আদালতে খালেদা জিয়া
- আপলোড টাইম : ১২:৫০:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬
- / ৫৩৫ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ১৫ই ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। রাজধানীর বকশিবাজারের কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে গতকাল খালেদা জিয়া তার অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য হাজির হলেও তার আইনজীবীদের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে নতুন করে এদিন ধার্য করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। বিচারক ওইদিন আসামিদের পক্ষে সাফাই সাক্ষীদের তালিকাও জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ মামলায় গত ১লা ডিসেম্বর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। ওই দিন ১৫/২০ মিনিট বক্তব্য দেওয়ার পর অসমাপ্ত বক্তব্য দেয়ার জন্য ৮ই ডিসেম্বর (গতকাল) দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। এর আগে তাকে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য পড়ে শোনানো হয়। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার করা একটি আবেদন শুনানির অপেক্ষায়- এমন উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার অসমাপ্ত বক্তব্য মুলতবি করার আবেদন জানান তার আইনজীবীরা। এ সময় বিচারক আবু আহমেদ জমাদার খালেদার আইনজীবীদের করা আবেদন নাকচ করে খালেদা জিয়াকে বক্তব্য শুরু করার আদেশ দেন। পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও আবদুর রেজাক খান বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এর বিরোধিতা করেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বিভিন্ন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিচারক বলেন, আমি আমার বিচারিক জীবনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আমার বিবেক আমাকে যেখানে নিয়ে যায় আমি সেখানেই যাবো। আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বিচারক বলেন, হাইকোর্ট যদি বলেন ৩২ জনের জেরা আবার নিতে হবে, তাহলেও আমি তা নেব। পরে ১৫ই ডিসেম্বর নতুন করে দিন ধার্য করেন বিচারক। খালেদা জিয়ার পক্ষে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লা মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ অন্য আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নেন। অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলায় ৩২ জনের দেয়া সাক্ষ্য বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হয়েছে, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। তাই আদালতের কাছে সময়ের আবেদন করা হয়। আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য ১৫ই ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভিসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আদালতে ছিলেন। আদালতের কার্যক্রম শেষে দুপুর পৌনে একটার দিকে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেন, এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা শপথবাক্য যথাযথভাবে পাঠ করে তাদের বক্তব্য দিয়েছেন কিনা- এমন বিষয়ে আমরা হাইকোর্টে আবেদন করেছি। আদালতকে বিষয়টি অবহিত করার পর আদালত আমাদের সময় দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা যদি উচ্চ আদালত থেকে কোনো আদেশ আনতে পারি আদালত সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, তারা (আসামিপক্ষের আইনজীবী) তুচ্ছ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত উচ্চ আদালতে যান। কিন্তু কোনো আদেশ বা স্থগিতাদেশ আনতে পারেন না। এভাবে মামলার বিচারকাজে তারা বার বার বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধভাবে লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ই আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ই জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চার জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯শে মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রমনা থানায় অপর মামলা করে দুদক। বর্তমানে এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।