ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

জেলা পরিষদ নির্বাচন : স্বস্তির মধ্যেও অস্বস্তি শাসকদলে বিরোধীদের অনাগ্রহ এবং দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিভিন্ন জেলায় বিদ্রোহ প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা ভাবিয়ে তুলছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:২৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৬
  • / ৩২২ বার পড়া হয়েছে

rgtr

সমীকরণ ডেস্ক: আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে এককপ্রার্থী নিশ্চিত করে একচেটিয়া জয়ের ছক কষেও দুশ্চিন্তায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, শরিক ও সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোর ততই অনাগ্রহ বিপাকে ফেলছে ক্ষমতাসীন দলটিকে। পাশাপাশি কেন্দ্র থেকে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার পরই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য বিভিন্ন জেলার প্রার্থীদের বিদ্রোহ ঘোষণার বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলছে হাইকমান্ড নেতাদের। তাদের শঙ্কা, সব দলের অংশগ্রহণ না থাকলে নির্বাচন আমেজ ও উৎসবপূর্ণ হবে না। যা বিদ্রোহী প্রার্থীদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে দলীয় কোন্দল বাড়িয়ে দিতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, জেলা পরিষদের অধিকাংশ ভোটার আওয়ামী লীগ মনোনীত জনপ্রতিনিধি। তাই ভিন্ন দলে প্রার্থী জেতার সম্ভাবনা একেবারেই কম। নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে হবে। দূরদর্শী দৃষ্টিতে চিন্তা করলে এক তরফাভাবে সম্পন্ন এই নির্বাচন ক্ষমতাসীন দলটির জন্য সুখকর নয়। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন ৫ জানুয়ারি পরবর্তী সময়ের মতোই গণতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে বলে অভিমত তাদের।
তথ্যমতে, পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে প্রতিটি জেলা পরিষদে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য ও পাঁচজন নারী (সংরক্ষিত আসন) সদস্য নির্বাচিত হবেন। বিধিমতে, স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জেলা পরিষদের ভোটার হবেন। এ হিসেবে স্থানীয় সরকারের চারটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৫ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্বাচকম-লীর সদস্য হিসেবে এই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদটি দলীয় ভিত্তিতে হলেও জেলা পরিষদের তিনটি পদেই নির্বাচন হবে নির্দলীয়। এ হিসেবে কোনো রাজনৈতিক দলের সরাসরি এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। তবে তারা যেকোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারবে। মূলত আইনের এ ধারার আলোকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন।
জানা গেছে, শাসকদলের প্রার্থীর কাছে পরাজয় নিশ্চিত ভেবে জাতীয় পার্টি ও সিপিবির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই নির্বাচন বয়কটের প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে। জোটগতভাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও এককভাবে নির্বাচন না করার কথা জানিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে সরকারে থাকা ১৪ দলের শীর্ষ নেতারাও তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। স্বভাবতই প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে ফের একতরফা জয়ের ছকে পড়তে যাচ্ছেন ক্ষমতায় আসা দলটির প্রার্থীরা। যদিও শাসকদের কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের জন্য একক প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে শেষ মুহূর্তে এসে দলীয় বিদ্রোহীদের ছাড় দেয়া হতে পারে। যা এখন পর্যন্ত ভাবনার পর্যায়ে আছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জেলা পরিষদে দলীয়ভাবে একক প্রার্থী নির্ধারণের চূড়ান্ত করা হয়েছে। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে জনপ্রিয় ও ত্যাগীদের সমর্থন জানানো হয়েছে। তবে দলের বাইরে গিয়ে কেউ প্রার্থিতা করতে চাইলে তাদের ব্যাপারে দলই সিদ্ধান্ত দেবে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে সমর্থন পেতে ৬১ জেলা থেকে মোট ৭০২টি আবেদন পড়েছিল। কোনো কোনো জেলা থেকে ১০ থেকে ১২টি আবেদন পড়ে। এখনও ৬১ জেলার অধিকাংশ স্থানেই স্থানীয়ভাবে দলীয় সমর্থন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেন্দ্রের মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার হুশিয়ারি এসেছে অনেক স্থান থেকে। নাটোর জেলা পরিষদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এখন পর্যন্ত মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের ১৭ নেতাকর্মী। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও মাঠে থাকার আশায় অনেকেই ধরণা দিচ্ছেন স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। এরই মধ্যে মাঠে নেমে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন অনেকেই। অনেকে আবার ব্যানার ফেস্টুনের মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন চেয়ারম্যান প্রার্থিতা। একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে মাদারীপুর জেলা পরিষদকে ঘিরে। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মোট ৬জন প্রার্থী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগ। পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীকে নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মনোনয়ন বঞ্চিত দলের জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যেই স্বতন্ত্র পদে নির্বাচনের ঘোষণাও দিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন স্বপন। তিনি জানান, গত ৬ মাসে জেলার ১৬ উপজেলায় গণসংযোগ করে নেতাকর্মী ও ভোটারদের যে সমর্থন পেয়েছেন, তাদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবশ্যই তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।ৎ
এর বাইরে পাবনা, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুরসহ অধিকাংশ জেলাতেই ততোধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কাজ করছেন। নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্থানীয়ভাবে তার অবস্থান ভালো। দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশা করেছিলেন। না পাওয়ায় স্বতন্ত্র হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া ১৪ দলের শরিক ও সরকারের বাইরে বিভিন্ন দলের অনাগ্রহের বিষয়টি নিয়েই চিন্তিত আওয়ামী লীগ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদের এই নির্বাচনে মনোনয়ন জমাদানে আর মাত্র চারদিন হাতে থাকলেও আওয়ামী লীগ ভিন্ন অন্য কোনো দলের তৎপরতা এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।
জানা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধান অনুযায়ী এসব পদ প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। কিন্তু এখানে সেটা হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, সরকারি দল জোরজবরদস্তি করে জেলা পরিষদের সব ভোটারকে নিজেদের করে নিয়েছে। কাজেই এখানে নির্বাচন করে কোনো ফল আসবে না।
স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সম্প্রতি এক সভায় দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচন ‘অর্থহীন’। এজন্য জাতীয় পার্টি এই নির্বাচনে যাবে না। এ সময় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বিধিসম্মত, বাস্তবসম্মত নির্বাচন কমিশন গঠন করার দাবি তোলেন তিনি।
আর সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ এক বিবৃতিতে পরোক্ষ ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেন। নেতৃদ্বয় বলেন, নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবেন না। বরং সিপিবি স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রায়নের জন্য তার দীর্ঘদিনের লড়াইকে বেগবান করবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকারের অংশ। স্থানীয় সংস্থা হিসেবে তৃণমূলের জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য জেলা পরিষদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। জনগণের সরাসরি প্রত্যক্ষ ভোটেই জেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু যে বিধি-বিধানের ভিত্তিতে জেলা পরিষদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা আইয়ুবি আমলের পরোক্ষ ভোটের ‘বিডি’ তথা ‘মৌলিক গণতান্ত্রিক’ নির্বাচনের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
ক্ষমতাসীন জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর ভা-ারী বলেছেন, নির্বাচনে দলীয়ভাবে কাউকে সমর্থন দেয়ার সুযোগ কোথায়? শরিক দল হিসেবে ক্ষমতাসীন দল সমথির্ত প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার চিন্তা রয়েছে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, বর্তমানে দলের সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত আছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এই মুহূর্তে চিন্তা নেই। আর এখন পর্যন্ত দলের কেউ প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখাননি।
এসব বিষয়ে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগ বা সরকার যাকে চাইবে, তিনিই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হবেন। সে হিসেবে এটা প্রহসনের নির্বাচন, একতরফা নির্বাচন। তিনি বলেন, যেহেতু বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগের, তাই তাদের প্রার্থীরই জয় নিশ্চিত। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, নিবাচন কমিশন আগামী ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীরা ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৩ ও ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১১ ডিসেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১২ ডিসেম্বর।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

জেলা পরিষদ নির্বাচন : স্বস্তির মধ্যেও অস্বস্তি শাসকদলে বিরোধীদের অনাগ্রহ এবং দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিভিন্ন জেলায় বিদ্রোহ প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা ভাবিয়ে তুলছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের

আপলোড টাইম : ০৬:২৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

rgtr

সমীকরণ ডেস্ক: আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে এককপ্রার্থী নিশ্চিত করে একচেটিয়া জয়ের ছক কষেও দুশ্চিন্তায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, শরিক ও সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোর ততই অনাগ্রহ বিপাকে ফেলছে ক্ষমতাসীন দলটিকে। পাশাপাশি কেন্দ্র থেকে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার পরই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য বিভিন্ন জেলার প্রার্থীদের বিদ্রোহ ঘোষণার বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলছে হাইকমান্ড নেতাদের। তাদের শঙ্কা, সব দলের অংশগ্রহণ না থাকলে নির্বাচন আমেজ ও উৎসবপূর্ণ হবে না। যা বিদ্রোহী প্রার্থীদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে দলীয় কোন্দল বাড়িয়ে দিতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, জেলা পরিষদের অধিকাংশ ভোটার আওয়ামী লীগ মনোনীত জনপ্রতিনিধি। তাই ভিন্ন দলে প্রার্থী জেতার সম্ভাবনা একেবারেই কম। নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে হবে। দূরদর্শী দৃষ্টিতে চিন্তা করলে এক তরফাভাবে সম্পন্ন এই নির্বাচন ক্ষমতাসীন দলটির জন্য সুখকর নয়। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন ৫ জানুয়ারি পরবর্তী সময়ের মতোই গণতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে বলে অভিমত তাদের।
তথ্যমতে, পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে প্রতিটি জেলা পরিষদে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য ও পাঁচজন নারী (সংরক্ষিত আসন) সদস্য নির্বাচিত হবেন। বিধিমতে, স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জেলা পরিষদের ভোটার হবেন। এ হিসেবে স্থানীয় সরকারের চারটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৫ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্বাচকম-লীর সদস্য হিসেবে এই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদটি দলীয় ভিত্তিতে হলেও জেলা পরিষদের তিনটি পদেই নির্বাচন হবে নির্দলীয়। এ হিসেবে কোনো রাজনৈতিক দলের সরাসরি এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। তবে তারা যেকোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারবে। মূলত আইনের এ ধারার আলোকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন।
জানা গেছে, শাসকদলের প্রার্থীর কাছে পরাজয় নিশ্চিত ভেবে জাতীয় পার্টি ও সিপিবির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই নির্বাচন বয়কটের প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে। জোটগতভাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও এককভাবে নির্বাচন না করার কথা জানিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে সরকারে থাকা ১৪ দলের শীর্ষ নেতারাও তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। স্বভাবতই প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে ফের একতরফা জয়ের ছকে পড়তে যাচ্ছেন ক্ষমতায় আসা দলটির প্রার্থীরা। যদিও শাসকদের কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের জন্য একক প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে শেষ মুহূর্তে এসে দলীয় বিদ্রোহীদের ছাড় দেয়া হতে পারে। যা এখন পর্যন্ত ভাবনার পর্যায়ে আছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জেলা পরিষদে দলীয়ভাবে একক প্রার্থী নির্ধারণের চূড়ান্ত করা হয়েছে। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে জনপ্রিয় ও ত্যাগীদের সমর্থন জানানো হয়েছে। তবে দলের বাইরে গিয়ে কেউ প্রার্থিতা করতে চাইলে তাদের ব্যাপারে দলই সিদ্ধান্ত দেবে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে সমর্থন পেতে ৬১ জেলা থেকে মোট ৭০২টি আবেদন পড়েছিল। কোনো কোনো জেলা থেকে ১০ থেকে ১২টি আবেদন পড়ে। এখনও ৬১ জেলার অধিকাংশ স্থানেই স্থানীয়ভাবে দলীয় সমর্থন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেন্দ্রের মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার হুশিয়ারি এসেছে অনেক স্থান থেকে। নাটোর জেলা পরিষদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এখন পর্যন্ত মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের ১৭ নেতাকর্মী। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও মাঠে থাকার আশায় অনেকেই ধরণা দিচ্ছেন স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। এরই মধ্যে মাঠে নেমে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন অনেকেই। অনেকে আবার ব্যানার ফেস্টুনের মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন চেয়ারম্যান প্রার্থিতা। একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে মাদারীপুর জেলা পরিষদকে ঘিরে। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মোট ৬জন প্রার্থী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগ। পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীকে নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মনোনয়ন বঞ্চিত দলের জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যেই স্বতন্ত্র পদে নির্বাচনের ঘোষণাও দিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন স্বপন। তিনি জানান, গত ৬ মাসে জেলার ১৬ উপজেলায় গণসংযোগ করে নেতাকর্মী ও ভোটারদের যে সমর্থন পেয়েছেন, তাদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবশ্যই তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।ৎ
এর বাইরে পাবনা, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুরসহ অধিকাংশ জেলাতেই ততোধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কাজ করছেন। নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্থানীয়ভাবে তার অবস্থান ভালো। দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশা করেছিলেন। না পাওয়ায় স্বতন্ত্র হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া ১৪ দলের শরিক ও সরকারের বাইরে বিভিন্ন দলের অনাগ্রহের বিষয়টি নিয়েই চিন্তিত আওয়ামী লীগ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদের এই নির্বাচনে মনোনয়ন জমাদানে আর মাত্র চারদিন হাতে থাকলেও আওয়ামী লীগ ভিন্ন অন্য কোনো দলের তৎপরতা এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।
জানা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধান অনুযায়ী এসব পদ প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। কিন্তু এখানে সেটা হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, সরকারি দল জোরজবরদস্তি করে জেলা পরিষদের সব ভোটারকে নিজেদের করে নিয়েছে। কাজেই এখানে নির্বাচন করে কোনো ফল আসবে না।
স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সম্প্রতি এক সভায় দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচন ‘অর্থহীন’। এজন্য জাতীয় পার্টি এই নির্বাচনে যাবে না। এ সময় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বিধিসম্মত, বাস্তবসম্মত নির্বাচন কমিশন গঠন করার দাবি তোলেন তিনি।
আর সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ এক বিবৃতিতে পরোক্ষ ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেন। নেতৃদ্বয় বলেন, নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবেন না। বরং সিপিবি স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রায়নের জন্য তার দীর্ঘদিনের লড়াইকে বেগবান করবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকারের অংশ। স্থানীয় সংস্থা হিসেবে তৃণমূলের জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য জেলা পরিষদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। জনগণের সরাসরি প্রত্যক্ষ ভোটেই জেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু যে বিধি-বিধানের ভিত্তিতে জেলা পরিষদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা আইয়ুবি আমলের পরোক্ষ ভোটের ‘বিডি’ তথা ‘মৌলিক গণতান্ত্রিক’ নির্বাচনের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
ক্ষমতাসীন জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর ভা-ারী বলেছেন, নির্বাচনে দলীয়ভাবে কাউকে সমর্থন দেয়ার সুযোগ কোথায়? শরিক দল হিসেবে ক্ষমতাসীন দল সমথির্ত প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার চিন্তা রয়েছে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, বর্তমানে দলের সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত আছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এই মুহূর্তে চিন্তা নেই। আর এখন পর্যন্ত দলের কেউ প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখাননি।
এসব বিষয়ে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগ বা সরকার যাকে চাইবে, তিনিই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হবেন। সে হিসেবে এটা প্রহসনের নির্বাচন, একতরফা নির্বাচন। তিনি বলেন, যেহেতু বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগের, তাই তাদের প্রার্থীরই জয় নিশ্চিত। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, নিবাচন কমিশন আগামী ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীরা ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৩ ও ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১১ ডিসেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১২ ডিসেম্বর।