ইপেপার । আজ শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শেষ সময়ে তিন কাজে বেশি মনোযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৩৮:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • / ৪৫০ বার পড়া হয়েছে

শেষ সময়ে তিন কাজে বেশি মনোযোগ
ডেস্ক রিপোর্ট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি তিন কাজে বেশি মনোযোগী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সেগুলো হলো- সাংগঠনিক নেতাদের মতামত, জরিপ, মাঠ পর্যালোচনা ও অতীত কর্মকা- বিবেচনা করে তফসিলের আগেই সারাদেশে জনপ্রিয় ও উইনেবল প্রার্থীদের দলীয় সবুজ সংকেত দেয়া, একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে বিদ্রোহীদের কঠোরভাবে সতর্ক করা এবং দলীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল মেটাতে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকা। দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের আর খুব বেশি সময় বাকি নেই। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই কাজগুলো শেষ করতে চান তারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই এতে অংশ নেবে। তাই এই নির্বাচন তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যেই সারাদেশে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই নির্বাচনী মাঠে নেমেও পড়েছে। নানা সমীকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জোট-মহাজোটও। বিএনপি মুখে না বললেও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই নির্বাচনী আমেজ ও কর্মযজ্ঞে যারা তাল মেলাতে পারবে না তারাই রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়বে।
এবিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) জনমত জরিপ, তৃণমূলের মতামত, সব কিছু মিলিয়ে যিনি উইনেবল ক্যান্ডিডেট তাকেই মনোনয়ন দেবেন। অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তিদের তফসিলের আগেই সবুজ সংকেত দেয়া হবে। যোগ্য প্রার্থীদের কাছে কেন্দ্র থেকে মেসেজ পৌঁছে যাবে। তাদের আরো বেশি করে জনগণের কাছে যেতে বলা হবে। আপা (শেখ হাসিনা) সবার খোঁজ-খবর রাখেন। তিনি মাঠের সব হিসাব-নিকাশ করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। আর দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে। বিদ্রোহীদের অতীতে দু’একবার ছাড় দেয়া হলেও এবার আর তেমনটি হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে কয়েক ধাপে তৃণমূলের নেতা ও দলীয় জনপ্রতিনিধিদের গণভবনে ডেকে বিশেষ বর্ধিত সভা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরে ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকায় ভোট চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে দলীয় মনোনয়ন বা গ্রুপিংয়ের কারণে নিজেদের মধ্যকার বিদ্যমান বিভেদ দ্রুত সমাধান করারও নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, কে কী করছেন সব খবর আমার কাছে আছে। নতুন অনেকে মনোনয়ন পাবেন। জনপ্রিয়তা দেখে নমিনেশন দেব। বিভিন্ন জরিপ ও তৃলমূলের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে, যাকে নমিনেশন দেব তার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অনেক হয়েছে, কারা কি করেছেন, দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিশ্বাসঘাতকরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নৌকাকে পরাজিত করেছেন, নৌকা ঠেকানোর নেতৃত্ব কে দিয়েছেন? এসব আত্মবিনাসী প্রতিযোগিতাকারীরা রেহাই পাবেন না। অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। সব খতিয়ে দেখছি, দোষ প্রমাণ হলে রেহাই নেইÑ নৌকার বিরোধিতাকারী যতবড় প্রভাবশালীই হোন না কেন রক্ষা পাবেন না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয়ের লক্ষ্যে গত বছর শুরু থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। সব দিক দিয়ে এগিয়ে থাকতে চাইছে তারা। দলীয় প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, উন্নয়ন প্রচার, বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- জনগণের সামনে তুলে ধরতে উঠান বৈঠক, বর্ধিত সভা, কর্মিসভা, পথসভা, জনসভাসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার আগেই দলটির হাইকমান্ড যোগ্য প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেয়ার পক্ষে বলে জানা গেছে।
এদিকে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ১৫টি টিমে বিভক্ত হয়ে ২৬ জানুয়ারি শুরু করা দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর ইতিমধ্যেই শেষ করেছেন। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করছেন। প্রথমে তিনি বিভাগীয় শহরগুলোতে যান। এখন তিনি জেলা পর্যায়ে সফর করছেন। সর্বশেষ তিনি পাবনা সফরে গিয়ে বিশাল জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। আগামী অক্টোবরের শেষ দিকে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠনের আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর এই সফর চলবে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আবারো বিভাগ ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মিসভা শুরু করবেন। বিরোধপূর্ণ জেলা-মহানগরকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই কর্মী সভাগুলোর মাধম্যে তৃণমূলের নেতাদের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, অনেক আগে থেকেই আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সাংগঠনিক প্রস্তুতিও চলছে। আমাদের নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমেছেন। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হলেন শেখ হাসিনা, আর সবচেয়ে জনপ্রিয় দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগে যোগ্য ও জনপ্রিয়রাই দলীয় মনোনয়ন পাবেন। আর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের হারাতে পারবে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

শেষ সময়ে তিন কাজে বেশি মনোযোগ

আপলোড টাইম : ০৫:৩৮:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শেষ সময়ে তিন কাজে বেশি মনোযোগ
ডেস্ক রিপোর্ট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি তিন কাজে বেশি মনোযোগী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সেগুলো হলো- সাংগঠনিক নেতাদের মতামত, জরিপ, মাঠ পর্যালোচনা ও অতীত কর্মকা- বিবেচনা করে তফসিলের আগেই সারাদেশে জনপ্রিয় ও উইনেবল প্রার্থীদের দলীয় সবুজ সংকেত দেয়া, একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে বিদ্রোহীদের কঠোরভাবে সতর্ক করা এবং দলীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল মেটাতে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকা। দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের আর খুব বেশি সময় বাকি নেই। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই কাজগুলো শেষ করতে চান তারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই এতে অংশ নেবে। তাই এই নির্বাচন তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যেই সারাদেশে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই নির্বাচনী মাঠে নেমেও পড়েছে। নানা সমীকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জোট-মহাজোটও। বিএনপি মুখে না বললেও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই নির্বাচনী আমেজ ও কর্মযজ্ঞে যারা তাল মেলাতে পারবে না তারাই রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়বে।
এবিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) জনমত জরিপ, তৃণমূলের মতামত, সব কিছু মিলিয়ে যিনি উইনেবল ক্যান্ডিডেট তাকেই মনোনয়ন দেবেন। অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তিদের তফসিলের আগেই সবুজ সংকেত দেয়া হবে। যোগ্য প্রার্থীদের কাছে কেন্দ্র থেকে মেসেজ পৌঁছে যাবে। তাদের আরো বেশি করে জনগণের কাছে যেতে বলা হবে। আপা (শেখ হাসিনা) সবার খোঁজ-খবর রাখেন। তিনি মাঠের সব হিসাব-নিকাশ করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। আর দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে। বিদ্রোহীদের অতীতে দু’একবার ছাড় দেয়া হলেও এবার আর তেমনটি হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে কয়েক ধাপে তৃণমূলের নেতা ও দলীয় জনপ্রতিনিধিদের গণভবনে ডেকে বিশেষ বর্ধিত সভা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরে ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকায় ভোট চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে দলীয় মনোনয়ন বা গ্রুপিংয়ের কারণে নিজেদের মধ্যকার বিদ্যমান বিভেদ দ্রুত সমাধান করারও নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, কে কী করছেন সব খবর আমার কাছে আছে। নতুন অনেকে মনোনয়ন পাবেন। জনপ্রিয়তা দেখে নমিনেশন দেব। বিভিন্ন জরিপ ও তৃলমূলের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে, যাকে নমিনেশন দেব তার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অনেক হয়েছে, কারা কি করেছেন, দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিশ্বাসঘাতকরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নৌকাকে পরাজিত করেছেন, নৌকা ঠেকানোর নেতৃত্ব কে দিয়েছেন? এসব আত্মবিনাসী প্রতিযোগিতাকারীরা রেহাই পাবেন না। অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। সব খতিয়ে দেখছি, দোষ প্রমাণ হলে রেহাই নেইÑ নৌকার বিরোধিতাকারী যতবড় প্রভাবশালীই হোন না কেন রক্ষা পাবেন না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয়ের লক্ষ্যে গত বছর শুরু থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। সব দিক দিয়ে এগিয়ে থাকতে চাইছে তারা। দলীয় প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, উন্নয়ন প্রচার, বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- জনগণের সামনে তুলে ধরতে উঠান বৈঠক, বর্ধিত সভা, কর্মিসভা, পথসভা, জনসভাসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার আগেই দলটির হাইকমান্ড যোগ্য প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেয়ার পক্ষে বলে জানা গেছে।
এদিকে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ১৫টি টিমে বিভক্ত হয়ে ২৬ জানুয়ারি শুরু করা দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর ইতিমধ্যেই শেষ করেছেন। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করছেন। প্রথমে তিনি বিভাগীয় শহরগুলোতে যান। এখন তিনি জেলা পর্যায়ে সফর করছেন। সর্বশেষ তিনি পাবনা সফরে গিয়ে বিশাল জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। আগামী অক্টোবরের শেষ দিকে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠনের আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর এই সফর চলবে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আবারো বিভাগ ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মিসভা শুরু করবেন। বিরোধপূর্ণ জেলা-মহানগরকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই কর্মী সভাগুলোর মাধম্যে তৃণমূলের নেতাদের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, অনেক আগে থেকেই আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সাংগঠনিক প্রস্তুতিও চলছে। আমাদের নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমেছেন। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হলেন শেখ হাসিনা, আর সবচেয়ে জনপ্রিয় দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগে যোগ্য ও জনপ্রিয়রাই দলীয় মনোনয়ন পাবেন। আর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের হারাতে পারবে না।