ঝিনাইদহের বৃদ্ধ বাবাকে নেশাগ্রস্থ সাজিয়ে জোরপূর্বক চুয়াডাঙ্গায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ পুলিশি অভিযানে প্রত্যয় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালকসহ গ্রেফতার ২
- আপলোড টাইম : ১২:৩৯:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০১৬
- / ৩০৪ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার প্রত্যয় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় মাদকাসক্ত সাজিয়ে আটকে রাখা আমিরুলকে উদ্ধার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে ওই কেন্দ্রে অভিযান চালায় সদর থানা পুলিশ। মাদকাসক্ত না হয়েও বৃদ্ধ আমিরুলকে জোরপূর্বক ওই কেন্দ্রে আটকে রাখার অভিযোগে পরিচালক আব্দুল আলিম ও প্রোগ্রামার রাশিদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ।
ঝিনাইদহের সাধুহাটি ইউনিয়নের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের মৃত ইব্রাহীম বিশ্বাসের ছেলে আমিরুল ইসলাম জানান, গত ২২ নভেম্বর বেলা ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বাজারে চায়ের দোকানে বসেছিলেন। তার ছেলে জাহিদুল ইসলামসহ আকস্মিকভাবে ৪/৫ জন এসে তার নাম জিজ্ঞেস করেই মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এসময় কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তারা কোন কথা বলেনি। ছেলের উপস্থিতিতে বাবাকে মাইক্রোবাসে তুলে যাওয়ায় বাজারের কেউই তেমন কিছু বলেননি। পরে নিয়ে আসা হয় জাফরপুরস্থ ৬ বিজিবি সদর দপ্তরের ১ নং গেটের সামনে মাদকাসক্ত পূণর্বাসন কেন্দ্র প্রত্যয়ে। তারপর থেকেই আমিরুলের ওপর চালানো হয়েছে মানসিক নির্যাতন। ছেলের নামে জমি লিখে দেয়ার জন্যও চলতে থাকে নির্যাতন। একপর্যায়ে জমি লিখে নেয়ার প্রক্রিয়াও করে তারা।
তিনি আরও জানান, প্রায় তিন বছর ধরে তার ওপর নির্যাতন করে আসছিলো তারই ছেলে জাহিদুল ইসলাম। প্রায়ই তাকে মারধরও করতো। একপর্যায়ে বছর দেড়েক আগে জাহিদুলকে মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দেন আমিরুল। মাসখানেক আগে দেশে ফিরে বাবার নামে থাকা ৮ বিঘা জমি নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকে জাহিদুল। কিছুদিন পর চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরের প্রত্যয় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের লোকজনের যোগসাজসে আমিরুলকে মাদকাসক্ত সাজিয়ে সেখানে আটকে রাখে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গত ২২ নভেম্বর ইসলাম উদ্দীন বাজার করতে চুয়াডাঙ্গা উপজেলার সরোজগঞ্জ হাটে যান। সাথে তার ছেলে জাহিদুল ইসলাম ছিলেন। গ্রামবাসির ভাষ্যমতে সরোজগঞ্জ বাজারের রাশিদুল ইসলামের জুতার দোকানে বসে থাকা অবস্থায় ৭/৮ জন যুবক ফিল্মি ষ্টাইলে ইসলাম উদ্দীনকে বেধড়ক পিটিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে চুয়াডাঙ্গা শহরের দিকে নিয়ে যান। বাড়ি ফিরে জাহিদুল ইসলাম প্রচার করে তার বাবাকে কে বা করা অপহরণ করে নিয়ে গেছে। গ্রামবাসির চাপে ৪/৫ দিন পর ছেলে জাহিদুল জানায় তার বাবা মাদকাসক্ত। তাই চুয়াডাঙ্গার প্রত্যয় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, টাকার বিনিময়ে চুয়াডাঙ্গার প্রত্যায় মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন ভাল মানুষকেও সন্ত্রাসী কায়দায় তুলে নিয়ে সেখানে আটকে রাখে। বয়োবৃদ্ধ ইসলাম উদ্দীনের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেম বিশ্বাস জানান, আমরা ইসলাম উদ্দীনকে চিনি। তিনি কখনোই মাদক সেবী ছিলেন না। পরিবারিক বিরোধর কারণে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাকে মাদকাসক্ত সাজানো হয়েছে। সাধুহাটী ইউনিয়নের আরেক সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, ইসলাম উদ্দীন ষড়যন্ত্রের শিকার। প্রশাসনের উচিৎ বিষয়টি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তিনি ইসলাম উদ্দীনকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) গোলাম মোহাম্মদ জানান, স্বাভাবিক মানুষকে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতনের গোপন সংবাদ পেয়ে প্রত্যয় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে অভিযান চালায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ। এসময় নির্যাতনের শিকার ঝিনাইদহের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের আমিরুল ইসলামকে উদ্ধার করা হয়। একই সাথে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জাফরপুরের আব্দুল আলিম ও প্রোগ্রামার দশমাইল বাজারের রাশিদুল ইসলামকে আটক করে থানায় নেয়া হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোজাম্মেল হক জানান, এবিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।