বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

‘বাল্যবিয়ের কারণে শিশুর কোলে শিশুর জন্ম হচ্ছে’

  • আপলোড তারিখঃ ২৩-০৬-২০২৫ ইং
‘বাল্যবিয়ের কারণে শিশুর কোলে শিশুর জন্ম হচ্ছে’

বাল্যবিবাহ ও কিশোরী মায়ের চক্র থেকে বের না হতে পারার কারণ হলো, যে পরিবারগুলো থেকে বিয়ে হয়ে যায়, সেই বিয়ের অন্যতম কারণ হলো পারিবারিক অসচ্ছলতা। বর্তমানে আরেকটা সমস্যা- নিরাপত্তাহীণতা। মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ও আসার সময় তারা নিরাপত্তাহীণতায় ভোগে। সর্বোপরি যে সমস্যাগুলো মেয়েদের জীবনে হয়, সেখানে আইনের যে যথার্থ প্রয়োগ বা দৃষ্টান্তমূলক প্রয়োগ, সেগুলোতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ফলে যারা ভিকটিম, তারা যেমন বিচার পায় না, তেমনি যারা দোষী তাদেরও সাজা হয় না। এই কারণগুলোর জন্য বাবা-মা অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ে দিলে তারা মনে করে নিরাপদ। এটাই অধিকাংশ বাবা মায়ের মনের কথা।


সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে?
সরকার এক সময় বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু ইদানীংকালে অনেকগুলো সামাজিক সমস্যার মধ্যে এটাও একটা। এটার জন্য যে ব্যাপক প্রচার, প্রচারণা এবং বিনিয়োগ বা প্রকল্প বা গণজাগরণ সৃষ্টি করার দৃশ্যমান কার্যক্রমের অভাব আছে। আইন আছে, কিন্তু এটা প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে কার্যক্রম স্থিমিত হয়ে আসছে।


বাল্যবিয়ে নিয়ে বিগত সরকারগুলো যে পদক্ষেপ নিয়েছে এর মধ্যে কোন পদক্ষেপটি ভালো ছিল? বাল্যবিবাহ তো বাংলাদেশে প্রকট সমস্যা। আমাদের দেশে জনসংখ্যার একটা বিশেষ অংশই ১৮ বছরের নীচে। বলা যায় অর্ধেক, অর্ধেকই। এই জনসংখ্যাকে কেন্দ্র করে বিগত সরকারগুলো কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার জন্য বহু ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কয়েকটা অনলাইন নম্বর দিয়েছিল, বিপদে পড়লেই যেন তারা ৯৯৯ বা ১২৪-এ ফোন করে। এটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। এটার ফলে বেশ কিছু ভালো রেজাল্টও হয়েছিল। বাল্যবিবাহ নিয়ে একটা প্রকল্প ছিল। পরবর্তীতে সেই প্রকল্পটা এক্সটেনশন হয়নি। ফলে থেমে গেছে। আমাদের জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি আছে। এর মধ্যে বাল্যবিবাহও আছে। এই কমিটিগুলো আইন অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের যে কার্যকরী ভূমিকা, সেটা নেই। কমিটিগুলোর কাজ দৃশ্যমান হওয়া দরকার।


সরকার কি এই কাজগুলো করছে না? এই কাজগুলো করতে বাধা কোথায়?
আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই কিছু অগ্রাধিকারমূলক কাজ থাকে। আমি একজন সমাজকর্মী হিসেবে আমার দৃষ্টিতে সামাজিক যে সমস্যাগুলো আছে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য যে কাজগুলো করার দরকার, সেগুলো হচ্ছে না। দৃশ্যমান উন্নয়নের জন্য রাস্তা, ঘাট, বিল্ডিং, ব্রিজ, কালভার্ট বানানোর জন্য যেমন মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়, কিন্তু শিশুদের নিয়ে মেগা প্রকল্পের অভাব আছে। বিষয়টি বাধা না, আমি বলবো অগ্রাধিকার। সরকার কোন জায়গায় অগ্রাধিকার দেবে? বাল্যবিয়ের কারণে শিশুর কোলে শিশুর জন্ম হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সেখানেও কিন্তু খরচ হচ্ছে। এগুলোর জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। সেটার সুনির্দিষ্ট মনিটরিং প্রয়োজন। মনিটরিংটাও একটা অন্যতম বাধা। প্রকল্প নেওয়া হয়, কিন্তু মনিটরিং করা হয় না।
এ সমস্যা রোধে কোন কোন বিশেষ দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন?


আমাদের দেশে যে অসচ্ছল পরিবারগুলো আছে, তাদের নিয়ে অনেক সেফটিনেট প্রকল্প আছে। সেখানে জোর দিয়ে বলা যে, যারা সোশাল সেফটি নেটের আওতায় সাহায্য পায়, তাদের পরিবারের মেয়েদের ১৮ বছরের আগে কোনোভাবেই বিয়ে দেওয়া যাবে না। এগুলো বেঁধে দিয়ে মনিটরিং করা গেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।


বাল্য বিবাহের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী কোন কোনটি?
বাল্যবিবাহের জন্য সবচেয়ে বড় কারণ পারিবারিক অসচ্ছলতা বা দারিদ্র্য। আরেকটা হলো, জলবায়ুর কারণে বাস্তুচ্যূত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যেমন ধরেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে চলে যাচ্ছে খুলনা শহরে। খুলনায় গিয়ে তারা আবাস গড়ছে বস্তিতে। বস্তিতে তারা যখন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তারা তখন মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয়। এই দুইটা কারণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একটা অসচ্ছলতা এবং দেশের মধ্যে জলবায়ুর কারণে বাস্তুচ্যূত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাস্তুচ্যূত মানুষ তাদের সবচেয়ে প্রধান সমস্যা মনে করে কিশোরী মেয়েটাকে। মেয়েটাকে বিয়ে দিতে পারলে তারা নিরাপদ বোধ করে। সামাজিক ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে পারলে বাল্য বিবাহ রোধ সম্ভব, এমন কথা বলা হলেও আসলেই কি সামাজিক ব্যবস্থা পালটালেই বাল্য বিবাহ বন্ধ হবে?


গ্রাম থেকে ইউনিয়ন হয়ে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত অনেকগুলো সিস্টেম আছে। কিন্তু সেগুলো সচল না। সামাজিক যে রীতিনীতি আছে, সেগুলো কোনো কোনো এলাকায় খুব প্রভাব ফেলে, আবার কোনো কোনো এলাকায় এর কোনো প্রভাব নেই। যেমন ধরেন, গাইবান্ধা বা কুড়িগ্রামে যে সামাজিক রীতিনীতি বা প্রথা আছে, সেগুলো খুবই প্রচলিত। ওখানে কিন্তু সামাজিক মুভমেন্ট তৈরি করেই এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। আবার ঢাকা শহরের বস্তিতে কিন্তু সামাজিক প্রথা না, এখানে সমস্যা নিরাপত্তা। ফলে এটা একসূত্রে গাঁথা না। ধর্মীয়ভাবে তো (কিছু ক্ষেত্রে) বাল্যবিবাহকে সমর্থন করা হয়। এক্ষেত্রে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে?
একটা উদাহরণ, কক্সবাজারের উখিয়ায় ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সাথে একটি আলোচনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়, ধর্মীয়ভাবে এটা থাকলেও শিশুদের সুন্দর স্বাস্থ্য, সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অবশ্যই ১৮ বছরের আগে বিয়েটাকে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। তবুও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতা অনেক বড় কিছু না। অনেকেই মনে করেন, বেশি বয়সেও বিয়ে করাটা সন্তান জন্মদানসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি করে।


বাল্য বিয়ে রোধে নেওয়া কর্মসূচিতেও অনেক সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে? এটা বন্ধে সরকার কতটা আন্তরিক? সরকার সব ক্ষেত্রেই আন্তরিক থাকে। কিন্তু তারপরও আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে কিছু ঘটনা তো হয়। যেমন ধরেন, জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি। বয়স নির্ধারণের জন্য এটা অন্যতম একটি সূত্র। এখানেও তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডুপ্লিকেশন হচ্ছে। দৃশ্যমান আইনের যে প্রয়োগ, সেটা যদি হতো, তাহলে কিন্তু সবাই আরেকটু সাবধান হতো। সুতারাং ওই জায়গাগুলোকে আরেকটু শক্তিশালী করা প্রয়োজন। আবার যারা বিয়ের রেজিস্টার, তারাও অনেক সময় দুইটা রেজিস্টার খাতা ব্যবহার করে বিয়ে দিয়ে ফেলেন। এগুলোতে আরেকটু কড়াকড়ি করতে হবে। সবকিছুর পরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আন্তরিকতা। 



কমেন্ট বক্স
notebook

নৈশপ্রহরী না থাকায় নিরাপত্তাহীন দত্তনগর হাইস্কুল