ইপেপার । আজ সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

মিয়ানমারকে চাপে ফেলতে সরকারের নতুন কৌশল! বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে এমন সব দেশের মাধ্যমেই দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় বাংলাদেশ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:৫৬:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬
  • / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে

image_1743_267720সমীকরণ ডেস্ক: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপে ফেলতে নতুন কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের বিষয়টি মাথায় রেখেই এ কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর আওতায় আসিয়ান জোটের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ। জানা গেছে, মিয়ানমারের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে এমন সব দেশের মাধ্যমেই দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে প্রয়োজনে ভারত ও চীনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টিকেও মাথায় নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। কয়েক দিন আগে সরকারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জোরেসোরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কথা বলেন। কিন্তু এর পরেই এভাবে প্রকাশ্যে প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের মন্তব্যের ক্ষেত্রে কৌশলী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দীর্ঘমেয়াদে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অংশ হিসেবে এ অবস্থান নেয়া হয়েছে বলে সরকারের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেও সরকারের এ অবস্থান বলে জানাচ্ছে সূত্রগুলো। অতীতে দেশটিতে সরাসরি সেনা সমর্থিত সরকার থাকলেও বর্তমানে সেখানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকার বর্তমান। ফলে দীর্ঘমেয়াদে দেশটির সঙ্গে থাকা অমীমাংসিত বিভিন্ন ইস্যুতে সুসম্পর্ক গঠনের পথ যেন একেবারে বন্ধ না হয়ে যায় সে বিষয়টি মাথায় রেখে এ অবস্থান নেয়া হয়েছে বলে বলছে সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্বজুড়ে শরণার্থী সংকট ও পশ্চিমা দেশগুলোর নীরব অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের একার পক্ষে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বড় ধরনের কোনো অবস্থান নেয়া কষ্টকর বলে মনে করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। ফলে বাংলাদেশ চাইছে যেসব দেশের সঙ্গে মিয়ানমারের বড় ধরনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক মিয়ানমারের নেতা আং সান সু চিকে ‘যথেষ্ট হয়েছে’ বলে এরই মধ্যে হুশিয়ারি দিয়েছেন। তীব্র অসন্তোষ রয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যেও। গত বছর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বার্মিজ সেনাবাহিনীর যখন অভিযান পরিচালনা করে তখন প্রায় দুই হাজার শরণার্থী জীবন বাঁচাতে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেয়। বিগত এক বছর ধরে থাইল্যান্ড তাদের ফেরত পাঠানোর জোর চেষ্টা করেও মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো আপসে পৌঁছতে পারেনি। এখন আবারও দেশটির সেনা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে থাইল্যান্ডে যাওয়ার তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সেদেশে। এরই মধ্যে থাইল্যান্ড কয়েক দফা প্রতিবাদ জানিয়েছে মিয়ানমারের সরকারের কাছে।
এদিকে ইন্দোনেশিয়াতেও মিয়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে ও রোহিঙ্গাদের পক্ষে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। মিয়ানমারের বৃহত্তম এ তিন বাণিজ্যিক অংশীদারদের এমন মনোভাবকে কাজে লাগাতে চাইছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিতেই বেশি আগ্রহী বাংলাদেশ। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশের প্রধান দুই বাণিজ্যিক অংশীদার ও বন্ধুদেশ ভারত-চীনের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চায় বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক শাখার একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু হঠাৎ করে সমাধান করার মতো কোনো সমস্যা নয়। এ কারণে বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গা সমস্যার উৎসমূলে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। আর এটি বাংলাদেশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। পশ্চিমারাও এ বিষয়ে মিয়ানমারকে খুব বেশি চাপ দেবে বলে মনে হয় না। তবে মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ তিন বাণিজ্যিক অংশীদার মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া যেহেতু কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করছে তাই বাংলাদেশ এখন এ তিনটি দেশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশটির উৎসমূলে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য চাপ দিতে চায়।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের আরও দুই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ ভারত ও চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মিয়ানমারের চেয়েও অনেক ভালো। আমরা প্রয়োজন মনে করলে এ দুই দেশের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ থাকছে।’ তিনি বলেন, এর ফলে বিষয়টির দায় এককভাবে যেমন বাংলাদেশের ওপর বর্তাবে না তেমনই সমন্বিত চাপের ফলে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতেও বাধ্য হবে মিয়ানমার। শরণার্থীদের সঙ্গে বাংলাদেশের আচরণের বিষয়টি জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ। আমি যতটুকু জানি, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের সাথে সর্বোচ্চ মানবিক আচরণ করছে।’
এছাড়া দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব নিয়মিত বৈঠক ও আনুষ্ঠানিকতা ছিল তাতেও সায় দিচ্ছে না বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ এসব বৈঠকে অংশ নেয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল গত মাসের ২২-২৩ তারিখে। এ সময়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একটি বৈঠকের কথা ছিল। মিয়ানমার ওই বৈঠকটির জন্য নানা চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ তা কৌশলে এড়িয়ে গেছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের বৈঠক করার আগ্রহের কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখানো যে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক আছে। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের সে কৌশলকে এরই মধ্যে ব্যর্থ করে দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে পুলিশ চৌকিতে আক্রমণে ১২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। এরপরে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত এবং কমপক্ষে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা গৃহহারা হয়েছেন বলে মিয়ানমারের সরকারি হিসাবের তথ্যে বলা হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা এরই মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মিয়ানমারকে চাপে ফেলতে সরকারের নতুন কৌশল! বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে এমন সব দেশের মাধ্যমেই দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় বাংলাদেশ

আপলোড টাইম : ০১:৫৬:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

image_1743_267720সমীকরণ ডেস্ক: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপে ফেলতে নতুন কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের বিষয়টি মাথায় রেখেই এ কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর আওতায় আসিয়ান জোটের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ। জানা গেছে, মিয়ানমারের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে এমন সব দেশের মাধ্যমেই দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে প্রয়োজনে ভারত ও চীনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টিকেও মাথায় নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। কয়েক দিন আগে সরকারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জোরেসোরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কথা বলেন। কিন্তু এর পরেই এভাবে প্রকাশ্যে প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের মন্তব্যের ক্ষেত্রে কৌশলী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দীর্ঘমেয়াদে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অংশ হিসেবে এ অবস্থান নেয়া হয়েছে বলে সরকারের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেও সরকারের এ অবস্থান বলে জানাচ্ছে সূত্রগুলো। অতীতে দেশটিতে সরাসরি সেনা সমর্থিত সরকার থাকলেও বর্তমানে সেখানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকার বর্তমান। ফলে দীর্ঘমেয়াদে দেশটির সঙ্গে থাকা অমীমাংসিত বিভিন্ন ইস্যুতে সুসম্পর্ক গঠনের পথ যেন একেবারে বন্ধ না হয়ে যায় সে বিষয়টি মাথায় রেখে এ অবস্থান নেয়া হয়েছে বলে বলছে সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্বজুড়ে শরণার্থী সংকট ও পশ্চিমা দেশগুলোর নীরব অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের একার পক্ষে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বড় ধরনের কোনো অবস্থান নেয়া কষ্টকর বলে মনে করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। ফলে বাংলাদেশ চাইছে যেসব দেশের সঙ্গে মিয়ানমারের বড় ধরনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক মিয়ানমারের নেতা আং সান সু চিকে ‘যথেষ্ট হয়েছে’ বলে এরই মধ্যে হুশিয়ারি দিয়েছেন। তীব্র অসন্তোষ রয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যেও। গত বছর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বার্মিজ সেনাবাহিনীর যখন অভিযান পরিচালনা করে তখন প্রায় দুই হাজার শরণার্থী জীবন বাঁচাতে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেয়। বিগত এক বছর ধরে থাইল্যান্ড তাদের ফেরত পাঠানোর জোর চেষ্টা করেও মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো আপসে পৌঁছতে পারেনি। এখন আবারও দেশটির সেনা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে থাইল্যান্ডে যাওয়ার তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সেদেশে। এরই মধ্যে থাইল্যান্ড কয়েক দফা প্রতিবাদ জানিয়েছে মিয়ানমারের সরকারের কাছে।
এদিকে ইন্দোনেশিয়াতেও মিয়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে ও রোহিঙ্গাদের পক্ষে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। মিয়ানমারের বৃহত্তম এ তিন বাণিজ্যিক অংশীদারদের এমন মনোভাবকে কাজে লাগাতে চাইছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিতেই বেশি আগ্রহী বাংলাদেশ। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশের প্রধান দুই বাণিজ্যিক অংশীদার ও বন্ধুদেশ ভারত-চীনের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চায় বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক শাখার একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু হঠাৎ করে সমাধান করার মতো কোনো সমস্যা নয়। এ কারণে বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গা সমস্যার উৎসমূলে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। আর এটি বাংলাদেশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। পশ্চিমারাও এ বিষয়ে মিয়ানমারকে খুব বেশি চাপ দেবে বলে মনে হয় না। তবে মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ তিন বাণিজ্যিক অংশীদার মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া যেহেতু কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করছে তাই বাংলাদেশ এখন এ তিনটি দেশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশটির উৎসমূলে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য চাপ দিতে চায়।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের আরও দুই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ ভারত ও চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মিয়ানমারের চেয়েও অনেক ভালো। আমরা প্রয়োজন মনে করলে এ দুই দেশের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ থাকছে।’ তিনি বলেন, এর ফলে বিষয়টির দায় এককভাবে যেমন বাংলাদেশের ওপর বর্তাবে না তেমনই সমন্বিত চাপের ফলে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতেও বাধ্য হবে মিয়ানমার। শরণার্থীদের সঙ্গে বাংলাদেশের আচরণের বিষয়টি জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ। আমি যতটুকু জানি, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের সাথে সর্বোচ্চ মানবিক আচরণ করছে।’
এছাড়া দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব নিয়মিত বৈঠক ও আনুষ্ঠানিকতা ছিল তাতেও সায় দিচ্ছে না বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ এসব বৈঠকে অংশ নেয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল গত মাসের ২২-২৩ তারিখে। এ সময়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একটি বৈঠকের কথা ছিল। মিয়ানমার ওই বৈঠকটির জন্য নানা চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ তা কৌশলে এড়িয়ে গেছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের বৈঠক করার আগ্রহের কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখানো যে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক আছে। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের সে কৌশলকে এরই মধ্যে ব্যর্থ করে দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে পুলিশ চৌকিতে আক্রমণে ১২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। এরপরে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত এবং কমপক্ষে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা গৃহহারা হয়েছেন বলে মিয়ানমারের সরকারি হিসাবের তথ্যে বলা হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা এরই মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।