জোট-মহাজোটের ফয়সালা শিগগিরই
- আপলোড টাইম : ০৯:১৬:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / ৩৯০ বার পড়া হয়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট: জোট নাকি মহাজোট এবং তাদের আসন বণ্টনের বিষয়ে এতদিন বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করলেও শিগগিরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট থাকবে নাকি জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মহাজোট হবে এবং তাদের আসন বণ্টন কেমন হবে; এ নিয়ে দলীয় হাইকমান্ড এবং সমমনা ও শরিকদের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছে দলটি। এই আলোচনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, চলতি মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চান তারা। ভোট এলেই জমে ওঠে জোটের রাজনীতি। আশির দশকেম জোট ছিল আন্দোলনভিত্তিক, নব্বইয়ে এসে তা নির্বাচনকেন্দ্রিক হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ দফা ঘোষণা সামনে রেখে বাম প্রগতিশীল জোট ১১ দল, আওয়ামী লীগ, জাসদ ও ন্যাপ মিলে ১৪ দল গঠিত হয়। পরে সিপিবি, বাসদসহ ১১ দলের চারটি দল বেরিয়ে যায়। ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (একাংশ) এ আটটি দল ১৪ দলে থেকে যায়। ফলে সেই সময়ে ১৪ দল মূলত ১১ দলীয় জোটে পরিণত হয়। পরে গণফোরাম জোট থেকে বাদ পড়ে। এতে ১৪ দল ১০ দলীয় জোটে পরিণত হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরীকত ফেডারেশনকে জোটে নেয়া হয়। এদিকে জাসদ ভেঙে দুটি আলাদা হলেও দুই জাসদই বর্তমানে ১৪ দলে রয়েছে।
এদিকে, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের নতুন মেরুকরণ ঘটে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সম্প্রসারিত হয়ে মহাজোট গঠিত হয়। ২০০৮ সালে জোটবদ্ধ হয়ে ভোট করে জাতীয় পার্টি ২৭ আসনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকারের অংশীদার হয়। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আবারো জোটের হিসাব বদলে যায়। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপর বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে বিজয়ী হয়ে বর্তমানে একদিকে যেমন বিরোধী দলের ভূমিকায় রয়েছে জাপা, অন্যদিকে তেমনি রয়েছে সরকারের মন্ত্রিসভাতেও। আর একাদশ নির্বাচনে জোট নাকি মহাজোটের আলোচনার মধ্যেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আগেই আওয়ামী লীগের কাছে বৃহত্তর রংপুরের ২২টি আসনসহ ৭০টি সংসদীয় আসন ও ১০-১২টি মন্ত্রণালয় জাতীয় পার্টিকে দেয়ার দাবি করে রেখেছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পরে থেকেই আরো কয়েকটি দল ১৪ দলীয় জোটে আসার আলোচনা শুরু হয়। তবে তাদের সঙ্গে আলোচনা করলেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি আওয়ামী লীগ। ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট লিখিত আবেদনও করে। বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ) ও তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নামজুল হুদাও একাধিকবার দেখা করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। গত রোববার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা আওয়ামী লীগের কাছে ৫০টি আসন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় জোট তথা ন্যাশন্যাল অ্যালায়েন্স আসন্ন নির্বাচনে ৫০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবে এবং এ লক্ষ্যে ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে একমত হয়ে ও জোটবদ্ধ হয়ে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিমিত্তে ইতিমধ্যে জোটের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করে ৫০টি আসনের তালিকা পেশ করা হয়েছে।
এদিকে ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা চাচ্ছেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তাদের আসন বণ্টনের বিষয়ে ফয়সালা হয়ে যাক। ইতিমধ্যে একাধিকবার তারা আওয়ামী লীগের কাছে এবং জোটের বৈঠকেও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। বিগত সময়ে শেষ মুহূর্তে এসে জোটের বিষয়ে চূড়ান্ত ছাড় দেয়ায় ক্ষোভও রয়েছে শরিকদের অনেকের মধ্যে। তাদের মতে, আগেভাগেই জোট ও জোটের প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলে তাদের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ভোটের মাঠের শরিকদের সঙ্গে সমন্বয় করতে সুবিধা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলিপ বড়–য়া বলেন, নির্বাচনে আমরা ৬টি আসন দাবি করেছি। আমরা চাই এ বিষয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হোক। এটা হলে প্রার্থীদের অনেক সুবিধা হবে। তারা তাদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় আরো জোরালোভাবে মাঠে নামতে পারবে।
অন্যদিকে আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বিএনএ জোটের প্রধান সাবেক বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া ফোনে কথা বলেন এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদের সঙ্গেও।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই ধরনের চিন্তা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। যা নির্ভর করছে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপর। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে যোগ হতে পারে জাতীয় পার্টিসহ আরো দু’একটি নতুন দল। তখন আসন ভাগাভাগির হিসাবে দেখা যাবে অনেক পরিবর্তন। আর বিএনপি অংশ না নিলে ১৪ দলীয় জোট এক থেকেই নির্বাচনী মাঠে লড়ার চিন্তা রয়েছে আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এর আগে একাধিকবার গণমাধ্যমের সামনে এ বিষয়টি উল্লেখ করে বক্তব্যও রেখেছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জোট নিয়ে আমরা পরোক্ষভাবে আলাপ-আলোচনা করেছি। যারা আমাদের এতদিনের শরিক তাদের বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। অনেকে আসতে চাচ্ছে তাদের সঙ্গেও আমরা কথাবার্তা বলতে শুরু করেছি। আলাপ-আলোচনা চলছে, এ মাসের শেষদিকে ফাইনাল সেপ দেবে। বেশি দূর গেলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত যেতে পারে। আমাদের জোটের জন্য ৬৫ থেকে ৭০ সিট ছেড়ে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা আছে।
এদিকে নির্বাচনী রাজনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু হচ্ছে- ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্নার জোটগঠন। ক্ষমতসীন দল আওয়ামী লীগ এই তাদের জোটকে স্বাগত জানালেও তাদের নিয়ে ‘সন্দেহ’ পোষণ করেছে। ‘দলছুট’ এই জোটের নেতাদের অনেকেই একসময় আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণীয় পর্যায়ের নেতারা অংশগ্রহণ বা প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য এই জোটকে ভোটের মাঠে জায়গা দেয়ার পক্ষে থাকলেও তাদের গতিবিধি কঠোর নজরদারিতে রাখার কথা বলছেন।
এ বিষয়ে রোববার গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোট নেতাদের অতীত রাজনীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন, তাদের (ড. কামাল, বি চৌধুরী, আসম রব ও মান্নার নাম উল্লেখ করে) নেতৃত্বে জোট হয়েছে থাক, অন্তত কনটেস্ট (প্রতিদ্বন্দ্বিতা) হবে। কারণ দেশে তো দুটি দল- একটি হলো আওয়ামী লীগ আরেকটি এন্টি আওয়ামী লীগ। কাজেই এন্টি আওয়ামী লীগের তো একটা প্ল্যাটফর্ম লাগবে। তবে সে সময় একইসঙ্গে এই জোটের নেতারা নির্বাচন চান কিনা- সে প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।