ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

মিয়ানমারে গণহত্যা : বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হোক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০০:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অগাস্ট ২০১৮
  • / ২৯২ বার পড়া হয়েছে

এত দিন জাতিগত নিধনযজ্ঞ বললেও জাতিসংঘ এবার আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে, মিয়ানমারে গণহত্যা হয়েছে। জাতিসংঘের নিজস্ব ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশন বা সত্যানুসন্ধানী দল গত সোমবার উপস্থাপিত প্রতিবেদনে একথা স্বীকার করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর ‘গণহত্যা’, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও ‘যুদ্ধাপরাধ’ সবই করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। কম করে হলেও ১০ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। গণহত্যার জন্য মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ ছয়জন জেনারেলকে মূলত দায়ী করা হয়েছে। প্রতিবেদনে তাঁদের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। গণহত্যা প্রতিরোধে কোনো ভূমিকা না রাখার জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়েছে। এর পরও বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলোর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করার কোনো কারণ থাকতে পারে কি?
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যার বিষয়ে আগেও অনেক তথ্য উঠে এসেছে। অনেক রাষ্ট্রনেতাও গণহত্যার কথা স্বীকার করেছেন। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ অনেক বার্তা সংস্থাই গণহত্যার প্রচুর তথ্য তুলে ধরেছে। রয়টার্সের দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্য-প্রমাণে দেখা যায়, দেশটির ৩৩ ও ৯৯ ডিভিশন মূলত রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান চালায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার এরই মধ্যে একটি ডিভিশনের প্রধানকে বরখাস্তও করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনেও বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংসহ ১৩ জন জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা রোহিঙ্গা নিধনে সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন। অ্যামনেস্টিও অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের আইসিসিতে বিচারের দাবি জানায়। বিচারের জন্য আইসিসির একজন কৌঁসুলির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিসি বাংলাদেশের মতামতও চেয়েছিল। বাংলাদেশ আইসিসির সেই চিঠির জবাবও পাঠিয়েছে। বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, এত তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পরও আইসিসিতে গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ার কোনো কারণই থাকতে পারে না।
মিয়ানমার চার দশক ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বর্বরতম সেনা অভিযান ও হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে আরো সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার এদের ফেরত নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে শুধু কালক্ষেপণের কৌশল অবলম্বন করছে। অন্যদিকে বাকি রোহিঙ্গাদেরও বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং এ জন্য নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি জাতিগোষ্ঠীকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালোভাবে এগিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। আর তারই একটি উপায় হচ্ছে মিয়ানমারের উদ্ধত জেনারেলদের যেকোনো মূল্যে বিচারের আওতায় আনা।
আমরা আশা করি, জাতিসংঘের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে শিগগিরই আইসিসি মিয়ানমারে পরিচালিত গণহত্যার বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পাশাপাশি এটিও আশা করি, কোনো বড় দেশই এই উদ্যোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মিয়ানমারে গণহত্যা : বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হোক

আপলোড টাইম : ০৯:০০:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অগাস্ট ২০১৮

এত দিন জাতিগত নিধনযজ্ঞ বললেও জাতিসংঘ এবার আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে, মিয়ানমারে গণহত্যা হয়েছে। জাতিসংঘের নিজস্ব ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশন বা সত্যানুসন্ধানী দল গত সোমবার উপস্থাপিত প্রতিবেদনে একথা স্বীকার করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর ‘গণহত্যা’, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও ‘যুদ্ধাপরাধ’ সবই করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। কম করে হলেও ১০ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। গণহত্যার জন্য মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ ছয়জন জেনারেলকে মূলত দায়ী করা হয়েছে। প্রতিবেদনে তাঁদের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। গণহত্যা প্রতিরোধে কোনো ভূমিকা না রাখার জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়েছে। এর পরও বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলোর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করার কোনো কারণ থাকতে পারে কি?
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যার বিষয়ে আগেও অনেক তথ্য উঠে এসেছে। অনেক রাষ্ট্রনেতাও গণহত্যার কথা স্বীকার করেছেন। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ অনেক বার্তা সংস্থাই গণহত্যার প্রচুর তথ্য তুলে ধরেছে। রয়টার্সের দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্য-প্রমাণে দেখা যায়, দেশটির ৩৩ ও ৯৯ ডিভিশন মূলত রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান চালায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার এরই মধ্যে একটি ডিভিশনের প্রধানকে বরখাস্তও করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনেও বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংসহ ১৩ জন জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা রোহিঙ্গা নিধনে সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন। অ্যামনেস্টিও অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের আইসিসিতে বিচারের দাবি জানায়। বিচারের জন্য আইসিসির একজন কৌঁসুলির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিসি বাংলাদেশের মতামতও চেয়েছিল। বাংলাদেশ আইসিসির সেই চিঠির জবাবও পাঠিয়েছে। বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, এত তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পরও আইসিসিতে গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ার কোনো কারণই থাকতে পারে না।
মিয়ানমার চার দশক ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বর্বরতম সেনা অভিযান ও হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে আরো সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার এদের ফেরত নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে শুধু কালক্ষেপণের কৌশল অবলম্বন করছে। অন্যদিকে বাকি রোহিঙ্গাদেরও বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং এ জন্য নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি জাতিগোষ্ঠীকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালোভাবে এগিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। আর তারই একটি উপায় হচ্ছে মিয়ানমারের উদ্ধত জেনারেলদের যেকোনো মূল্যে বিচারের আওতায় আনা।
আমরা আশা করি, জাতিসংঘের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে শিগগিরই আইসিসি মিয়ানমারে পরিচালিত গণহত্যার বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পাশাপাশি এটিও আশা করি, কোনো বড় দেশই এই উদ্যোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে না।