ইপেপার । আজ বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

বৃদ্ধ পিতাকে পাগল বানিয়ে তথাকথিত প্রত্যয় নামক পাগলা ঘরে আটক রাখার অভিযোগ! উদ্ধার শেষে মামলা : নেপথ্য নায়ক ছেলে জাহিদ লাপাত্তা : তদন্তে নেমেছে পুলিশ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:৩৮:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬
  • / ৫৭১ বার পড়া হয়েছে

islam-pic-2

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেলা তখন আনুমানিক ১টা। চুয়াডাঙ্গার সরোগঞ্জ বাজারের রাশেদ-সু ষ্টোর। ছেলে জাহিদ (২৭) ও পিতা আমিরুল ওরফে ইসলাম (৬৪) একই সাথে বসে ছিলো। হঠাৎ ৫/৬জন অ-পরিচিত লোক এসে কোন প্রকার জিজ্ঞাসা ছাড়ায় ইসলাম কে ধরে নিয়ে মাইক্রো গাড়িতে তোলে। ছেলে জাহিদ নিরুত্তাপ তখনও বসা। এমন বক্তব্য প্রত্যক্ষ দর্শিদের। কেবা কাহারা কোথায় নিয়ে গেলো তার কোন জবাব ছিলোনা। ঘটনাটি সম্পূর্ন ফিল্মি ষ্টাইলের মতই। সরোজমিন প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদরের সাধুহাটী ইউনিয়নের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের মৃত ইব্রাহিম বিশ্বাসের ছেলে আমিরুল ওরফে ইসলাম (৬৪) ও ছেলে জাহিদ (২৭) গত ২২ নভেম্বর আনুমনিক বেলা ১টার সময় চুয়াডাঙ্গা সদরের সরোজগঞ্জ বাজারের রাশেদ-সু ষ্টোর দোকানে বসে ছিলো। এর পর অজ্ঞাত পরিচয়ের কিছু লোকজন এসে ছেলে জাহিদ-এর সামনে থেকে পিতা ইসলাম কে মাইক্রো গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে ছেলে জাহিদের কোন প্রকার জিজ্ঞসা ছিলোনা। বরং নিজ এলাকায় এমন কথা ছড়ানো হলো কেবা কাহারা নিয়ে গেছে তা জানার বাইরে। এমন সূত্রের সন্ধানে পর দিন ২৩ নভেম্বর ইসলামের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয় সমীকরণ সংবাদিক। শুরু হয় সত্যের সত্যতা উদঘাটন। ইসলামের এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়াই প্রতিবেশিদের মাঝে রিতিমত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম নেয়। অবশেষে ছেলে জাহিদ মুখ খুলতে বাধ্য হয় পিতাকে কিভাবে কোথায় রাখা হয়েছে। বিষয়টি ততক্ষনে পুলিশ প্রশাসনের গোচরে চলে যায়। শুরু হয় ইসলাম উদ্ধারের তৎপরতা। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ হানা দেয় তথা কথিত মাদক নিরাময় প্রত্যয় পূর্নবাসন কেন্দ্র নামের পাগলা ঘরে। সেখানে কোন প্রকার ইস্যু ছাড়াই ইসলাম কে আটক রাখা হয়। না সে মাদক সেবী, না সে পাগল। এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি তদন্ত গোলাম মোহাম্মদ গতকাল  রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামে ঘটনার তদন্তে আসে। এ সময় উদ্ধার হওয়া ইসলাম বলেন, আমাকে অন্ধ কুঠিরের মধ্যে রেখে অনেক প্রকার মানুষিক নির্যাতন করেছে। আমার কাছ থেকে জমি লিখে নেওয়ার জন্য সকল কাগজ পত্র তৈরী করা হয়েছিলো বলেও জানান। এ সব ঘটনায় রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রাম ও ইসলামের প্রতিবেশিরা জানায়, ইসলাম বরাবরই বাউন্ডেলে প্রকৃতির। খুব কম সময় বাড়িতে অবস্থান করেন। পারিবারিক কলহ আছে বৈকি। তবে সে কখনও মাদক সেবী নয় বলে জানায় একাধিক ব্যাক্তি। কথা হয় সাধুহাটী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, সাবেক চেয়ারম্যান বাকের আলী ও বর্তমান চেয়ারম্যান কাজি নাজির উদ্দীনের সঙ্গে। এরা সবাই অভিন্ন ভাষায় আমিরুল ইসলামের উপর এভাবে নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে বলেন, পারিবারিক কলহ থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে আইকে তালু বন্দি ভাবলে সেটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্যদিকে মাদকাসক্ত পূর্নবাসন প্রত্যয়ের কর্মকান্ডের প্রতিও ধিক্কার জানিয়েছে এলাকার সচেতন মহল। মানুষকে অমানুষের মত ধরে নিয়ে আসা, কোন প্রকার ডাক্তারী ছাড়াই চিকিৎসা প্রদান, আদৌও সরকারী অনুমতি আছে কিনা, এ সব ছাড়াও প্রত্যয়ের শর্ত স্বরূপ যে সব কাগজ পত্র রয়েছে তা মানুষ কে রিতিমত হতবাক করে দেওয়ার মত ঘটনা। যে কারণে এ সব কমকান্ড আশু বন্ধ হওয়া দরকার বলেও অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। সব মিলিয়ে আমিরুল ইসলাম উদ্ধার হওয়ার পর পরি আইনগত ভাবে ছেলে জাহিদ কে আসামী করে মামালা দয়ের করেছেন। বর্তমান জাহিদ পলাতক রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তে আসা ওসি তদন্ত গোলাম মোহাম্মদ বলেন, আমাদের প্রত্যেকেরি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া দরকার। আমিরুল ইসলাম কে যেভাবে এবং যেখান থেকে উদ্ধার করেছি তা বর্বর যুগকেও হার মানায়। তিনি আরো জানান, আইন সর্বদায় চলবে তার নিজের পথে। এক্ষেত্রেও কোনরূপ ব্যত্যয় ঘটবেনা বলেও আশা প্রকাশ করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

বৃদ্ধ পিতাকে পাগল বানিয়ে তথাকথিত প্রত্যয় নামক পাগলা ঘরে আটক রাখার অভিযোগ! উদ্ধার শেষে মামলা : নেপথ্য নায়ক ছেলে জাহিদ লাপাত্তা : তদন্তে নেমেছে পুলিশ

আপলোড টাইম : ০১:৩৮:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

islam-pic-2

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেলা তখন আনুমানিক ১টা। চুয়াডাঙ্গার সরোগঞ্জ বাজারের রাশেদ-সু ষ্টোর। ছেলে জাহিদ (২৭) ও পিতা আমিরুল ওরফে ইসলাম (৬৪) একই সাথে বসে ছিলো। হঠাৎ ৫/৬জন অ-পরিচিত লোক এসে কোন প্রকার জিজ্ঞাসা ছাড়ায় ইসলাম কে ধরে নিয়ে মাইক্রো গাড়িতে তোলে। ছেলে জাহিদ নিরুত্তাপ তখনও বসা। এমন বক্তব্য প্রত্যক্ষ দর্শিদের। কেবা কাহারা কোথায় নিয়ে গেলো তার কোন জবাব ছিলোনা। ঘটনাটি সম্পূর্ন ফিল্মি ষ্টাইলের মতই। সরোজমিন প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদরের সাধুহাটী ইউনিয়নের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের মৃত ইব্রাহিম বিশ্বাসের ছেলে আমিরুল ওরফে ইসলাম (৬৪) ও ছেলে জাহিদ (২৭) গত ২২ নভেম্বর আনুমনিক বেলা ১টার সময় চুয়াডাঙ্গা সদরের সরোজগঞ্জ বাজারের রাশেদ-সু ষ্টোর দোকানে বসে ছিলো। এর পর অজ্ঞাত পরিচয়ের কিছু লোকজন এসে ছেলে জাহিদ-এর সামনে থেকে পিতা ইসলাম কে মাইক্রো গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে ছেলে জাহিদের কোন প্রকার জিজ্ঞসা ছিলোনা। বরং নিজ এলাকায় এমন কথা ছড়ানো হলো কেবা কাহারা নিয়ে গেছে তা জানার বাইরে। এমন সূত্রের সন্ধানে পর দিন ২৩ নভেম্বর ইসলামের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয় সমীকরণ সংবাদিক। শুরু হয় সত্যের সত্যতা উদঘাটন। ইসলামের এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়াই প্রতিবেশিদের মাঝে রিতিমত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম নেয়। অবশেষে ছেলে জাহিদ মুখ খুলতে বাধ্য হয় পিতাকে কিভাবে কোথায় রাখা হয়েছে। বিষয়টি ততক্ষনে পুলিশ প্রশাসনের গোচরে চলে যায়। শুরু হয় ইসলাম উদ্ধারের তৎপরতা। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ হানা দেয় তথা কথিত মাদক নিরাময় প্রত্যয় পূর্নবাসন কেন্দ্র নামের পাগলা ঘরে। সেখানে কোন প্রকার ইস্যু ছাড়াই ইসলাম কে আটক রাখা হয়। না সে মাদক সেবী, না সে পাগল। এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি তদন্ত গোলাম মোহাম্মদ গতকাল  রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামে ঘটনার তদন্তে আসে। এ সময় উদ্ধার হওয়া ইসলাম বলেন, আমাকে অন্ধ কুঠিরের মধ্যে রেখে অনেক প্রকার মানুষিক নির্যাতন করেছে। আমার কাছ থেকে জমি লিখে নেওয়ার জন্য সকল কাগজ পত্র তৈরী করা হয়েছিলো বলেও জানান। এ সব ঘটনায় রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রাম ও ইসলামের প্রতিবেশিরা জানায়, ইসলাম বরাবরই বাউন্ডেলে প্রকৃতির। খুব কম সময় বাড়িতে অবস্থান করেন। পারিবারিক কলহ আছে বৈকি। তবে সে কখনও মাদক সেবী নয় বলে জানায় একাধিক ব্যাক্তি। কথা হয় সাধুহাটী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, সাবেক চেয়ারম্যান বাকের আলী ও বর্তমান চেয়ারম্যান কাজি নাজির উদ্দীনের সঙ্গে। এরা সবাই অভিন্ন ভাষায় আমিরুল ইসলামের উপর এভাবে নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে বলেন, পারিবারিক কলহ থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে আইকে তালু বন্দি ভাবলে সেটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্যদিকে মাদকাসক্ত পূর্নবাসন প্রত্যয়ের কর্মকান্ডের প্রতিও ধিক্কার জানিয়েছে এলাকার সচেতন মহল। মানুষকে অমানুষের মত ধরে নিয়ে আসা, কোন প্রকার ডাক্তারী ছাড়াই চিকিৎসা প্রদান, আদৌও সরকারী অনুমতি আছে কিনা, এ সব ছাড়াও প্রত্যয়ের শর্ত স্বরূপ যে সব কাগজ পত্র রয়েছে তা মানুষ কে রিতিমত হতবাক করে দেওয়ার মত ঘটনা। যে কারণে এ সব কমকান্ড আশু বন্ধ হওয়া দরকার বলেও অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। সব মিলিয়ে আমিরুল ইসলাম উদ্ধার হওয়ার পর পরি আইনগত ভাবে ছেলে জাহিদ কে আসামী করে মামালা দয়ের করেছেন। বর্তমান জাহিদ পলাতক রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তে আসা ওসি তদন্ত গোলাম মোহাম্মদ বলেন, আমাদের প্রত্যেকেরি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া দরকার। আমিরুল ইসলাম কে যেভাবে এবং যেখান থেকে উদ্ধার করেছি তা বর্বর যুগকেও হার মানায়। তিনি আরো জানান, আইন সর্বদায় চলবে তার নিজের পথে। এক্ষেত্রেও কোনরূপ ব্যত্যয় ঘটবেনা বলেও আশা প্রকাশ করেন।