ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

শ্রম আইন সংশোধন : দ্রুত কার্যকর করার ব্যবস্থা করুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৩:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • / ৩১৯ বার পড়া হয়েছে

শ্রম আইনকে শ্রমিকবান্ধব করার দাবি অনেক দিনের। দেশের শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো এ দাবি জানিয়ে আসছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা-সংগঠনও সরকারকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে। ২০১৩ সালে শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছিল। সেটি যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে এসব সংস্থা-সংগঠন আইনটিকে শ্রমিকবান্ধব করার কথা বলে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। দশম সংসদের শেষ অধিবেশনে সংশ্লিষ্ট বিল পাস করানোর চেষ্টা করছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
প্রস্তাবিত খসড়ায় শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিশুদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য এখন ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন লাগে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ২০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। আবেদন পাওয়ার ৫৫ দিনের মধ্যে সরকারকে ট্রেড ইউনিয়ন অনুমোদন করতে হবে। নারী শ্রমিক প্রসূতিকল্যাণ সুবিধাসহ প্রসবের পরে আট সপ্তাহ পর্যন্ত ছুটি পাবে। এ সুবিধা না দিলে মালিককে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে। কারখানায় ২৫ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে তাদের জন্য পানির ব্যবস্থাসহ খাবার ঘর রাখতে হবে, বিশ্রামের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। শ্রমিকরা ইচ্ছা করলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করে পরে তা উৎসব ছুটির সঙ্গে ভোগ করতে পারবে। উৎসবের ছুটিতে কাজ করালে এক দিনের বিকল্প ছুটিসহ দুই দিনের ‘ক্ষতিপূরণ মজুরি’ দিতে হবে। কোনো শ্রমিককে দিয়ে টানা ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। খসড়ায় শ্রমিকের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর আরো কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিধিবহির্ভূত উপায়ে মালিককে কোনো কিছু মানতে বাধ্য করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। শ্রম আদালতগুলোকে মামলা দায়েরের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে রায় দিতে হবে। তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে আবশ্যিকভাবে রায় দিতে হবে। আপিল ট্রাইব্যুনালে রায় দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই বিধান। খসড়ায় কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক ও শ্রমিকের বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি কমানোর কথা বলা হয়েছে। তবে সংশোধিত আইন ইপিজেডের কারখানায় প্রযোজ্য নয়। উল্লেখ্য, বৈঠকে সাংবাদিকরা কেন শ্রম আইনের আওতাভুক্ত, সে প্রশ্নও ওঠে। এ নিয়ে আলাপ-আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
বলা যায়, প্রস্তাবিত খসড়া শ্রমিকবান্ধব; মালিকের স্বার্থও রক্ষা করা হয়েছে। আইনকে যুগোপযোগী করে নেওয়া সুশাসনের লক্ষণ। সরকার সময়োপযোগী কাজই করেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দ্রুত প্রস্তাবিত খসড়াকে আইনে পরিণত করতে হবে। সরকার সংশ্লিষ্ট সবার স্বার্থে জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনেই বিল পাসের ব্যবস্থা করবে বলে আমরা আশা করি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

শ্রম আইন সংশোধন : দ্রুত কার্যকর করার ব্যবস্থা করুন

আপলোড টাইম : ০৮:৫৩:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শ্রম আইনকে শ্রমিকবান্ধব করার দাবি অনেক দিনের। দেশের শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো এ দাবি জানিয়ে আসছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা-সংগঠনও সরকারকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে। ২০১৩ সালে শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছিল। সেটি যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে এসব সংস্থা-সংগঠন আইনটিকে শ্রমিকবান্ধব করার কথা বলে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। দশম সংসদের শেষ অধিবেশনে সংশ্লিষ্ট বিল পাস করানোর চেষ্টা করছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
প্রস্তাবিত খসড়ায় শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিশুদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য এখন ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন লাগে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ২০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। আবেদন পাওয়ার ৫৫ দিনের মধ্যে সরকারকে ট্রেড ইউনিয়ন অনুমোদন করতে হবে। নারী শ্রমিক প্রসূতিকল্যাণ সুবিধাসহ প্রসবের পরে আট সপ্তাহ পর্যন্ত ছুটি পাবে। এ সুবিধা না দিলে মালিককে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে। কারখানায় ২৫ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে তাদের জন্য পানির ব্যবস্থাসহ খাবার ঘর রাখতে হবে, বিশ্রামের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। শ্রমিকরা ইচ্ছা করলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করে পরে তা উৎসব ছুটির সঙ্গে ভোগ করতে পারবে। উৎসবের ছুটিতে কাজ করালে এক দিনের বিকল্প ছুটিসহ দুই দিনের ‘ক্ষতিপূরণ মজুরি’ দিতে হবে। কোনো শ্রমিককে দিয়ে টানা ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। খসড়ায় শ্রমিকের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর আরো কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিধিবহির্ভূত উপায়ে মালিককে কোনো কিছু মানতে বাধ্য করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। শ্রম আদালতগুলোকে মামলা দায়েরের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে রায় দিতে হবে। তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে আবশ্যিকভাবে রায় দিতে হবে। আপিল ট্রাইব্যুনালে রায় দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই বিধান। খসড়ায় কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক ও শ্রমিকের বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি কমানোর কথা বলা হয়েছে। তবে সংশোধিত আইন ইপিজেডের কারখানায় প্রযোজ্য নয়। উল্লেখ্য, বৈঠকে সাংবাদিকরা কেন শ্রম আইনের আওতাভুক্ত, সে প্রশ্নও ওঠে। এ নিয়ে আলাপ-আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
বলা যায়, প্রস্তাবিত খসড়া শ্রমিকবান্ধব; মালিকের স্বার্থও রক্ষা করা হয়েছে। আইনকে যুগোপযোগী করে নেওয়া সুশাসনের লক্ষণ। সরকার সময়োপযোগী কাজই করেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দ্রুত প্রস্তাবিত খসড়াকে আইনে পরিণত করতে হবে। সরকার সংশ্লিষ্ট সবার স্বার্থে জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনেই বিল পাসের ব্যবস্থা করবে বলে আমরা আশা করি।