আলমডাঙ্গার কুলপালায় ডাকাতের বোমাঘাতে নিহত কৃষক নাসিরের দাফন সম্পন্ন ঘটনার পর থেকে পুলিশি তৎপরতা জোরদার : ৭ সন্দেহভাজন পুলিশের হাতে
- আপলোড টাইম : ১২:১২:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী ২০১৭
- / ৪৮৬ বার পড়া হয়েছে
শহর প্রতিবেদক: আলমডাঙ্গার কুলপালা গ্রামে ডাকাতের বোমাঘাতে কৃষক নিহতের ঘটনায় সাত জনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রথমে পাঁচজনকে আটক করা হলেও পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও দুজনকে আটক করে পুলিশ। তবে পরের দুজন আটকের কথা স্বীকার করেনি পুলিশ প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা। এদিকে, ডাকাতের বোমার আঘাতে নিহত কৃষক নাসির হোসেনের লাশ গতকাল দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে নাসিরের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত বুধবার দিনগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে আলমডাঙ্গার কুলপালা গ্রামে ডাকাতদলের ছোড়া বোমায় নিহত হন কৃষক নাসির হোসেন।
এদিকে, এ ঘটনার পর থেকে কুলপালা সহ আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশের একটি উর্দ্ধতন মহল। অব্যহত সাঁড়াশি অভিযানে সন্দেহভাজন ৭জন আসামী আটক হয়েছে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের হাতে।
আমাদের আলমডাঙ্গা অফিস সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গার কুলপালায় ডাকাতদলের বোমাঘাতে নাসির উদ্দীন’র (৩৫) নিহতের ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্দেহভাজন ৫আসামীকে গ্রেফতার করেছে।
থানা সূত্রে জানা যায়, কুলপালা গ্রামের ডাকাতিকালে বোমা হামলার ঘটনায় গতকাল আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে চিৎলা ইউনিয়নের মোশাররফ হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন (৩৫), একই গ্রামের মৃত নজর আলীর ছেলে হাসেম আলী (৫৫), বড় গাংনীর মৃত আফসার আলীর ছেলে আব্দুল আলিম (৪৫), ভোগাইল বগাদি গ্রামের জেহের আলীর ছেলে আনছার আলী (৪৬) ও একই গ্রামের রবজেল আলীর ছেলে জাকির হোসেন (৪৫) কে গ্রেফতার করেছে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে আরো দুজন ডাকাতের নাম। রাতেই আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ও ডিবির অভিযানে তারা দুজন আটক হয়। আটককৃত হায়দার আলী (৩৫) নূরপুর গ্রামের নিমাই ওরফে ইমান আলীর ছেলে এবং লোকমান হোসেন ওরফে পুটে আলমডাঙ্গা আন্দিপুর গ্রামের মৃত ঈমান আলীর ছেলে।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার দিনগত রাত ১টার দিকে সফল হাঁসখামারি জাকিরের বাড়ির অদূরবর্তী নাসির উদ্দীনের বাড়ির পাশে কয়েকজন কানাঘুষা করছিলো। তাদের কানাঘুষায় নাসির উদ্দীনসহ পরিবারের সদস্যদের ঘুম ভেঙে গেলে তারা চোর চোর বলে চিৎকারদেয়। ডাকাতদলের কয়েকজন বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে। চিৎকার চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। এরই একপর্যায়ে ডাকাতদল একটি বোমা নিক্ষেপ করলে নাসির উদ্দীন বোমাঘাতে গুরুতর জখম হন। পরিবারের সদস্যরা নাসির উদ্দীনকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ডাকাতদল পালানোর চেষ্টা করে। প্রতিবেশীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে তারা আরো একটি বোমা নিক্ষেপ করলে লিটন আহত হন। নাসির উদ্দীন ও লিটনকে উদ্ধার করে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রাবিজুল ইসলাম নাসির উদ্দীনকে মৃত বলে ঘোষণা করে ও আহত লিটনকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে নেয়ার আগেই নাসির উদ্দীনের মৃত্যু হয়েছিল। ডাকাতদলের বোমার আঘাতে নিহত নাসির উদ্দীন কুলপালা পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা। তিনি একই গ্রাামের মৃত বাদল মন্ডলের ছেলে। আহত লিটন কুলপালা পশ্চিমপাড়ার মিয়াজান মন্ডলের ছেলে। নাসির উদ্দীনের স্ত্রীর চাচাতো ভাই। নাসির উদ্দীনের পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতবিক্ষত হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়। আর লিটনের পিঠে বিদ্ধ হয়েছে বোমার স্পিøন্টার। তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা কুলপালা গ্রামের ডাকাতি ও বোমা হামলায় নিহতের ঘটনায় আটককৃত ৫জনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যহত রেখেছি। আশা করি এই ঘটনায় জড়িতদের সকলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হব।
গ্রামবাসীদের নাম প্রকাশে কয়েকজন জানান, ঘটনার দিন ডাকাত দল বোমাবাজি তান্ডব শেষে বিলের মাঠ হয়ে একটি অংশ এখান থেকে ১৫০ গজ দূরে সীমান্তে চলে গেছে। আর একটি অংশ দামুড়হুদা অঞ্চলে প্রবেশ করেছে বলে জানা যায়। ফলে প্রশাসন বা গ্রামবাসী তাদের আটক করতে পারেনি। তারা আরো জানায়, এতদাঞ্চলের একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন যাবত এ ধরণের ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে করে আসছে। প্রশাসন যদি এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে তবে হয়তো চক্রটি স্ব’দলবলে আটক হবে। নতুবা এলাকার মানুষের মাঝে ডাকাতি আতঙ্ক কাঁটছে না।