সভাপতি শেখ হাসিনা, সা.সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
- আপলোড টাইম : ০৩:০৬:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৬
- / ৬০২ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা পুর্ননিবাচিত হয়েছেন। প্রথমবারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন বিদায়ী কমিটির সভাপতিম-লীর সদস্য ওবায়দুল কাদের। রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী ২০তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে তারা সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হন। এদিকে, বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নতুন কমিটির সভাপতিম-লীর সদস্য করা হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের পর সভাপতিম-লীর ১৪ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। তাদের মধ্যে সাতজন পুরনো কমিটির, বাকিরা নতুন যুক্ত হয়েছেন। পুরনো কমিটি থেকে নির্বাচিতরা হলেন: সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফরউল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও অ্যাভভোকেট সাহারা খাতুন। নতুন নির্বাচিত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন- বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান খান, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ, ঠাকুরগাঁয়ের রমেশ চন্দ্র সেন ও যশোরের পীযূষ ভট্টাচার্য্য। পুরনো কমিটির সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন ও সতীশ চন্দ্র রায় বাদ পড়েছেন। পুরনো কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি ও জাহাঙ্গীর কবীর নানক একই পদে পুনর্নরর্্িবাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন যুক্ত হয়েছেন বিদায়ী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুর রহমান। কোষাধ্যক্ষ পদে এইচএন আশিকুর রহমান বহাল রয়েছেন। শিগগিরই ৮১ সদস্যবিশিষ্ট আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। এর আগে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সকালে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। মধ্যাহ্ন বিরতির পর বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নির্বাচন কমিশনের হাতে দায়িত্বভার তুলে দেয়া হয়। এর আগে দলের ঘোষণাপত্র অনুমোদন ও গঠনতন্ত্রের প্রয়োজনীয় সংশোধনী পাস করে বিদায়ী কমিটি। নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় বিদায়ী কমিটির সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদ চৌধুরী সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করলে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন তার প্রতি সমর্থন জানান। এ সময় উপস্থিত কাউন্সিলররা তাতে সায় দেন। অন্যদিকে বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করলে অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন তার প্রতি সমর্থন জানান। বিদেশে থাকাকালে ১৯৮১ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৭, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০২, ২০০৯ ও ২০১২ সালে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। দলটির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানা চারবার দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি চারবার সাধারণ সম্পাদক এবং প্রতিষ্ঠার সময়ে বঙ্গবন্ধু দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদটি পান। এ ছাড়া অন্য সভাপতিদের মধ্যে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চারবার, এএইচএম কামারুজ্জামান দুবার এবং আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ ও আব্দুল মালেক একবার করে সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ছাড়া জিল্লুর রহমান পাঁচবার, তাজউদ্দীন আহমদ, আবদুর রাজ্জাক ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুবার এবং শামসুল হক, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও আবদুল জলিল একবারের জন্য সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের বিদায়ী কমিটির সভাপতিম-লীর সদস্য ওবায়দুল কাদের এবার প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন।
ছাত্রনেতা থেকে আওয়ামী লীগের সা. সম্পাদক: সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের জন্ম নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বড় রাজাপুর গ্রামে ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি। তার বাবার নাম মোশাররফ হোসেন। তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী ছিলেন। সরকারি চাকরি ছেড়ে কাদেরের বাবা শিক্ষকতার পেশায় যোগ দেন। মায়ের নাম ফজিলাতুন্নেসা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি মেধাতালিকায় স্থান পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। কাদেরের স্ত্রী ইসরাতুন্নেসা আইনজীবী। কলেজজীবন থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ওবায়দুল কাদের একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মুজিব বাহিনীর কোম্পানীগঞ্জ থানার কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনার পর ওবায়দুল কাদের কারাবরণ করেন। আড়াই বছর তিনি কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। পরপর দুবার এ পদে ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতিম-লীর সদস্য ছিলেন। ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতি ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন তিনি। এ পদে থাকার সময়ই তিনি এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ মার্চ গ্রেপ্তার হন। ১৭ মাস ২৬ দিন কারাগারে ছিলেন তিনি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নোয়াখালী-৫ আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন। ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো যোগাযোগমন্ত্রী হন তিনি। ওবায়দুল কাদের সাংবাদিক ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলার বাণীর সহকারী সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘ সময়। তিনি এ পর্যন্ত নয়টি বই লিখেছেন।