পুলিশের নামেই শতাধিক ভুয়া ফেসবুক পেজ উসকানিমূলক পোস্ট বন্ধে এসপি-ওসিদের ৬ নির্দেশনা
- আপলোড টাইম : ০৬:১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৬
- / ৬৬৬ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: বাংলাদেশ পুলিশের নামেই রয়েছে কুড়িটির বেশি ভুয়া ফেসবুক পেজ। আর বিভিন্ন ইউনিটের নামে এ সংখ্যা শতাধিক। এসব পেজে ব্যবহার হয় পুলিশ বাহিনীর নাম, লোগো ও ছবি। কোনো কোনোটিতে অপপ্রচার চালানো হয় খোদ পুলিশের বিরুদ্ধেই। এসব ভুয়া পেজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। সেই সঙ্গে পুলিশের প্রত্যেকটি ইউনিটকে ফেসবুক পেজ খোলার অনুমতি দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সদর দফতর। পাশাপাশি ফেসবুকে উসকানি ছড়ানো ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া বন্ধ করতে দেশের সব জেলার এসপি ও থানার ওসিদের ৬টি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। জানতে চাইলে ডিআইজি মিডিয়া অ্যান্ড প্লানিং শহীদুর রহমান জানান, ‘অনুমোদনবিহীন ফেসবুক পেজগুলো বন্ধ করতে আমরা আইসিটি অ্যান্ড টেলিকম শাখাকে চিঠি দিয়েছি। তারা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দেয়াসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’ অনুমোদনহীন কতটি পেজ আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর সংখ্যা নিরূপণের কাজ চলছে। আপাতত শতাধিক পেজ শনাক্ত করা হয়েছে। থানা পুলিশ, জেলা পুলিশ বা অন্য ইউনিটগুলো ফেসবুক পেজ খুলতে পারবে কিনা জানতে চাইলে শহীদুর রহমান বলেন, আমরা একটি মিডিয়া নীতিমালা তৈরি করছি। এর আওতায় সব ইউনিটকে ফেসবুক পেজ খোলার অনুমতি দেয়া হবে। তবে তাদের লোগো কী হবে, কী ধরনের তথ্য ও ছবি আপলোড করা যাবে সে বিষয়ে নীতিমালায় উল্লেখ থাকবে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ফেসবুকের মাধ্যমে পুলিশের কার্যক্রম তুলে ধরে জনসম্পৃক্ততা তৈরির লক্ষ্যে সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতর একটি পেজ খুলেছে, যা ‘বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল পেজ’ নামে পরিচিত। পুলিশ সদর দফতর থেকে পরিচালিত হয়। এর বাইরে পুলিশের নামে যত পেজ আছে সবই অনুমোদনহীন ও ভুয়া। এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে বিপুলসংখ্যক ভুয়া পেজের লিংক ও স্ক্রিন শট তুলে ধরা হয়েছে, যার একটির কভার পেজে দেখা যাচ্ছে ৭/৮ অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য এক তরুণকে রাস্তায় ফেলে বুট দিয়ে লাথি দিচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ ক্রাইম রেকর্ড শিরোনামের আরেক পেজের কভারে বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের লাশ বহনের ছবি দেয়া। বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন শিরোনামের পেজে পুলিশের মনোগ্রাম দেয়া। এ পেজে বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর পোস্টের লিংক শেয়ার করা। পুলিশ অব বাংলাদেশ নামের পেজে প্রোফাইল পিকচারে মিশনে কর্মরত পুলিশ সদস্য এক শিশুকে পানি পান করাচ্ছেন।
আরও রয়েছে পুলিশের খুলনা রেঞ্জ, বাংলাদেশ পুলিশ, আনঅফিসিয়াল বাংলাদেশ পুলিশ পেজ সিএমপি, বাংলাদেশ পুলিশ অলওয়েজ অন ইউর সাইড, বাংলাদেশ রেল পুলিশ, বাংলাদেশ পুলিশ মেম্বারস অ্যান্ড ফ্যামিলি, বাংলাদেশ পুলিশ পাবলিক ফর দিজ কান্ট্রি, বাংলাদেশ পুলিশ (কনস্টেবল), বাংলাদেশ পুলিশ ক্রাইম, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ নিউজ সিন্স ২০১০ জানুয়ারি ইত্যাদি নামের পেজ রয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া শাখার কর্মকর্তারা জানান, এসব পেজে পুলিশের প্রকৃত পেজ মনে করে সাধারণ মানুষ আকৃষ্ট হয়ে লাইক বা শেয়ার দিচ্ছে। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এবং পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হয়। তাই সব পেজ বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এসপি ও ওসিদের ৬ নির্দেশনা : পুলিশ সদর দফতর থেকে বৃহস্পতিবার জেলার এসপি ও থানার ওসিদের দেয়া নির্দেশনায় বলা হয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে স্থানীয় পেশাজীবী সংগঠন, রাজনৈতিক নেতা, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। সাধারণ মানুষ কোনো গুজবে যেন কান না দেয় এবং শোনা কথায় কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে সেজন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে কমিউনিটি পুলিশের সদস্যদের এ ধরনের পরিস্থিতি প্রশমিত করার কাজে লাগাতে হবে। এ কাজে মদদদাতাদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সব ধর্মের নেতার সঙ্গে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ধরনের আপত্তিকর পোস্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।