নির্বাচনী আমেজ ধরে রাখতে নানা কৌশল
- আপলোড টাইম : ০৯:৪৮:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অগাস্ট ২০১৮
- / ৩৮১ বার পড়া হয়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের আগ পর্যন্ত নির্বাচনী আমেজ ধরে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে নিজেরা পুরোদমে নেমে পড়েছে নির্বাচনী মাঠে। প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে বিএনপিসহ অন্যদেরও। আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও চলছে ছোট ছোট দলগুলোর সঙ্গে। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত যে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতেও সতর্ক দলটি। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি যে কোনো পরিস্থিতি ঠা-া মাথায় মোকাবিলার কৌশলে এগুচ্ছে তারা। ঠিক করে রাখছে সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলার প্রস্তুতি ও কৌশল। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, নির্বাচনের আগে কাউকেই পরিবেশ ঘোলাটে করতে দিতে রাজি নন তারা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং স্বাভাবিক নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে সহনশীলতার পাশাপাশি প্রয়োজনে হার্ডলাইনেও যাওয়ার কথাও ভেবে রাখছেন তারা।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের তফসিল হবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। অক্টোবরে গঠন হতে যাচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। হিসাব মতে নির্বাচনের জন্য আর মাত্র চার মাসের মতো সময় বাকি রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, নির্বাচন এলেই দেশে-বিদেশে অনেক চক্রান্ত ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যায়। এবারের নির্বাচনের আগেও তারা এমন ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছেন। তবে এবার আগে থেকেই নিজেরা প্রস্তুত রয়েছেন এমনটা জানিয়ে বলছেন- দেশের মানুষ ও দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সতর্ক ও কৌশলে তা মোকাবিলা করবেন।
এবিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গোপন বৈঠক হচ্ছে, দেশে হচ্ছে বিদেশে হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সতর্ক ও প্রস্তুত আছি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের অফিস সক্রিয় থাকে। প্রতিদিন আমরা পরিস্থিতির মূল্যায়ন করি। কোনো বিষয়ে আমাদের যদি ঘাটতি থাকে নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেই এবং এগিয়ে যাই। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন- দেশের মানুষ আন্দোলন নয় নির্বাচনী মুডে রয়েছেন।
এদিকে আগে থেকেই নির্বাচনী মাঠে নামলেও চলতি বছরে সে পালে আরো হাওয়া লাগিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাতে ক্রমেই বাড়াচ্ছে গতি। আগামী দিনে তা আরো বৃদ্ধি করতে চাইছে দলটি। প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশ নেবে এমনটা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি সারছে দলটি। দলীয় সূত্র জানায়, ২৬ জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ১৫টি টিমে বিভক্ত হয়ে দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফরের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। ওই টিম এরই মধ্যে সাংগঠনিক জেলায় সফর শেষ করেছে। এ ছাড়া দলের প্রতিটি সংসদীয় আসনে দলের নেতারা যাচ্ছেন; বিভিন্ন সভা, সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। সাধারণ জনগণ যেন আবারো নৌকায় ভোট দেন সে আহ্বান জানানো হচ্ছে। এর বাইরে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করছেন। প্রথমে তিনি বিভাগীয় শহরগুলোতে যান। এখন তিনি জেলা পর্যায়ে সফর করছেন। সর্বশেষ তিনি পাবনা সফরে গিয়ে বিশাল জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। আগামী অক্টোবরের শেষ দিকে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠনের আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর এই সফর চলবে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগামী মাস থেকে আবারো বিভাগ ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মিসভা শুরু করবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন ও ভোটকক্ষে দলের পক্ষে দায়িত্ব পালনে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের কাজও করছে আওয়ামী লীগ। নিজের সফর, সাংগঠনিক সফর ছাড়াও শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের যার যার এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ দিয়েছেন সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির কথা জনগণকে জানাতে এবং তুলে ধরতে। কয়েক ধাপে তৃণমূলের নেতাদের গণভবনে ডেকে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকার বিজয়ে কাজ করতে বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
অন্যদিকে শুধু প্রস্তুতিই নয়, ভোটের আগ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ ও আমেজ রাখতে যে কোনোভাবেই হোক সারাদেশের মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ। কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হলে দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপশি শরিক, মিত্র এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা সতর্কতার সঙ্গে প্রতিহত করবে দলটি। এরইমধ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ইতিমধ্যে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বিএনএ জোটের প্রধান সাবেক বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া ফোনে কথা বলেন এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদের সঙ্গেও।
বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, নির্বাচনে যে কেউ অংশ নিতে পারে। নির্বাচন করার অধিকার সবার আছে কিন্তু নির্বাচনের নামে কোনো ফাউল গেম দেখতে চাই না। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে এবং সঠিক সময়েই হবে। তাই দলগুলোকে বলব- নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হন। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে-বিদেশে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা আর কোনো উদারতা দেখব না। উদারতা দেখিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। উদারতা দেখিয়েছি বলেই শেখ হাসিনার ওপর হামলা হয়েছে। সুতরাং সব অপরাজনীতি, ষড়যন্ত্র ও অপশক্তিকে আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।