তায় অস্বাভাবিক নিঃসরণ হতে পারে। অ্যাম্বোসিস বা পায়ের শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। সিজারের সময় অতিরিক্ত ক্ষরণ ও সিজার-পরবর্তী বুকে দুধ আসতেও দেরি হয়। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (ডিবিএইচএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে ৪ শতাংশ, ২০০৭ সালে ৯ শতাংশ, ২০১১ সালে ১৭ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে শতকরা ২৩ ভাগ শিশুর অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে। অন্যদিকে সেভ দ্য চিল্ড্রেনের কর্মশালায় জানানো হয়, দেশে শিক্ষিত ও অর্থবিত্ত পরিবারে সিজারের হার সবচেয়ে বেশি। এছাড়া মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা ও মাতৃমৃত্যু জরিপ ২০১০-এর রিপোর্টে বলা হয়, শুধু ২০০৯ সালে ৪ লাখের বেশি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জন্ম নিয়েছে। যেটা ২০০১ সালের তুলনায় ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হেলথ বুলেটিনে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারে জন্মদান প্রায় ৮ গুণ বেড়েছে। শুধুমাত্র ২০১৩ সালে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭২১ জন প্রসূতি মা ভর্তি হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ১৬৪ জন শিশু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেয়। কিন্তু এদের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ প্রসূতিকে নরমাল ডেলিভারি করা যেত। জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত বছর মোট ১২ থেকে ১৩ হাজার শিশুর জন্ম হয়। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ বা প্রায় ৬ হাজারের মতো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। আরেক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেলে ৬০ শতাংশ ও বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে ৮০ ভাগ নবজাতক সিজারের মাধমে জন্ম নেয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর মোহাম্মাদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিস ও ট্রেনিং সেন্টারে ১ হাজার ৫৯ জন শিশু নরমাল ডেলিভারি হয়েছে আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ২ হাজার ৭৫০ জন নবজাতক জন্ম নিয়েছে। সাধারণত সিজার বা সি-সেকশন মা ও শিশুর জীবন রক্ষায় কার্যকর মনে হলেও অদূর ভবিষ্যতের জন্য এটা মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এর মাধ্যমে জন্ম নেয়া শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিও কখনো বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং সিজারিয়ান শিশু বেশি পরিমাণে ইনফেকশনের ঝুঁকিতে থাকে। আর এই মাধ্যমে সাধারণত ২৫ শতাংশ নবজাতকের নির্ধারিত সময়ের (২৫ থেকে ২৮ দিন) আগেই জন্ম হয়ে থাকে যেটা ইনফেকশনের বড় কারণ হতে পারে। এতে প্রথম ৩ দিন নবজাতকের ট্রান্সমিয়েন্ট ট্যাকিপ্নিয়া বা ঘনঘন শ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি সিজারিয়ান শিশুর ব্লাড ইনফেকশনের হার বেশি বলে জন্ডিসের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিতে শিশু মা থেকে কিছু অণুজীবাণু পেয়ে থাকে যা বাচ্চার রোগ প্রতিরোধে সহয়তা করে। কিন্তু সি-সেকশনের শিশু হাসপাতালের কাঁচি ছুড়ির অণুজীবাণু পায় যেটা তার জন্য খুবই মারাত্মক।