ইপেপার । আজ রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

সংলাপের সফলতা নিয়ে ঘোর সংশয় বিশ্লেষকরা বলছেন আ. লীগের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত যে রাষ্ট্রপতি নেবেন না তা বোঝা যাচ্ছে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:০৪:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬
  • / ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপকে বাহ্যিকভাবে ইতিবাচক বললেও এই সংলাপের সফলতা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না রাষ্ট্রপতি, তা দলটির নেতাদের বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা জানান, সবগুলো রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির দাবি বাস্তবায়িত হবে এমনটি মনে করছেন না তারা। সংসদ নির্বাচন পরিচালনার মূল আইন বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের জন্য যে প্রস্তাব বিএনপি দিয়েছে তার বাস্তবায়নের উদ্যোগ আওয়ামী লীগ নেবে বলে মনে হয় না। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির কোনো অযৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হবে না। এর মানে বিএনপির যে দাবি আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যাবে তা তারা মানবেন না। বিশ্লেষকদের মতে, সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কমপক্ষে আরও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেয়া হয়েছে সে সুযোগ হাতছাড়া করবে না ক্ষমতাসীনরা। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ কেবল রাজনৈতিক কারণে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরিফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রপতির সংলাপ সফল হবে কি-না এ বিষয়ে আগাম কোনো মন্তব্য না করাই ভালো। তবে গণতন্ত্রে সংলাপের বিকল্প নেই। তিনি যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তার ফলাফল ভালো হোক, এটা আশা করেন। বিএনপির প্রস্তাব আওয়ামী লীগের পক্ষে কতটুকু মানা সম্ভব এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সংলাপে প্রস্তাব থাকবে, পাশাপাশি কাউন্টার প্রস্তাবও থাকবে। যার পক্ষে যে বিষয়টা সুবিধাজনক হবে সে প্রস্তাব তারা দেবে। তবে কোন সিদ্ধান্ত দেশের জন্য ভালো হবে তা রাজনীতিবিদরা সবাই খুব ভালো বোঝেন। বর্তমানে যারা রাজনীতি করছেন তারা অতীতে অনেক সংকট মোকাবেলা করেছেন। আশা করেন দেশের মঙ্গলের জন্য তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন গঠনে এই বৈঠক কোনো ভূমিকা রাখবে কি-না এবং তাদের দেয়া প্রস্তাব রাষ্ট্রপতি কতটুকু আমলে নেবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের।
সংশয় নিয়ে কেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসলেন-এ প্রশ্নে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বিএনপির। তাই আগামী নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে কোনো ধরনের সুযোগ দেয়া হবে বোকামি। তারা বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি এই সরকারের ন্যূনতম সহনশীলতা নেই। ক্ষমতার জন্য তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। তাই রাষ্ট্রপতির আহবানে এখন সংলাপে অংশ না নেয়া মানে হলো আবারও আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল করার সুযোগ করে দেয়া। আওয়ামী লীগকে আর একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। তাই আপাতত কৌশল হিসেবে সংলাপে অংশ নেয়া। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি যদি তাদের দাবি মেনে না নেন তাহলে এটা হবে তাদের বড় একটা ইস্যু।
বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে এই নির্বাচন কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। তবে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন।’ অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শই মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। সেজন্য সংবিধানের ওপর আস্থা রেখে নিশ্চিন্তে আছে আওয়ামী লীগ। সংলাপ আয়োজনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকটি সূত্র বলছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে তাই সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে বিএনপির অযৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হবে না- মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে উপদেশ দিয়ে বলছেন, রাষ্ট্রপতি যা সিদ্ধান্ত দেবেন তা যেন বিএনপি মেনে নেয়। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, সংলাপের নামে ‘আই ওয়াশ’ চলছে। তাদের মতামতকেই সবার ওপরে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে তারা। তবে আওয়ামী লীগকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার মতে, ‘রাজনীতি একধরনের খেলা। এখানে নানা কৌশল করতে হয়। দেশের জনগণের সেন্টিমেন্ট নিজেদের বশে রাখতে অনেক কিছুরই উদ্যোগ নিতে হয়, যাতে সমালোচনার মুখ বন্ধ থাকে। তা ছাড়া সংবিধানের বাইরে তো আমরা যাচ্ছি না।’
বিএনপি আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ সফল হবে কি-না এমন প্রশ্নে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সংলাপের বিষয়ে আগাম কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না। সংলাপ সফল হবে কি-না এটা রাষ্ট্রপতির বিষয়।’ রাষ্ট্রপতি যদি বিএনপির প্রস্তাব মেনে নেয় তাহলে আপনারা সংবিধানের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা পরের বিষয়।
গত ১৮ ডিসেম্বর রোববার বঙ্গবভনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে বিষয়টিকে আশাবাদী বলে মন্তব্য করেন, তখনই আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লির সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে তারা পরামর্শ দিয়ে এসেছেন, ভালো কথা। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠনে যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল মেনে নেবে। আশা করেন, বিএনপিও মেনে নেবে। এ নিয়ে কোনো ধরনের ঝামেলা করবে না। অপরদিকে, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি যদি মনে করে ‘সালিস মানি কিন্তু তালগাছটা আমার’, তাহলে সংলাপ সফল হবে না। রাষ্ট্রপতি যা সিদ্ধান্ত দেবেন তা ১৪ দল মেনে নেবে, আশা করেন বিএনপিও মেনে নেবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, বিএনপির কোনো অযৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হবে না। তবে বিএনপির কোন দাবিটি অযৌক্তিক তিনি তা বলেননি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

সংলাপের সফলতা নিয়ে ঘোর সংশয় বিশ্লেষকরা বলছেন আ. লীগের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত যে রাষ্ট্রপতি নেবেন না তা বোঝা যাচ্ছে

আপলোড টাইম : ০৩:০৪:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

সমীকরণ ডেস্ক: রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপকে বাহ্যিকভাবে ইতিবাচক বললেও এই সংলাপের সফলতা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না রাষ্ট্রপতি, তা দলটির নেতাদের বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা জানান, সবগুলো রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির দাবি বাস্তবায়িত হবে এমনটি মনে করছেন না তারা। সংসদ নির্বাচন পরিচালনার মূল আইন বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের জন্য যে প্রস্তাব বিএনপি দিয়েছে তার বাস্তবায়নের উদ্যোগ আওয়ামী লীগ নেবে বলে মনে হয় না। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির কোনো অযৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হবে না। এর মানে বিএনপির যে দাবি আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যাবে তা তারা মানবেন না। বিশ্লেষকদের মতে, সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কমপক্ষে আরও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেয়া হয়েছে সে সুযোগ হাতছাড়া করবে না ক্ষমতাসীনরা। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ কেবল রাজনৈতিক কারণে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরিফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রপতির সংলাপ সফল হবে কি-না এ বিষয়ে আগাম কোনো মন্তব্য না করাই ভালো। তবে গণতন্ত্রে সংলাপের বিকল্প নেই। তিনি যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তার ফলাফল ভালো হোক, এটা আশা করেন। বিএনপির প্রস্তাব আওয়ামী লীগের পক্ষে কতটুকু মানা সম্ভব এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সংলাপে প্রস্তাব থাকবে, পাশাপাশি কাউন্টার প্রস্তাবও থাকবে। যার পক্ষে যে বিষয়টা সুবিধাজনক হবে সে প্রস্তাব তারা দেবে। তবে কোন সিদ্ধান্ত দেশের জন্য ভালো হবে তা রাজনীতিবিদরা সবাই খুব ভালো বোঝেন। বর্তমানে যারা রাজনীতি করছেন তারা অতীতে অনেক সংকট মোকাবেলা করেছেন। আশা করেন দেশের মঙ্গলের জন্য তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন গঠনে এই বৈঠক কোনো ভূমিকা রাখবে কি-না এবং তাদের দেয়া প্রস্তাব রাষ্ট্রপতি কতটুকু আমলে নেবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের।
সংশয় নিয়ে কেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসলেন-এ প্রশ্নে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বিএনপির। তাই আগামী নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে কোনো ধরনের সুযোগ দেয়া হবে বোকামি। তারা বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি এই সরকারের ন্যূনতম সহনশীলতা নেই। ক্ষমতার জন্য তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। তাই রাষ্ট্রপতির আহবানে এখন সংলাপে অংশ না নেয়া মানে হলো আবারও আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল করার সুযোগ করে দেয়া। আওয়ামী লীগকে আর একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। তাই আপাতত কৌশল হিসেবে সংলাপে অংশ নেয়া। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি যদি তাদের দাবি মেনে না নেন তাহলে এটা হবে তাদের বড় একটা ইস্যু।
বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে এই নির্বাচন কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। তবে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন।’ অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শই মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। সেজন্য সংবিধানের ওপর আস্থা রেখে নিশ্চিন্তে আছে আওয়ামী লীগ। সংলাপ আয়োজনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকটি সূত্র বলছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে তাই সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে বিএনপির অযৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হবে না- মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে উপদেশ দিয়ে বলছেন, রাষ্ট্রপতি যা সিদ্ধান্ত দেবেন তা যেন বিএনপি মেনে নেয়। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, সংলাপের নামে ‘আই ওয়াশ’ চলছে। তাদের মতামতকেই সবার ওপরে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে তারা। তবে আওয়ামী লীগকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার মতে, ‘রাজনীতি একধরনের খেলা। এখানে নানা কৌশল করতে হয়। দেশের জনগণের সেন্টিমেন্ট নিজেদের বশে রাখতে অনেক কিছুরই উদ্যোগ নিতে হয়, যাতে সমালোচনার মুখ বন্ধ থাকে। তা ছাড়া সংবিধানের বাইরে তো আমরা যাচ্ছি না।’
বিএনপি আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ সফল হবে কি-না এমন প্রশ্নে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সংলাপের বিষয়ে আগাম কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না। সংলাপ সফল হবে কি-না এটা রাষ্ট্রপতির বিষয়।’ রাষ্ট্রপতি যদি বিএনপির প্রস্তাব মেনে নেয় তাহলে আপনারা সংবিধানের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা পরের বিষয়।
গত ১৮ ডিসেম্বর রোববার বঙ্গবভনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে বিষয়টিকে আশাবাদী বলে মন্তব্য করেন, তখনই আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লির সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে তারা পরামর্শ দিয়ে এসেছেন, ভালো কথা। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠনে যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল মেনে নেবে। আশা করেন, বিএনপিও মেনে নেবে। এ নিয়ে কোনো ধরনের ঝামেলা করবে না। অপরদিকে, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি যদি মনে করে ‘সালিস মানি কিন্তু তালগাছটা আমার’, তাহলে সংলাপ সফল হবে না। রাষ্ট্রপতি যা সিদ্ধান্ত দেবেন তা ১৪ দল মেনে নেবে, আশা করেন বিএনপিও মেনে নেবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, বিএনপির কোনো অযৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হবে না। তবে বিএনপির কোন দাবিটি অযৌক্তিক তিনি তা বলেননি।