মেহেরপুরে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত এক লাখ পশু!
- আপলোড টাইম : ০৮:২১:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অগাস্ট ২০১৮
- / ৪৪৭ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীতে নেওয়ার পথে বিভিন্ন সড়কে চাঁদাবাজির শিকার গরু ব্যবসায়ীরা
মাসুদ রানা, মেহেরপুর: কোরবানীর ঈদ আর মাত্র কয়েকদিন পর। মেহেরপুর জেলায় চাহিদার অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ পশু প্রস্তুত করে সেগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এসকল পশু ট্রাকে বা বিভিন্ন যানবাহনে করে রাজধানী বা অন্যস্থানে নিতে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজীর শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মেহেরপুর সীমান্ত এলাকার পেরিয়ে অন্যান্য জেলায় এ চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। তবে কোরবানীর হাট ও বিভিন্ন সড়কে পুলিশের পক্ষ থেকে জাল টাকা সনাক্তকরণ মেশিন ও টহল জোরদার করা হয়েছে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর পশু কোরবানীর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭৭ হাজার পশু। সে তুলনায় পশু প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় এক লাখ। এর মধ্যে ৭৭৬টি গরুর খামার থেকে ৩৬৯১৪টি গরু, ৩৪৯টি ছাগল খামার থেকে ৫৯৪৯০টি ছাগল, ২৫৬টি ভেড়া খামার থেকে ২২৮২টি ভেড়া এবং বিভিন্ন ভাবে ৬১০টি মহিষসহ বিভিন্ন পশু ব্যক্তিগতভাবে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
সরেজমিনে মেহেরপুরের দুটি গুরুর হাট, একটি ছাগল হাট এবং বেশ কয়েকটি খামার পরিদর্শন করে দেখা যায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় গরু খামারিরা এবার লাভের মুখ দেখছেন। প্রথম দিকে, আশানুরুপ দাম না পেলেও ঈদের শেষ সময়ে গরুর ভালো দাম পাচ্ছেন বলে তারা জানিয়েছেন। ছোট সাইজের গরুগুলো স্থানীয়ভাবে বিক্রি করছেন। তবে বড় সাইজের গরুগুলো ট্রাকে করে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শালিকা গ্রামে মাজহারুল ইসলাম জানান, তার খামারে কোরবানীযোগ্য গরু ছিল ৩৪টি। এর মধ্যে ২৬টি বিক্রি করা হয়েছে। বাকি ৮টি ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করবেন। তিনি জানান, একটি গরুর তিনি টার্গেট করেছেন ঢাকায় গিয়ে বিক্রি করলে ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। স্থানীয়ভাবে সেটির দাম উঠেছে তিন লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য গরুগুলো বিক্রি করেও তিনি ভালো দাম পেয়েছেন বলে জানান। তিনি জানান, গত বারের তুলনায় এ বছর গরুতে লাভ বেশি হয়েছে। এভাবে লাভ হলে ভবিষ্যতে গরুর খামার করতে খামারি উৎসাহিত হবেন।
মেহেরপুরের একমাত্র ছাগলের হাট সদর উপজেলার বারাদিতে। অন্যান্য হাটে কমবেশি আমদানি হলেও বারাদি হাট ছাগলের জন্য বিখ্যাত। সেখানে গিয়ে দেখা যায় সকাল ১০টার মধ্যেই বিভিন্ন স্থান থেকে ছাগল ব্যবসায়ীরা ছাগল নিয়ে হাটে হাজির হয়েছেন। গোভীপুর গ্রাম থেকে মোতালেব নামের এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি বাড়িতে ছাগল পালন করেন। প্রতিবছর কোরবানীর সময় বারাদি হাটে গিয়ে ছাগলগুলো বিক্রি করেন। বারাদি হাটে ছাগল কিনতে বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা আসেন এবং সেখানে ভালো দামে বিক্রি করা যায়।
পাটাপুকুর গ্রামের মোফাজ্জেল নামের এক ছাগল ব্যবসায়ী দুটি ছাগল নিয়ে এসেছেন হাটে। ছাগল দুটি আকারে বেশ বড়। দুটির দাম হেকেছেন ৫৫ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন আশানুরুপ দামেই তিনি ছাগলদুটি বিক্রি করতে পারবেন।
বারাদি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান জানান, ছাগল বেঁচাকেনার একটি মাত্র বড় বাজার বারাদি। বাংলাদেশের মধ্যে এই একটি এলাকা যেখানে প্রচুর ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পাওয়া যায়। প্রতিবছর কোরবানীর সময় বারাদি হাটে প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন জাতের ছাগল বেঁচাকেনা হয়ে থাকে। ক্রেতারা কোরবানির জন্য তাদের ইচ্ছামত ছাগল ক্রয় করতে পারেন এই বারাদি বাজারে।
রাজু আহমেদ নামের এক গরু ব্যবসায়ী জানান, ঢাকা গরু নিতে গেলে কমপক্ষে ১০ জায়গায় চাঁদা দেওয়া লাগে। কোথাও গরু প্রতি আবার কোথা গাড়ি প্রতি। এগুলো বন্ধ হলে ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দে জেলার বাইরে গরু নিয়ে যেতে পারবে।
মেহেরপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৭৭ হাজার বিপরীতে অতিরিক্ত ২৩ হাজার পশু অতিরিক্ত প্রস্তুত করেছেন মেহেরপুরের খামারিরা। তিনি জানান, তিন উপজেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার মাধ্যমে ভিজিলেন্স টিমের মাধ্যমে গুর ছাগল পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন পশুতে রাসায়নিক কোন উপাদান পাওয়া যায়নি। এছড়া খামারিদের বিভিন্ন ভাবে সচেতনতার মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে।
মেহেরপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোরবানীর হাট ও সড়কে নজরদারি করা হচ্ছে। জালটাকা সনাক্ত মেশিন বসানো হয়েছে। কোন ব্যবসায়ী সড়কে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে পুলিশকে জানালে তাদের টহল পুলিশ দিয়ে সাহায্য করা হচ্ছে।