রেলপথে মৃত্যুফাঁদ
- আপলোড টাইম : ০৯:০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / ৩১৯ বার পড়া হয়েছে
তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বাহন হিসাবে রেলওয়ের খ্যাতি বলা যায় বিশ্বব্যাপী। কিন্তু সেই রেলপথকেও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ করে তুলেছে কিছু মানুষের অসচেতনতা, ক্ষমতার দাপট এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা। রেলওয়ে সূত্র হতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই রেললাইনে কাটা পড়ে মারা গেছে তিন শতাধিক মানুষ। গত বছর মৃত্যু হয়েছে ৮১২ জনের। তার মধ্যে সেলফি তুলতে যেয়ে প্রাণ হারিয়েছে এমন মানুষের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। এ সকল মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য মূলত মানুষের অসচেতনতাই দায়ী বলে রেলওয়ে পুলিশ মনে করেন। যাহা মোটেও অযথার্থ নয়। পুলিশের অভিযোগ, কোনোভাবেই মানুষকে এই আত্মঘাতী প্রবণতা হতে মুক্ত করা যাচ্ছে না। চিত্রটি আমাদের অনিবার্যভাবে সড়কপথের বাস্তবতার কথা স্মরণ করে দেয়। তবে রেলপথে সর্বাপেক্ষা গুরুতর আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অরক্ষিত রেলক্রসিং। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রেলপথে লেভেল ক্রসিং রয়েছে ২৫৪১টি। তন্মধ্যে অবৈধ রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ১৩ শত। এদের বেশিরভাগই বলা যায় অরক্ষিত।
উদাহরণ হিসাবে সীতাকু-ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের চিত্রটি তুলে ধরা যায়। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এখানে বিদ্যমান ৮৫টি লেভেল ক্রসিং-ই ঝুঁকিপূর্ণ। এ সকল লেভেল ক্রসিংয়ে কোথাও গেট নেই, আবার গেট থাকলেও অনেকগুলোতে নেই গেটম্যান। অধিকাংশ লেভেল ক্রসিংই যেন এক একটি মৃত্যুফাঁদ। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের হিসাবে, চট্টগ্রাম হতে সীতাকু- পর্যন্ত ৮৫টি লেভেল ক্রসিং-এর মধ্যে রেলওয়ের অনুমোদন আছে মাত্র ৩০টির। এছাড়া বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরও ১৫টি রেলগেট পরিচালনা করছে। এর বাইরে বাকি ৪০টি লেভেল ক্রসিংয়ে গেট ও গেটম্যান কোনোটিই নেই। অপরদিকে, রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত লেভেল ক্রসিংগুলিতে রয়েছে জনবল সংকট। ফলে ছোট-বড়ো দুর্ঘটনা যেমন নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি বিভিন্ন যানবাহনের সাথে ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ফলে বাড়ছে রেলের নিরাপত্তা ঝুঁকিও। বলা বাহুল্য, সারাদেশের রেলপথের চিত্রও ভিন্ন নয়। সর্বাপেক্ষা উদ্বেগের বিষয় হলো, কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না কনে যত্রতত্র লেভেল ক্রসিং গড়ে তোলা হচ্ছে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে। কিন্তু তা রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে তারা উদাসীন। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগ হলো, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতার অভাবে এই ধরনের অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলির বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, রেলপথের এই চিত্রটি মোটেও আকস্মিক নয়। বছরের পর বছর ধরে এই অবস্থা চলে আসছে। রেলক্রসিং শুধু নয়, আমাদের রেলপথগুলিও যে অরক্ষিত তা অস্বীকার করার উপায় নেই। অরক্ষিত এই বিশাল রেলপথকে রাতারাতি নজরদারিতে আনাও সম্ভব নয়। আপাতত আমাদের মনোযোগ নিবদ্ধ করতে হবে দুইটি ক্ষেত্রে। প্রথমত, লেভেল ক্রসিংগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। প্রয়োজনে বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষত ব্যস্ত রেললাইনের উপর দিয়ে রাস্তা পারাপার বন্ধে গ্রহণ করতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা।