ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫

দর্শনা কেরু চিনিকল এলাকায় ঐতিহ্যবাহী আনন্দ বাজারে উচ্ছেদ অভিযান দীর্ঘদিনের আনন্দ বাজারের নাম মুছে হয়ে গেলো নিরানন্দ!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:২৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৪০৪ বার পড়া হয়েছে

c-p Carewআওয়াল হোসেন/ওয়াসিম রয়েল: দর্শনা কেরু চিনিকল এলাকার প্রায় শত বছরের আনন্দ বাজারের নাম মুছে মুছে গিয়ে নিরানন্দে পরিনত হওয়ার পথে। ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ নির্মিত দর্শনা কেরু চিনিকলের উত্তর পশ্চিম পশে রেল লাইন ঘেষে আনন্দ বাজার। সত্যি এখানে এক সময় আনন্দ ছিল। কেরু চিনিকলকে ঘিরে মাড়াই মৌসুমে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে আনন্দে ভরে উঠেছে। মাড়াই মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের মানুষের কেরু চিনিকল এলাকায় এসে মুন্ড মিঠাই, মিস্টি, শিংগাড়া, লবঙ্গ খওয়ার ধুম পড়ে যেত। তখন কেরু চিনিকলের শ্রমিক সংখ্যাও ছিল অনেক। রাতভর বিভিন্ন শীফটে শ্রমিকরা কাজ করতো। ৬মাস ধরে মিল চলেছে। তখন এলাকার একমাত্র অর্থকারী ফসল ছিল আখ। কেরু চিনিকলকে ঘিরে এলাকার কৃষকরা প্রচুর আখ লাগাতো।  ফলে একদিকে যেমন শ্রমিক সংখ্যা ছিল। অপর দিকে এলাকায় কৃষকরা সারারাত ধরে গরুগাড়ী, মহিষের গাড়ীতে করে মিলে আখ নিয়ে আসতো। এসব কারণে রাত দিন সব সময় আনন্দ বাজার খোলা থাকতো। এখানে এসে আনন্দ করে গল্প-গুজব করে কাটাতো। এ কারণে এ বাজারের নাম হয়েছিল আনন্দবাজার। আর এই আনন্দবাজারের পাশে ছিল কেরু এন্ড কোম্পানীর ঐতিহ্যবাহি শ্রমিক ইউনিয়ন। ফলে এ আনন্দবাজারে বিভিন্ন শ্রমিক নেতাদের আনাগোনা। এ আনন্দবাজার এলাকায় শ্রমিকদের সাংগঠনিক কার্যালয়, কেরুজ মন্দির, গির্জা ও বেশ কিছু দোকান নিয়ে এই আনন্দ বাজার ছিল আনন্দময়। জাকজমকপূর্ণ এই ঐতিহ্যবাহি আনন্দ বাজারের নাম মুছে যাওয়ার উপোক্রম। কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর সবচেয়ে জাগজমকপূর্ণ জায়গা ছিল আনন্দবাজার। এই আনন্দবাজারকে ঘিরে বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান সহ ছোট ছোট হোটেল, মিষ্টির দোকান রয়েছে। যেখানে শ্রমিক কর্মচরীরা সকালে এসে চা নাস্তা খেয়ে কর্মস্থলে যেত। শ্রমিক-কর্মচারীরা অনেকেই বলে এই দোকানগুলো দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর ধরে এখানে অবস্থিত। দোকানদারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৬০ বছরের উর্ধে তারা এখানে দোকানদারী করছে। হটাৎ করে গত কয়েকদিন আগে তাদের কাছে এই কেরু এ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর কাছ থেকে দোকান উচ্ছেদের নোটিস আসে। সেই চিঠিতে ২২ও২৩ তারিখের মধ্যে  সকল দোকান ভেঙে নিতে বলা হয়। দুঃখে ভরা মন নিয়ে ৬০ বছরের মায়া মমতা ঘেরা জায়গা আনন্দ বাজার থেকে দোকানদাররা আস্তে আস্তে দোকান গুলো ভাঙতে থাকে। কোন কোন দোকানদাররা কান্নায় ভেঙে পড়ে। তারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে দোকানদারী করে সংসার চালিয়ে আসছিল। এই বয়সে কি করে খাবে কোথায় যাবে তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ গতকাল সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ ও দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের উপস্থিতিতে দোকানগুলো উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়। গতকাল রাত থেকে ঐতিহ্যবাহি কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর শ্রমিক-কর্মচারীদের আনন্দের জায়গাটা হারিয়ে গেলো অতল গহবরে। একদিকে কেরুজ শ্রমিকদের আগের তুলনায় সকল ন্যায্য পাওয়না ধীরে ধীরে ক্ষিণ হয়ে আসছে। অপরদিকে চাকুরিজীবি শ্রমিকদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কুমে আসছে। ফলে কেরু চিনিকল এলাকার শ্রমিকদের সকল আনন্দ ফুরিয়ে আসছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

দর্শনা কেরু চিনিকল এলাকায় ঐতিহ্যবাহী আনন্দ বাজারে উচ্ছেদ অভিযান দীর্ঘদিনের আনন্দ বাজারের নাম মুছে হয়ে গেলো নিরানন্দ!

আপলোড টাইম : ১২:২৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

c-p Carewআওয়াল হোসেন/ওয়াসিম রয়েল: দর্শনা কেরু চিনিকল এলাকার প্রায় শত বছরের আনন্দ বাজারের নাম মুছে মুছে গিয়ে নিরানন্দে পরিনত হওয়ার পথে। ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ নির্মিত দর্শনা কেরু চিনিকলের উত্তর পশ্চিম পশে রেল লাইন ঘেষে আনন্দ বাজার। সত্যি এখানে এক সময় আনন্দ ছিল। কেরু চিনিকলকে ঘিরে মাড়াই মৌসুমে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে আনন্দে ভরে উঠেছে। মাড়াই মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের মানুষের কেরু চিনিকল এলাকায় এসে মুন্ড মিঠাই, মিস্টি, শিংগাড়া, লবঙ্গ খওয়ার ধুম পড়ে যেত। তখন কেরু চিনিকলের শ্রমিক সংখ্যাও ছিল অনেক। রাতভর বিভিন্ন শীফটে শ্রমিকরা কাজ করতো। ৬মাস ধরে মিল চলেছে। তখন এলাকার একমাত্র অর্থকারী ফসল ছিল আখ। কেরু চিনিকলকে ঘিরে এলাকার কৃষকরা প্রচুর আখ লাগাতো।  ফলে একদিকে যেমন শ্রমিক সংখ্যা ছিল। অপর দিকে এলাকায় কৃষকরা সারারাত ধরে গরুগাড়ী, মহিষের গাড়ীতে করে মিলে আখ নিয়ে আসতো। এসব কারণে রাত দিন সব সময় আনন্দ বাজার খোলা থাকতো। এখানে এসে আনন্দ করে গল্প-গুজব করে কাটাতো। এ কারণে এ বাজারের নাম হয়েছিল আনন্দবাজার। আর এই আনন্দবাজারের পাশে ছিল কেরু এন্ড কোম্পানীর ঐতিহ্যবাহি শ্রমিক ইউনিয়ন। ফলে এ আনন্দবাজারে বিভিন্ন শ্রমিক নেতাদের আনাগোনা। এ আনন্দবাজার এলাকায় শ্রমিকদের সাংগঠনিক কার্যালয়, কেরুজ মন্দির, গির্জা ও বেশ কিছু দোকান নিয়ে এই আনন্দ বাজার ছিল আনন্দময়। জাকজমকপূর্ণ এই ঐতিহ্যবাহি আনন্দ বাজারের নাম মুছে যাওয়ার উপোক্রম। কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর সবচেয়ে জাগজমকপূর্ণ জায়গা ছিল আনন্দবাজার। এই আনন্দবাজারকে ঘিরে বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান সহ ছোট ছোট হোটেল, মিষ্টির দোকান রয়েছে। যেখানে শ্রমিক কর্মচরীরা সকালে এসে চা নাস্তা খেয়ে কর্মস্থলে যেত। শ্রমিক-কর্মচারীরা অনেকেই বলে এই দোকানগুলো দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর ধরে এখানে অবস্থিত। দোকানদারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৬০ বছরের উর্ধে তারা এখানে দোকানদারী করছে। হটাৎ করে গত কয়েকদিন আগে তাদের কাছে এই কেরু এ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর কাছ থেকে দোকান উচ্ছেদের নোটিস আসে। সেই চিঠিতে ২২ও২৩ তারিখের মধ্যে  সকল দোকান ভেঙে নিতে বলা হয়। দুঃখে ভরা মন নিয়ে ৬০ বছরের মায়া মমতা ঘেরা জায়গা আনন্দ বাজার থেকে দোকানদাররা আস্তে আস্তে দোকান গুলো ভাঙতে থাকে। কোন কোন দোকানদাররা কান্নায় ভেঙে পড়ে। তারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে দোকানদারী করে সংসার চালিয়ে আসছিল। এই বয়সে কি করে খাবে কোথায় যাবে তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ গতকাল সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ ও দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের উপস্থিতিতে দোকানগুলো উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়। গতকাল রাত থেকে ঐতিহ্যবাহি কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর শ্রমিক-কর্মচারীদের আনন্দের জায়গাটা হারিয়ে গেলো অতল গহবরে। একদিকে কেরুজ শ্রমিকদের আগের তুলনায় সকল ন্যায্য পাওয়না ধীরে ধীরে ক্ষিণ হয়ে আসছে। অপরদিকে চাকুরিজীবি শ্রমিকদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কুমে আসছে। ফলে কেরু চিনিকল এলাকার শ্রমিকদের সকল আনন্দ ফুরিয়ে আসছে।