আইনশৃংখলা কমিটির সভায় অবৈধ সমিতি ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি হরিণাকুন্ডুতে দলিল লেখক সমিতির নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ
- আপলোড টাইম : ০৬:০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৬
- / ৫২২ বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহ অফিস: হরিণাকুন্ডু সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে কথিত সেরেস্তা খরচের নামে দলিল লেখক সমিতির বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে। বছরের পর বছর এই চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন জমির মালিকরা। হরিণাকুন্ডু আইনশৃংখলা কমিটির সভায় সমিতি ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি। উপজেলা প্রশাসন ও হরিণাকুন্ডু সাব রেজিষ্ট্রার এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। অন্যদিকে দরিদ্র কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। জমি কেনাবেচা করতে অনেকেই অনিহা প্রকাশ করছেন। ফলে জমি রেজিষ্ট্রির হারও দিনকে দিন কমছে। হরিণাকুন্ডু আইনশৃংখলা কমিটির এক সদস্য জানান, গত ৩মাস ধরে বেআইনীভাবে গঠিত এই সমিতি ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় হরিণাকুন্ডুর প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ সমিতি ভেঙ্গে দেওয়ার পক্ষে সাঁই দেন। কিন্তু সাব রেজিষ্ট্রার হাসানুজ্জামান এ বিষয়ে কোন কঠোর সিদ্ধান্ত নেন নি। কারণ তিনিও এই সিমিতির সুবিধাভোগী বলে কৃষকরা অভিযোগ করেন। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, দলিল লেখকদের এই কথিত সমিতি প্রতি বছরে কমপক্ষে ৫০ লাখের বেশি টাকা আয় করে থাকে। সমিতির সভাপতি হিসেবে ওয়াজেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিশারত আলী দায়িত্ব পালন করছেন। মুলত তারাই টাকা ভাগাভাগি করার দায়িত্বে রয়েছে। সরকারী একটি সুত্র জানায়, নিয়মানুযায়ী একটি দলিল রেজিস্ট্রি করতে সরকারকে পৌরসভা এলাকায় প্রতি লাখে সাড়ে ১১ হাজার ও পৌরসভার বাইরে সাড়ে ৯ হাজার টাকা করে ফি দিতে হয়। হরিণাকুন্ডুতে বেআইনীভাবে গঠিত এই সমিতি সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে পৌরসভা এলাকায় প্রতি লাখে ১৬ হাজার ও ইউনিয়নে নিচ্ছে ১৫ হাজার। প্রতিটি দলিল বাবদ হাজার হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। রসিদ বিহীন এই টাকা কোনো ব্যাংক একাউন্টে রাখা হয় না এবং সাধারণ সদস্যদেরও কোনো হিসাব দেয়া হয় না। অফিসকে একটি ঘুষের অংশ দিয়ে বাকি টাকা নিজেরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া হয়। কয়েকজন দলিল লেখক জানান, আমাদের কাছ থেকে সেরেস্তা খরচ আদায় করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন খাতে দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা লোপাট করা হয়। অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে নিরুপায় হয়েই এ টাকা দিতে হচ্ছে জমির মালিকদের। লেখক সমিতির এ আইন কেউ না মেনে চললে জমি রেজিষ্ট্রি করা হয় না। যা ভোক্তা সংরক্ষন আইনের পরিপন্থি। একজন আইনজ্ঞ জানান, ভোক্তা সংরক্ষন আইনে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ইচ্ছা করলে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে জেল জরিমানা করতে পারেন। কিন্তু হরিণাকুন্ডুর ক্ষেত্রে তা করা হচ্ছে। কয়েক যুগ ধরে দলিল লেখকদের এই চাঁদাবাজীতে জমির মালিকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এ ব্যাপারে হরিণাকুন্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান এড এমএ মজিদ জানান, হরিণাকুন্ডু আইনশৃংখলা কমিটির সভায় সমিতি ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাবরেজিষ্ট্রারকে। কিন্তু তিনি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন নি। বিষয়টি নিয়ে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সভাপতি ওয়াজেদ আলী জমির মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা তো কোনো সরকারি ভাতা পাই না। তাই এটি সবাই মিলেই এটা গ্রহন করি। এছাড়া এ টাকা অসহায়-অস্বচ্ছল দলিল লেখকদের মাঝে বন্টন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিয়ে থাকি।