কুষ্টিয়ার মিরপুর আমবাড়িয়ায় যুবক জাহাঙ্গীর আলম দুখুর লাশ উদ্ধার ঘটনা সাবু ডাক্তারসহ সন্দেহভাজন ৮ জনের নামে এজাহার দায়ের
- আপলোড টাইম : ০২:১৭:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৬
- / ৫০৩ বার পড়া হয়েছে
আলমডাঙ্গা অফিস: অবশেষে দীর্ঘ ৪/৫ দিন পর কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের যুবক জাহাঙ্গীর আলম দুঃখু হত্যা মামলা অবশেষে আলমডাঙ্গা থানায় দায়ের করা হয়েছে। হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণাকারি সাবু ডাক্তারসহ সন্দেহভাজন ৮ জনের নাম এবং আরও অজ্ঞাত অসামি উলে¬খ করে এই এজাহার দায়ের করা হয়েছে। নিহত যুবকের পিতা আলী হোসেন বাদী হয়ে এ এজাহার দায়ের করেছেন গত শনিবার রাতে। আলমডাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম পাইকপাড়া বিলের ঢাল থেকে গত ১৭ অক্টোবর মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম দুঃখু নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। তাকে হত্যার জন্য ১ মাস পূর্বে একই গ্রামের ২ জন পুরস্কার ঘোষণা করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে গ্রামবাসি একজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম দুঃখু (২৬)। ইউপি নির্বাচনে দ্বন্দের কারণে বাড়ি ছেড়ে তিনি বেশ কয়েকমাস ধরে তার বড় বোন-জামাই বাড়ি একই উপজেলার মেকুরপুর গ্রামে অবস্থান করছিলেন। গত ১৭ অক্টোবর রবিবার সন্ধ্যায় তিনি বড় বোনের নিকট থেকে চা খাওয়ার কথা বলে ৪০ টাকা চেয়ে নেন। পরে রাতে তিনি ওই গ্রামে (মেকুরপুর) অনুষ্ঠিত পালা গান শুনতে যান। গতকাল সোমবার দুপুরে মিরপুর উপজেলা ও আলমডাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তি গ্রাম আলমডাঙ্গার পাইকপাড়া বিলের পাড়ে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখতে পান গ্রামের এক কৃষক। তিনি ঘটনাটি গ্রামের সকলকে জানান। নিহত যুবকের গ্রামের মাঠের একপাশ মিরপুর উপজেলার অধীন। অপর পাশ আলমডাঙ্গা উপজেলার পাইকপাড়া গ্রাম। লাশ পড়ে থাকার সংবাদ পেয়ে প্রায় সাথে সাথেই আত্মীয়-পরিজনেরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সে সময় নিহত যুবকের চোখ ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন এবং লুঙ্গির কিছুটা অংশ মুখের ভেতর ঢুকানো ও কিছু অংশ গলায় জড়িয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যার পর তা গলায় জড়িয়ে রাখা ছিল। গ্রামবাসির ধারণা পালা গানের আসর থেকে পুরানো শত্রুরা তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভোরে শ্বাসরুদ্ধ করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার পর লাশ আলমডাঙ্গা উপজেলার অংশে ফেলে রেখে গেছে। বিকেলে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। পরদিন ময়না তদন্ত শেষে গ্রামের গোরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। এ নির্মম হত্যাকান্ডের কারণঃ গ্রামবাসি ও নিহতের পরিজনসূত্রে জানা যায়, গত ইউপি নির্বাচনে নিহত যুবক দুঃখু বর্তমান আমবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিলনের পক্ষে ছিলেন। এ নিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান টুটুলের সাথে তার দ্বন্দ্ব ছিল। ভোটের এই দ্বন্দ্ব এক সময় সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিল। সে সংঘর্ষের মামলার আসামি হিসেবে দুঃখুকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল। জেলহাজতমুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরলে গ্রামে শত্রুতার জন্য আর থাকেন নি। বেশ কয়েক মাস তিনি বড়বোন-জামাইয়ের বাড়ি একই উপজেলার মেকুরপুর অবস্থান করছিলেন। গত প্রায় ১ মাস পূর্বে তিনি আবারও বাড়ি গিয়েছিলেন। সংবাদ পেয়ে তার প্রতিপক্ষরা রাতে বাড়িতে হামলা চালায়। কোন মতে জান বাঁচিয়ে তিনি পুনরায় বোন-জামাই বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু তাও বাঁচতে পারলেন না। নিহত দুঃখুর মামা আবু বকর সিদ্দিকী জানান, এক মাস আগে বাড়ি থেকে প্রতিপক্ষের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর দুঃখুর প্রতিপক্ষ একই গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে ডাক্তার সাবু ও মৃত নহর মালিথার ছেলে ঝন্টু তাকে হত্যার জন্য প্রকাশ্যে পুরস্কার ঘোষণা করে। এবং সেই রাতে একই গ্রামের আলা, আনুর নেতৃত্বে তার বাড়িতে হামলা করা হয়েছিল ডাক্তার সাবুর নির্দেশে। এই অপচক্রই দুঃখুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে তাদের দাবি। এই হত্যাকান্ডের দীর্ঘ ৪/ ৫ দিন পর অবশেষে গতকাল আলমডাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণাকারি সাবু ডাক্তারসহ সন্দেহভাজন ৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে এই এজাহার দায়ের করা হয়েছে। নিহত যুবকের বাপ আলী হোসেন বাদী হয়ে এ এজাহার দায়ের করেছেন। কেন এত বিলম্বে এ নির্মম হত্যাকান্ডের মামলা? বিলম্বের কারণ সম্পর্কে লিখিত এজাহারে উলে¬খ করা হয়েছে যে, নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন করা ও পুরো পরিবার শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ার কারনে এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় এজাহার দায়ের করতেও দেরি হয়েছে। তবে ওয়াকিবহাল মহলের দাবি- প্রথমে দু’ উপজেলার দুই থানার সীমান্ত নিয়ে জটিলতার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে মামলা দায়ের সম্ভব হয়নি। এক মিরপুর থানা এলাকা থেকে অপহরণপূর্বক হত্যা করা হয়। পরে লাশ উদ্ধার হয় আলমডাঙ্গা থানা এলাকায়। ২টি ঘটনার স্থান পৃথক ২টি থানা এলাকায়। পরবর্তিতে মিরপুর থানায় এজাহার দায়েরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন নিহতের পরিবার। সেখানকার পুলিশ প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেই নাকি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিরপুর থানা পুলিশ এজাহার গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। অবশেষে গতকাল ২২ অক্টোবর আলমডাঙ্গা থানায় এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনা এজাহারভূক্ত হল। সূত্র জানিয়েছে, কুষ্টিয়ার ২ হাই প্রফাইল নেতার দ্বন্দ্বের কারণেই এই নৃশংস হত্যাকান্ডের মামলার এমন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাদের একজনের হুমকির কারণেই মিরপুর থানা পুলিশ এজাহার গ্রহণ করতে সম্মত হননি।