ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের দর্শনা বাসষ্ট্যান্ড থেকে রামনগর পর্যন্ত রাস্তা এখন মরণফাঁদ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদপূর্বক রাস্তা প্রশস্তকরণসহ ফুটপাথ ও ডিভাইডার নির্মানের দাবী

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:১৬:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬
  • / ৭৮২ বার পড়া হয়েছে

DRSANA News & Picture--(Darsana - Mujibnagor Road)--20.12 (3)

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পৌর শহর দর্শনা। এখানে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল, ডিষ্টিলারী, রেল বন্দর, কাষ্টমস্ চেকপোষ্ট, আন্তর্জাতিক রেল ষ্টেশনসহ দুইটি রেলষ্টেশন, পাইকারি কাঁচাবাজার, ডজন খানেক ছোটবড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় শতাধিক সরকারি-বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠান। সরকার প্রতি বছর এখান থেকে বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকলেও এ শহরটির উন্নয়নের ব্যাপারে কোন তেমন কোন পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্টদের। বর্তমানে শহরের কেন্দ্রস্থলের একমাত্র রাস্তা দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের দর্শনা বাসস্ট্যান্ড থেকে রামনগর পর্যন্ত ৩কি.মি. রাস্তা এখন মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। জনস্বার্থে রাস্তার দু’পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদপূর্বক রাস্তা প্রশস্থকরনসহ ফুটপাত ও ডিভাইডার নির্মানের দাবী।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার প্রাণকেন্দ্র দর্শনা পৌর শহরের কেন্দ্রস্থল বরাবর অবস্থিত একমাত্র মুল সড়কটি বর্তমানে মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। আগের তুলনায় এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীর সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় বাড়েনি সড়কের প্রশস্ততা। সম্প্রতি রাস্তার প্রশস্ততা কিছুটা বাড়লেও রাস্তার কিনারা ঘেঁসে অবস্থিত দোকানপাটের মালামাল, সাইনবোর্ড, পল্লীবিদ্যুতের খুঁটি থাকায় পথচারী ও ছোটখাটো যানবাহনের চলাচলের জন্য কোন জায়গা নেই। যানবাহন আসার সময় একজন পথচারী রাস্তার ধারে সরে দাঁড়াবে তারও উপায় নেই। বর্তমানে শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি জুড়েই বাস-ট্রাক টার্মিনালে পরিনত হয়েছে। অভ্যন্তরীন রুটসহ আন্তঃজেলা ও ঢাকাগামী পরিবহনগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা এই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে দাঁড়িয়ে থাকায় অন্যান্য যানবাহন, পথচারীসহ শহরবাসীকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে মিলগেট থেকে পুরাতন বাজার রেলগেট পর্যন্ত রাস্তা অলিখিত বাসটার্মিনালে পরিনত হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে। এসব স্থানে যানজটের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। গত ৫-৬ বছরে এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছে ২জন শিশুসহ ৭জন। এছাড়াও দূর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত হয়েছে অনেকে। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর ব্যাংকের সামনে মোটরসাইকেল ও পাওয়ারট্রলির ধাক্কায় নবম শ্রেণিতে পড়–য়া এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়। এর ঠিক এক বছরের মাথায় একই কায়দায় গত ১২ ডিসেম্বর সড়কের জে আর পরিহনের কাউন্টারের সামনে আখবোঝাই ট্রাক্টর ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তালহা (৩২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
এ সড়কের ধারেই রয়েছে ২টি সরকারি প্রাইমারি স্কুল, ২টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, ১টি হাইস্কুল ও একটি মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ সমস্ত  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও পার্শ¦বর্তী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ সড়ক দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা বাড়ী না ফেরা পর্যন্ত তাদের অভিভাবকরাও থাকে চরম উৎকন্ঠায়। এ রাস্তার ধারে অবস্থিত ১৫-১৬ টি পরিবহন সংস্থার কাউন্টার থেকে রাত দিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, বরগুনাগামী অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ও মালামাল উঠানো নামানো করে থাকে। এ সড়ক দিয়ে দর্শনা রেলবন্দরে আমদানীকৃত শত শত পণ্যবাহী ট্রাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। এছাড়া প্রতিদিন এ সড়কে অসংখ্য ট্রাক, ট্রাক্টর, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, নসিমন, করিমন, আলমসাধূ, লাটাহাম্বার, মোটরসাইকেল, সাইকেল, ভ্যান, রিক্সাযোগে ও পায়ে হেটে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। প্রতিদিন দর্শনা রেলবাজারের পাইকারী কাঁচাবাজার থেকে শাকসবজি এবং সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার পার্শ্ববর্তী ডুগডুগি ও শিয়ালমারি হাটে গরু বোঝাই শত শত ট্রাক, পাওয়ারট্রলি ও লাটাহাম্বার চলাচল করে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৫মাস খুলনা, যশোরসহ দক্ষিনাঞ্চলের আটটি জেলা থেকে প্রতিদিন বাস, ট্রাকসহ নানারকম যানবাহনে করে হাজার হাজার মানুষ এ রাস্তা দিয়ে বনভোজন বা শিক্ষা সফর করার জন্য মুজিবনগর যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মালবাহী ট্রাক এসে মেইন রোডের উপর ঘন্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে মালামাল খালাস করে। কেরু চিনিকলের মাড়াই মৌসুমে এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে আখবোঝাই শত শত গাড়ী। ফলে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী হাজার হাজার মানুষসহ রাস্তার দু’পাশের ব্যবসায়ীরা সর্বক্ষন থাকে আতঙ্কে। বিশেষ করে কেরু চিনিকলের মাড়াই মৌসুমে মিলগেটে প্রায়ই অতিরিক্ত আখের গাড়ি ভিড় করায় এ স্থানটি যানজট লেগেই থাকে। যানজটের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে চিনিকল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয় না।
এ সড়কে চলাচলকারী যানের মধ্যে অবৈধযানের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি এসবের সাথে যোগ হয়েছে মোটরচালিত দ্রুতগতির পাখিভ্যান। এসব অবৈধযান ও পাখিভ্যানের বেশির ভাগ চালকই অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ। তারা রাস্তায় চলার কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই রাতদিন বীরদর্পে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এ অবৈধযানগুলো জনদূর্ভাগের অন্যতম কারন হয়ে দাঁড়ালেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিরব ভূমিকা পালন করছে। এদিকে হাজিপাড়া থেকে রেলবাজার পর্যন্ত রাস্তার এক পার্শ্বে কেরু চিনিকলের সীমানায় রাস্তার ধার ঘেঁসে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শতশত দোকানপাট। যার কারনে সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারন করেছে। অনেকে বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ যদি রাস্তার জায়গা বাদ দিয়ে তাদের সীমানার মধ্যে ফাঁকা জায়গায় দোকান তৈরি করে লিজ বা ভাড়া দেয় তবে একদিকে যেমন কেরু এলাকার সীমানা জঞ্জালমুক্ত হয়ে কোম্পানীর আয় বাড়বে অপরদিকে শত শত ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘেœ এসব দোকানে ব্যবসা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে এ রাস্তার সবচেয়ে বিপদজনক স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে, দর্শনা বাসষ্ট্যান্ড, কেরুজ মিলগেট(আমতলা), আখের গাড়ীর গেট, হীরা সিনেমাহলের সামনে, রেলবাজার বটতলা ও ব্যাঙ্কের সামনে, অংকুর কেজি স্কুল ও কাঁচাবাজারের সামনে, পুরাতরবাজার রেলগেট, পুরাতনবাজার ভিআইপি মোড় ও হাটের মোড় এবং রামনগর মোড়। এসব স্থানে রাস্তার ধার ঘেঁসে দোকানপাট থাকায় সেইসাথে মানুষজন ও যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় রাস্তায় চলাচল করা খুবই বিপদজনক হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়মী লীগের জেলা সাধারন সম্পাদক, বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, দর্শনা পৌর মেয়র, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, আশপাশ এলাকার কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রায় ডজন খানেক নেতার বসবাস এই দর্শনা শহরে। তারপরও নানা সমস্যায় জর্জরিত দর্শনার উন্নয়ন না হওয়ায় দর্শনাবাসী রীতিমত হতাশ।
দর্শনার অংকুর কেজি স্কুলের প্রিন্সিপাল হাফিজুর রহমান বলেন, স্কুল শুরুর আগে ও ছুটির পরে আমি প্রায়ই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারে সহায়তা করে থাকি। বর্তমানে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষ করে স্কুলগামী ছোট ছোট শিশু ও বয়স্কদের জন্য রাস্তা পারাপার খুবই বিপদজনক হয়ে পড়েছে। যানবাহন ও মানুষের নিরাপদে চলাচল নিশ্চিত করতে দুইধার অবৈধ দখলমুক্ত করে রাস্তাটি প্রশস্তকরনসহ ফুটপাত নির্মান ও রাস্তায় ডিভাইডার স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে দর্শনা পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমান রাস্তাটির দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, রাস্তাটি প্রশ্রস্ত করে ফুটপাথ নির্মান ও  ডিভাইডার স্থাপন করার প্রয়োজন। রাস্তার সমস্যার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কাজের তালিকায় নিয়েছি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। ইতোমধ্যেই দর্শনা বাসস্ট্যান্ডে ট্রাক ও ঢাকাগামী বাসের জন্য জেলা পরিষদের নিজস্ব জমি ও অর্থায়নে বাস/ট্রাক টার্মিনাল নির্মানের কাজ শুরু হয়েছে। টার্মিনালটির নির্মান কাজ শেষে সেখানে  ট্রাক-বাস পার্কিংয়ের ব্যবস্থা হলে শহরের যানজট অনেকটাই কমে আসবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের দর্শনা বাসষ্ট্যান্ড থেকে রামনগর পর্যন্ত রাস্তা এখন মরণফাঁদ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদপূর্বক রাস্তা প্রশস্তকরণসহ ফুটপাথ ও ডিভাইডার নির্মানের দাবী

আপলোড টাইম : ০২:১৬:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

DRSANA News & Picture--(Darsana - Mujibnagor Road)--20.12 (3)

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পৌর শহর দর্শনা। এখানে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল, ডিষ্টিলারী, রেল বন্দর, কাষ্টমস্ চেকপোষ্ট, আন্তর্জাতিক রেল ষ্টেশনসহ দুইটি রেলষ্টেশন, পাইকারি কাঁচাবাজার, ডজন খানেক ছোটবড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় শতাধিক সরকারি-বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠান। সরকার প্রতি বছর এখান থেকে বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকলেও এ শহরটির উন্নয়নের ব্যাপারে কোন তেমন কোন পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্টদের। বর্তমানে শহরের কেন্দ্রস্থলের একমাত্র রাস্তা দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের দর্শনা বাসস্ট্যান্ড থেকে রামনগর পর্যন্ত ৩কি.মি. রাস্তা এখন মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। জনস্বার্থে রাস্তার দু’পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদপূর্বক রাস্তা প্রশস্থকরনসহ ফুটপাত ও ডিভাইডার নির্মানের দাবী।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার প্রাণকেন্দ্র দর্শনা পৌর শহরের কেন্দ্রস্থল বরাবর অবস্থিত একমাত্র মুল সড়কটি বর্তমানে মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। আগের তুলনায় এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীর সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় বাড়েনি সড়কের প্রশস্ততা। সম্প্রতি রাস্তার প্রশস্ততা কিছুটা বাড়লেও রাস্তার কিনারা ঘেঁসে অবস্থিত দোকানপাটের মালামাল, সাইনবোর্ড, পল্লীবিদ্যুতের খুঁটি থাকায় পথচারী ও ছোটখাটো যানবাহনের চলাচলের জন্য কোন জায়গা নেই। যানবাহন আসার সময় একজন পথচারী রাস্তার ধারে সরে দাঁড়াবে তারও উপায় নেই। বর্তমানে শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি জুড়েই বাস-ট্রাক টার্মিনালে পরিনত হয়েছে। অভ্যন্তরীন রুটসহ আন্তঃজেলা ও ঢাকাগামী পরিবহনগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা এই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে দাঁড়িয়ে থাকায় অন্যান্য যানবাহন, পথচারীসহ শহরবাসীকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে মিলগেট থেকে পুরাতন বাজার রেলগেট পর্যন্ত রাস্তা অলিখিত বাসটার্মিনালে পরিনত হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে। এসব স্থানে যানজটের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। গত ৫-৬ বছরে এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছে ২জন শিশুসহ ৭জন। এছাড়াও দূর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত হয়েছে অনেকে। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর ব্যাংকের সামনে মোটরসাইকেল ও পাওয়ারট্রলির ধাক্কায় নবম শ্রেণিতে পড়–য়া এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়। এর ঠিক এক বছরের মাথায় একই কায়দায় গত ১২ ডিসেম্বর সড়কের জে আর পরিহনের কাউন্টারের সামনে আখবোঝাই ট্রাক্টর ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তালহা (৩২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
এ সড়কের ধারেই রয়েছে ২টি সরকারি প্রাইমারি স্কুল, ২টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, ১টি হাইস্কুল ও একটি মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ সমস্ত  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও পার্শ¦বর্তী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ সড়ক দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা বাড়ী না ফেরা পর্যন্ত তাদের অভিভাবকরাও থাকে চরম উৎকন্ঠায়। এ রাস্তার ধারে অবস্থিত ১৫-১৬ টি পরিবহন সংস্থার কাউন্টার থেকে রাত দিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, বরগুনাগামী অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ও মালামাল উঠানো নামানো করে থাকে। এ সড়ক দিয়ে দর্শনা রেলবন্দরে আমদানীকৃত শত শত পণ্যবাহী ট্রাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। এছাড়া প্রতিদিন এ সড়কে অসংখ্য ট্রাক, ট্রাক্টর, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, নসিমন, করিমন, আলমসাধূ, লাটাহাম্বার, মোটরসাইকেল, সাইকেল, ভ্যান, রিক্সাযোগে ও পায়ে হেটে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। প্রতিদিন দর্শনা রেলবাজারের পাইকারী কাঁচাবাজার থেকে শাকসবজি এবং সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার পার্শ্ববর্তী ডুগডুগি ও শিয়ালমারি হাটে গরু বোঝাই শত শত ট্রাক, পাওয়ারট্রলি ও লাটাহাম্বার চলাচল করে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৫মাস খুলনা, যশোরসহ দক্ষিনাঞ্চলের আটটি জেলা থেকে প্রতিদিন বাস, ট্রাকসহ নানারকম যানবাহনে করে হাজার হাজার মানুষ এ রাস্তা দিয়ে বনভোজন বা শিক্ষা সফর করার জন্য মুজিবনগর যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মালবাহী ট্রাক এসে মেইন রোডের উপর ঘন্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে মালামাল খালাস করে। কেরু চিনিকলের মাড়াই মৌসুমে এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে আখবোঝাই শত শত গাড়ী। ফলে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী হাজার হাজার মানুষসহ রাস্তার দু’পাশের ব্যবসায়ীরা সর্বক্ষন থাকে আতঙ্কে। বিশেষ করে কেরু চিনিকলের মাড়াই মৌসুমে মিলগেটে প্রায়ই অতিরিক্ত আখের গাড়ি ভিড় করায় এ স্থানটি যানজট লেগেই থাকে। যানজটের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে চিনিকল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয় না।
এ সড়কে চলাচলকারী যানের মধ্যে অবৈধযানের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি এসবের সাথে যোগ হয়েছে মোটরচালিত দ্রুতগতির পাখিভ্যান। এসব অবৈধযান ও পাখিভ্যানের বেশির ভাগ চালকই অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ। তারা রাস্তায় চলার কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই রাতদিন বীরদর্পে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এ অবৈধযানগুলো জনদূর্ভাগের অন্যতম কারন হয়ে দাঁড়ালেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিরব ভূমিকা পালন করছে। এদিকে হাজিপাড়া থেকে রেলবাজার পর্যন্ত রাস্তার এক পার্শ্বে কেরু চিনিকলের সীমানায় রাস্তার ধার ঘেঁসে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শতশত দোকানপাট। যার কারনে সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারন করেছে। অনেকে বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ যদি রাস্তার জায়গা বাদ দিয়ে তাদের সীমানার মধ্যে ফাঁকা জায়গায় দোকান তৈরি করে লিজ বা ভাড়া দেয় তবে একদিকে যেমন কেরু এলাকার সীমানা জঞ্জালমুক্ত হয়ে কোম্পানীর আয় বাড়বে অপরদিকে শত শত ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘেœ এসব দোকানে ব্যবসা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে এ রাস্তার সবচেয়ে বিপদজনক স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে, দর্শনা বাসষ্ট্যান্ড, কেরুজ মিলগেট(আমতলা), আখের গাড়ীর গেট, হীরা সিনেমাহলের সামনে, রেলবাজার বটতলা ও ব্যাঙ্কের সামনে, অংকুর কেজি স্কুল ও কাঁচাবাজারের সামনে, পুরাতরবাজার রেলগেট, পুরাতনবাজার ভিআইপি মোড় ও হাটের মোড় এবং রামনগর মোড়। এসব স্থানে রাস্তার ধার ঘেঁসে দোকানপাট থাকায় সেইসাথে মানুষজন ও যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় রাস্তায় চলাচল করা খুবই বিপদজনক হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়মী লীগের জেলা সাধারন সম্পাদক, বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, দর্শনা পৌর মেয়র, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, আশপাশ এলাকার কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রায় ডজন খানেক নেতার বসবাস এই দর্শনা শহরে। তারপরও নানা সমস্যায় জর্জরিত দর্শনার উন্নয়ন না হওয়ায় দর্শনাবাসী রীতিমত হতাশ।
দর্শনার অংকুর কেজি স্কুলের প্রিন্সিপাল হাফিজুর রহমান বলেন, স্কুল শুরুর আগে ও ছুটির পরে আমি প্রায়ই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারে সহায়তা করে থাকি। বর্তমানে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষ করে স্কুলগামী ছোট ছোট শিশু ও বয়স্কদের জন্য রাস্তা পারাপার খুবই বিপদজনক হয়ে পড়েছে। যানবাহন ও মানুষের নিরাপদে চলাচল নিশ্চিত করতে দুইধার অবৈধ দখলমুক্ত করে রাস্তাটি প্রশস্তকরনসহ ফুটপাত নির্মান ও রাস্তায় ডিভাইডার স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে দর্শনা পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমান রাস্তাটির দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, রাস্তাটি প্রশ্রস্ত করে ফুটপাথ নির্মান ও  ডিভাইডার স্থাপন করার প্রয়োজন। রাস্তার সমস্যার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কাজের তালিকায় নিয়েছি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। ইতোমধ্যেই দর্শনা বাসস্ট্যান্ডে ট্রাক ও ঢাকাগামী বাসের জন্য জেলা পরিষদের নিজস্ব জমি ও অর্থায়নে বাস/ট্রাক টার্মিনাল নির্মানের কাজ শুরু হয়েছে। টার্মিনালটির নির্মান কাজ শেষে সেখানে  ট্রাক-বাস পার্কিংয়ের ব্যবস্থা হলে শহরের যানজট অনেকটাই কমে আসবে।