ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিআরটিসিতে ১০ দুর্নীতি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:১৭:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৬
  • / ৫০২ বার পড়া হয়েছে

sdfweসমীকরণ ডেস্ক: বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনে (বিআরটিসি) ১০ ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে বলে সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেথবিআরটিসির ট্রিপ চুরি, আয়ের টাকা অজমা রাখা, বাস সংস্কারের নামে জালিয়াতি, রাজনৈতিক কর্মীদের হস্তক্ষেপ, রানিং মেরামতের নামে দুর্নীতি, ভারী মেরামতের নামে অর্থ লোপাট, টাকা থাকা সত্ত্বেও চালক-শ্রমিকদের বেতন-মজুরি না দেয়া, হাতে টাকা রাখা, যন্ত্রাংশ ক্রয়ে দুর্নীতি এবং তেল ও লুব্রিক্যান্ট ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিআরটিসির চেয়ারম্যান, অসাধু কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মী মিলেমিশে লুটপাট করা হচ্ছে। কথায় আছে, ‘বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট’থকরপোরেশনের চিত্র এটাই। সংস্থার প্রতিবেদনও এর সত্যতা মিলেছে। দেখা গেছে, আলী হোসেন নামে একজন রাজনৈতিক নেতা গোটা বিআরটিসিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। তার গড়া সিন্ডিকেটকে মদদ জোগাচ্ছে করপোরেশনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। ওই ব্যক্তির সঙ্গে বর্তমান চেয়ারম্যানের সখ্য রয়েছে। ফলে আলী হোসেনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সম্পর্কে তার জানা নেই। তবে কোনো অনিয়ম থেকে থাকলেও তিনি টেলিফোনে কোনো মতামত দেবেন না। তিনি এই প্রতিবেদককে তার অফিসে দেখা করতে বলেন। তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে চেয়ারম্যান সেলফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিআরটিসির চলমান গাড়ির সংখ্যা ৬৪০টি। এসব বাসের মধ্যে কমপক্ষে ১০-১৫ শতাংশ ট্রিপ চুরি করা হয়। তবে গোয়েন্দা সংস্থার হিসাবে বাসের সংখ্যা ও বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের হিসাবে গড়মিল পাওয়া যায়। করপোরেশনের তথ্যমতে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাদের বইয়ে ৯২৯টি বাস যোগ হয়েছে। এর মধ্যে সিটি বাস সার্ভিস ২৬৬টি, আন্তজেলা বাস সার্ভিস ৫১৭টি, স্টাফবাস সার্ভিস ১২৯টি এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ১৭টি মহিলা বাস চলাচল করছে। একইভাবে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিআরটিসির ১৯টি ডিপোতে মোট অজমার পরিমাণ ১০ কোটি টাকা বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, অন্য একটি তথ্যে দেখা গেছে, করপোরেশনের বিভিন্ন ডিপোর কর্মকর্তাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে ১৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যার মধ্যে রাজস্ব অজমা আছে ১০ কোটি ৫৫ লাখ ২৩ হাজার ১০২ টাকা। এসব টাকা ব্যাংক একাউন্টে জমার নিয়ম থাকলেও নানা অজুহাতে তা নিজেদের কাছে রেখে দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাড়ি পরিচালনায় রাজস্ব অজমার পরিমাণ ৯ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩৫ টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি লিজ গ্রহণকারীদের কাছে অজমার পরিমাণ এক কোটি ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ৩০৩ টাকা।
গাড়ি মেরামতসংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ কাগজে-কলমে কিছু গাড়িকে ওয়ার্কশপে পাঠানো হয় বলে লিপিবদ্ধ রাখে। বাস্তবে সেগুলোকে দেখা যায়, সড়কে চলাচল করছে। তদারকি না থাকার কারণে একদিকে সচল গাড়ি মেরামতের নামে মোটা অংকের টাকা লুটপাট হচ্ছে, অন্যদিকে গাড়ির ট্রিপ চুরির মাধ্যমে অনৈতিকভাবে টাকা আয় করছে সিন্ডিকেট চক্রগুলো। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট না হলেও তা অকেজো দেখিয়ে ক্রয়ের নামে দুর্নীতি করা হয়। আর অনেক ডিপোতে নতুন ইঞ্জিনঅয়েল চুরি করে তা বিক্রি করা হচ্ছে। এর বদলে সেখানে জাহাজের পুরাতন ইঞ্জিনঅয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডিপোগুলোতে পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স করা হয় না। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ডিপোতে ২০১৫ সালের মে থেকে জুলাইয়ে হালকা/রানিং মেরামতের জন্য বিভিন্ন মডেলের ১৬টি বাস রং করা বাবদ চার হাজার ১৮৫ টাকার রং কেনা হয়। কিন্তু রং করানোর জন্য মজুরি ধরা হয় সাড়ে ৬৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ রঙের মূল্যের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি ব্যয় দেখানো হয়েছে রং লাগানোর কাজে। এভাবেই প্রতিদিন পরতে পরতে অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে সেবামূলক সংস্থা বিআরটিসিতে। গোয়েন্দা সংস্থাটি বিআরটিসিতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে চারটি সুপারিশ করেছে। এগুলো হচ্ছে, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন এবং দায়ীদের কঠোর শাস্তি প্রদান, বিআরটিসির সক্ষমতা, সম্ভাবনা, দুর্বলতা ও চ্যালেঞ্জ নির্ধারণের জন্য নতুন কর্মপরিকল্পনা এবং টিওঅ্যান্ডইয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে নতুনভাবে শুরু করা এবং এর জন্য একটি মূল্যায়ন (ইভালুয়েশন) কমিটি গঠন, সরকারি মালিকানায় চালালে এই প্রতিষ্ঠান কখনো দক্ষতা এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে না, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র নীতি-নির্ধারণী ক্ষমতা এবং মনিটরিং সরকারের হাতে রেখে বিআরটিসিকে বেসরকারি পরিবহন কোম্পানির কাছে চুক্তিভিত্তিক অপারেশনের দায়িত্ব দেয়া এবং ইতিপূর্বে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত না করা হলে সে সব বিষয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রভাবশালী ওই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিসির প্রশাসনিক দক্ষতা, পরিচালনা সক্ষমতা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের নিমিত্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফারুক জলিলকে (প্রশাসন)। সদস্য করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন, অর্থ বিভাগের একজন, আইএমইডির একজন, বিআরটিসির পরিচালক ও অপারেশন এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিবকে (বিআরটিসি)। এই কমিটিকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বিআরটিসি শাখার যুগ্ম সচিব মো. এহছানে এলাহী বলেন, বিআরটিসির অনিয়মসংক্রান্ত প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখার জন্য সাত সদস্যের এক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গত ২২ সেপ্টেম্বর গঠন হলেও সবাইকে একত্রিত করতে বিলম্বের কারণে এখনো সভা করা যায়নি। আশা করছেন, আগামী সপ্তাহে এ সংক্রান্ত প্রথম বৈঠক করা যাবে। আর প্রতিবেদন দিতে প্রায় দুই মাস সময় লাগতে পারে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

বিআরটিসিতে ১০ দুর্নীতি

আপলোড টাইম : ০২:১৭:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

sdfweসমীকরণ ডেস্ক: বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনে (বিআরটিসি) ১০ ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে বলে সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেথবিআরটিসির ট্রিপ চুরি, আয়ের টাকা অজমা রাখা, বাস সংস্কারের নামে জালিয়াতি, রাজনৈতিক কর্মীদের হস্তক্ষেপ, রানিং মেরামতের নামে দুর্নীতি, ভারী মেরামতের নামে অর্থ লোপাট, টাকা থাকা সত্ত্বেও চালক-শ্রমিকদের বেতন-মজুরি না দেয়া, হাতে টাকা রাখা, যন্ত্রাংশ ক্রয়ে দুর্নীতি এবং তেল ও লুব্রিক্যান্ট ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিআরটিসির চেয়ারম্যান, অসাধু কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মী মিলেমিশে লুটপাট করা হচ্ছে। কথায় আছে, ‘বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট’থকরপোরেশনের চিত্র এটাই। সংস্থার প্রতিবেদনও এর সত্যতা মিলেছে। দেখা গেছে, আলী হোসেন নামে একজন রাজনৈতিক নেতা গোটা বিআরটিসিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। তার গড়া সিন্ডিকেটকে মদদ জোগাচ্ছে করপোরেশনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। ওই ব্যক্তির সঙ্গে বর্তমান চেয়ারম্যানের সখ্য রয়েছে। ফলে আলী হোসেনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সম্পর্কে তার জানা নেই। তবে কোনো অনিয়ম থেকে থাকলেও তিনি টেলিফোনে কোনো মতামত দেবেন না। তিনি এই প্রতিবেদককে তার অফিসে দেখা করতে বলেন। তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে চেয়ারম্যান সেলফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিআরটিসির চলমান গাড়ির সংখ্যা ৬৪০টি। এসব বাসের মধ্যে কমপক্ষে ১০-১৫ শতাংশ ট্রিপ চুরি করা হয়। তবে গোয়েন্দা সংস্থার হিসাবে বাসের সংখ্যা ও বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের হিসাবে গড়মিল পাওয়া যায়। করপোরেশনের তথ্যমতে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাদের বইয়ে ৯২৯টি বাস যোগ হয়েছে। এর মধ্যে সিটি বাস সার্ভিস ২৬৬টি, আন্তজেলা বাস সার্ভিস ৫১৭টি, স্টাফবাস সার্ভিস ১২৯টি এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ১৭টি মহিলা বাস চলাচল করছে। একইভাবে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিআরটিসির ১৯টি ডিপোতে মোট অজমার পরিমাণ ১০ কোটি টাকা বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, অন্য একটি তথ্যে দেখা গেছে, করপোরেশনের বিভিন্ন ডিপোর কর্মকর্তাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে ১৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যার মধ্যে রাজস্ব অজমা আছে ১০ কোটি ৫৫ লাখ ২৩ হাজার ১০২ টাকা। এসব টাকা ব্যাংক একাউন্টে জমার নিয়ম থাকলেও নানা অজুহাতে তা নিজেদের কাছে রেখে দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাড়ি পরিচালনায় রাজস্ব অজমার পরিমাণ ৯ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩৫ টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি লিজ গ্রহণকারীদের কাছে অজমার পরিমাণ এক কোটি ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ৩০৩ টাকা।
গাড়ি মেরামতসংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ কাগজে-কলমে কিছু গাড়িকে ওয়ার্কশপে পাঠানো হয় বলে লিপিবদ্ধ রাখে। বাস্তবে সেগুলোকে দেখা যায়, সড়কে চলাচল করছে। তদারকি না থাকার কারণে একদিকে সচল গাড়ি মেরামতের নামে মোটা অংকের টাকা লুটপাট হচ্ছে, অন্যদিকে গাড়ির ট্রিপ চুরির মাধ্যমে অনৈতিকভাবে টাকা আয় করছে সিন্ডিকেট চক্রগুলো। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট না হলেও তা অকেজো দেখিয়ে ক্রয়ের নামে দুর্নীতি করা হয়। আর অনেক ডিপোতে নতুন ইঞ্জিনঅয়েল চুরি করে তা বিক্রি করা হচ্ছে। এর বদলে সেখানে জাহাজের পুরাতন ইঞ্জিনঅয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডিপোগুলোতে পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স করা হয় না। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ডিপোতে ২০১৫ সালের মে থেকে জুলাইয়ে হালকা/রানিং মেরামতের জন্য বিভিন্ন মডেলের ১৬টি বাস রং করা বাবদ চার হাজার ১৮৫ টাকার রং কেনা হয়। কিন্তু রং করানোর জন্য মজুরি ধরা হয় সাড়ে ৬৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ রঙের মূল্যের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি ব্যয় দেখানো হয়েছে রং লাগানোর কাজে। এভাবেই প্রতিদিন পরতে পরতে অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে সেবামূলক সংস্থা বিআরটিসিতে। গোয়েন্দা সংস্থাটি বিআরটিসিতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে চারটি সুপারিশ করেছে। এগুলো হচ্ছে, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন এবং দায়ীদের কঠোর শাস্তি প্রদান, বিআরটিসির সক্ষমতা, সম্ভাবনা, দুর্বলতা ও চ্যালেঞ্জ নির্ধারণের জন্য নতুন কর্মপরিকল্পনা এবং টিওঅ্যান্ডইয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে নতুনভাবে শুরু করা এবং এর জন্য একটি মূল্যায়ন (ইভালুয়েশন) কমিটি গঠন, সরকারি মালিকানায় চালালে এই প্রতিষ্ঠান কখনো দক্ষতা এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে না, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র নীতি-নির্ধারণী ক্ষমতা এবং মনিটরিং সরকারের হাতে রেখে বিআরটিসিকে বেসরকারি পরিবহন কোম্পানির কাছে চুক্তিভিত্তিক অপারেশনের দায়িত্ব দেয়া এবং ইতিপূর্বে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত না করা হলে সে সব বিষয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রভাবশালী ওই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিসির প্রশাসনিক দক্ষতা, পরিচালনা সক্ষমতা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের নিমিত্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফারুক জলিলকে (প্রশাসন)। সদস্য করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন, অর্থ বিভাগের একজন, আইএমইডির একজন, বিআরটিসির পরিচালক ও অপারেশন এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিবকে (বিআরটিসি)। এই কমিটিকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বিআরটিসি শাখার যুগ্ম সচিব মো. এহছানে এলাহী বলেন, বিআরটিসির অনিয়মসংক্রান্ত প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখার জন্য সাত সদস্যের এক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গত ২২ সেপ্টেম্বর গঠন হলেও সবাইকে একত্রিত করতে বিলম্বের কারণে এখনো সভা করা যায়নি। আশা করছেন, আগামী সপ্তাহে এ সংক্রান্ত প্রথম বৈঠক করা যাবে। আর প্রতিবেদন দিতে প্রায় দুই মাস সময় লাগতে পারে।