পৌরসভার ভিজিএফ’র চাল ভর্তি ট্রাক আটকের ঘটনায় পৌর পরিষদের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন
- আপলোড টাইম : ০৮:৫৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ অগাস্ট ২০১৮
- / ৩৬৬ বার পড়া হয়েছে
উটকো ঝামেলা থেকে রক্ষা পেতে রাতে চাল বিতরণ হচ্ছে; ট্রাক আটকের বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন -পৌর মেয়র জিপু
নিজস্ব প্রতিবেদক: উটকো ঝামেলাসহ ভাতাভোগীদের কষ্ট কমাতে কর্তৃপক্ষের মৌখিকভাবে জানিয়ে কৌশলগত কারনে দিনে ও রাতে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। চাল ভর্তি ট্রাক আটকের বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন বলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানালেন পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু। পৌরসভার ভিজিএফ’র চাল ভর্তি ট্রাক আটকের ঘটনা নিয়ে গতকাল রোববার বিকাল ৪টার পর পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ কথা বলেন তিনি।
এসময় মেয়র জিপু তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঈদুল আযহা উপলক্ষে পৌর এলাকার বন্যাক্রান্ত, অন্যান্য দুযোর্গক্রান্ত দুস্থ অতিদরিদ্র ৪ হাজার ৬শ’ ২১টি পরিবারকে ২০ কেজি হারে ৯২ হাজার ৪শ’ ২০ কেজি চাল বরাদ্দ প্রদান করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক। ফলে গত ৮ আগস্ট-১৮ইং তরিখে পৌর পরিষদে এক বিশেষ সভার মাধমে চাল বরাদ্দ ও বিতরণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সে হিসেবে পৌরসভার ৯টা ওয়ার্ডের প্রত্যেক কাউন্সিলরদের ২শ’ ৯০ জনের তালিকা অনুযায়ী ৫ হাজার ৮শ’ কেজি ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের প্রত্যেকের ১২০ জনের তালিকা অনুযায়ী ২ হাজার ৪শ’ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। একই হিসেবে পৌর মেয়র ১ হাজার ৬শ’ ৫১ জনের তালিকা অনুযায়ী বরাদ্দ পান ৩৩ হাজার ২০ কেজি চাল। সে অনুপাতে গত ১৫-০৮-১৮ইং তারিখে ৯নং ওয়ার্ডে, গত-১৬ তারিখ ১,২,৩ নং ওয়ার্ডে চাল বিতরণ করা হয়। পরদিন ১৭ তরিখ ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে আংশিক চাল বিতরণ করা হয়।
তিনি লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে আরো বলেন, কার্ডধারীর চেয়ে দুস্থ অসহায় ও হতদরিদ্র ব্যক্তি বা পরিবারের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ২০ কেজি চাল ভাগ করে দু’জনকে দেওয়া হয়েছে। তবে সন্ধ্যার পর বিতরণের কারন হিসেবে বলেন, কার্ডের সংখ্যা চাহিদার থেকে কম। এদিকে, প্রতিদিন অসহায় দুস্থ হতদরিদ্্র ব্যক্তিবর্গ ভিজিএফ’র চালের জন্য ভিড় জমাতে থাকে। ভিড়সহ উটকো ঝামেলার হাত থেকে রক্ষা পেতে কৌশলগত কারনে দিনে ও রাতে চাল বিতরনের সিদ্ধান্ত হয়। সেভাবেই আমরা চাল বিতরণ করে আসছি।
গত শনিবার রাতে ৭৪ বস্তা চাল ভর্তি ট্রাকটি ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডে চাল বিতরণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঠিক সে সময় কতিপয় ব্যক্তি উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে পৌরসভার গেটে ট্রাকটি আটকে দেয়। ওই ঘটনাই জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ পুলিশের উর্দ্বতন কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সকলকে আমি মৌখিকভাবে জানাই পৌরসভার লেবার দিয়ে প্যাকেট ভার্তি করে কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে আমার নিজের উপস্থিতিতে তালিকাকৃত কার্ডধারী ব্যক্তিদের মাঝে চাল বিতরণের বিষয়টি। চাল বিতরণের বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শনের কথা জানালে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকসহ সাধারণ জনগণ উক্ত চাল বিতরণ কার্যক্রমের সত্যতা নিশ্চিত করেন যার একাধিক ভিডিও ফুটেজও আপনাদের কাছে আছে। চাল ভর্তি ট্রাকটির বিষয়ে বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে চাল ভর্তি ট্রাকটি সদর থানায় রক্ষিত আছে।
এসময় তিনি আরো বলেন, মেয়র নির্বাচিত হওয়া পর এক শ্রেণীর কুচক্রী মহল কুমতলবে আমাকে ও পৌর পরিষদকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আমার বিরুদ্ধে অপবাদ অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি এ বিষয়ে আরো কিছু অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র একরামুল হক মুক্তা। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত তিনজন নারী কাউন্সিলর শাহিনা আক্তার, সুলতানা আরা বেগম, শেফালি খাতুন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, রেজাউল করিম খোকন, জাহাঙ্গীর আলম মালিক, রাশেদুল হাসান(মানু), আবুল হোসেন, সিরাজুল ইসলাম ও পৌর সভার কর্মকর্তা কর্মচারীসহ ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ছাত্রলীগ যুবলীগ সেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মিসহ অনেকে।
পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাথে উন্মুক্ত আলোচনাতে মেয়র আরো জানান, ভাতাভোগীরা দুস্থ হতদরিদ্র ও অসহায় হলেও তাদের একটা সম্মানবোধ আছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চাল নিতে গেলে তাদের অনেক কষ্ট বা সময় অপচয় হয় যার ফলে গত ঈদ থেকেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সে সময় থেকে তালিকা অনুযায়ী ভাতাভোগীদের বাড়ি বাড়ি চাল পৌছে দিচ্ছেন।
এছাড়াও আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে পৌরসভার অধিকাংশ লেবার কর্মকর্তা কর্মচারীরা কোরবানির পশু জবেহ’র স্থান ঠিককরাসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এর মধ্যেই চাল বিতরণ চলছে। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় জনগণের সহায়তায় এসকল কার্ডধারী ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি ভিজিএফ’র চাল পৌছে দেওয়া হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে মৌখিকভাবে আলোচনা করেই বিতরণ কার্যক্রম করা হচ্ছে। কাউন্সিলর ও মেয়রের চাল একই ব্যক্তি দুইবার নিতে না পারে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করা হচ্ছে। আমি যে এলাকাতে চাল বিতরণ করছি তার একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলরদের কাছেও দেওয়া হচ্ছে। গতকাল ৭ও ৮নং ওয়ার্ডে চাল পৌছানোর আগেই উক্ত এলাকার কাউন্সিলরদের কাছে তার তালিকা পৌছে যায়। তালিকা পাওয়ার বিষয়টিও কমিশনাররা এসময় স্বীকার করেন।