
এমন কোনো চাপ নেই যেটা আমাকে টলাতে পারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার শক্তি জনগণ আর আল্লাহ। আমার মাথায় আছে বাবার হাত। কে কী চাপ দিলো, এতে আমাদের কিছু আসে যায় না। গতকাল সোমবার বিকেলে গণভবনে কাতার সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপ আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন কোনো চাপ নেই যেটা শেখ হাসিনাকে টলাতে পারে- এটা মাথায় রাখতে হবে। জনগণের স্বার্থে যেটা করার সেটিই করব। তিনি বলেন, এ রকম বহু চাপ ছিল, পদ্মা সেতুর আগে তো কম চাপ দেয়া হয়নি। কোনো একটা দেশের সেই রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে টেলিফোনের পর টেলিফোন। কেন? একটা ভদ্রলোক, তাকে একটি ব্যাংকের এমডি পদে রাখতে হবে। এমডি পদে কী মধু তা তো আমি জানি না। আইন আছে, ৭০ বছর বয়স হয়ে গেছে, তারপরও এমডি পদে থাকতে হবে। একটাই সুবিধা, এমডি পদে থাকলে মানিলন্ডারিং করা যায়। পয়সা বানানো যায়, পয়সা মারা যায়, গরিবের রক্ত চুষে খাওয়া যায়। সেই চাপ কিন্তু শেখ হাসিনা সহ্য করে চলে আসছে। তারপর পদ্মা সেতু বানিয়ে দেখালাম। ওই চাপে আমাদের কিছু আসে যায় না।
বাসস, বাংলা ট্রিবিউন, জাগো নিউজ।
বিএনপি বিদেশীদের কাছে দেনদরবার করছে বা একটি বিদেশী প্রভাবশালী পত্রিকায় ড. ইউনুসকে নিয়ে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তির বিবৃতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি কোনো চাপ অনুভব করছেন কি না’- এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
অন্য এক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করাই যাদের কাজ তাদের সাথে সংলাপ করার কিছু নেই। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেছেন, সংলাপ কার সাথে করব? ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি সংলাপ করেছি, তার রেজাল্টটা কী? নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া কিছুই করেনি তারা। শেখ হাসিনা বলেন, তারা (বিএনপি) ৩০০ সিটে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে টাকা খেয়ে নিজেরাই নিজেদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে তারপর নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এদের সাথে কিসের কথা বলব, কিসের বৈঠক করব।
শেখ হাসিনা বলেন, তারপরও অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ হওয়ায় পরিবারের আকুতিতে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার এবং চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছি। এটুকু যে করেছি সেটিই যথেষ্ট। এটুকু সহানুভূতি যে পাচ্ছে সেটি আমার কারণে। ওদের সাথে আবার কিসের বৈঠক আর কিসের কী। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, যে দল বেশি লাফায় সে দলের দুই নেতাই হচ্ছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা না পারবেন ইলেকশন করতে, না পারবেন ক্ষমতায় আসতে। তিনি বলেন, বিএনপি নিজের গঠনতন্ত্র নিজেরা ভঙ্গ করছে। কারণ, তাদের গঠনতন্ত্রে আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না। এখন সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকেই দলের নেতা বানিয়ে রেখে দিয়েছে। এখন এই দলের কাছে কী আশা করবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচনেও জনগণ যেন স্বাধীনভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে সেই প্রস্তুতি আছে। দলীয় সরকারের অধীনেও যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে সেটি আমরা প্রমাণ করেছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোই এর প্রমাণ।
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে ওদের (বিএনপির) জন্মই হয়েছে অস্ত্র হাতে নিয়ে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী একজন সেনা…। সেই সেনা সে হলো সেনাবাহিনীর প্রধান, আবার সেই অবস্থায় থেকে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েছে, অস্ত্র হাতে নিয়ে। নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় বসেছে। আর সেই ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তৈরি করা দল হলো বিএনপি।
রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের যেন কষ্ট না হয় সে জন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন আর পরনির্ভরশীল নই। আমরা নিজেরাই এখন উৎপাদন করছি। আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। আশা করি, রমজানে কোনো অসুবিধা হবে না। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সরকারের একার নয়, সবার। সবাইকে সে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব আছে। সত্যের জয় হয়। এটা কেউ ঢাকতে পারে না। এটা আমি বিশ্বাস করি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা বিবৃতি না, এটা একটা বিজ্ঞাপন। যে ৪০ জনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে একজন বিশেষ ব্যক্তির পক্ষে, এর উত্তর কী দেবো, জানি না। আমার একটা প্রশ্ন আছে, যিনি এত নামীদামি নোবেল প্রাইজপ্রাপ্ত, তারজন্য এই ৪০ জনের নাম খয়রাত করে এনে বিজ্ঞাপন দিতে হবে কেন? তাও আবার বিদেশী পত্রিকায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিরও চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি, আমি বিশ্বাস করি, এটা কেউ কিছু করতে পারবে না। হয়তো সাময়িক কিছু একটা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু সেটি মোকাবেলা করবে আমাদের দেশের জনগণই।
প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই সংবাদ সম্মেলনে কাতার সফরের বিষয়বস্তু ছাড়াও আগামী নির্বাচন, সংলাপ, কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের দৌড়ঝাঁপ, নানামুখী অপতৎরতা, গুজব রটানো, দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা এবং দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে স্থিতিশীল গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তাসহ সাংবাদিকদের নানামুখী প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।