নির্বাচনকালীন সরকার অক্টোবরেই!
- আপলোড টাইম : ০৮:৩১:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অগাস্ট ২০১৮
- / ৩৪৯ বার পড়া হয়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসছে অক্টোবরের শেষ ভাগে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠনের পরিকল্পনা করছে সরকার। এ সরকারের সদস্য সংখ্যা হবে ২০ থেকে ৩০ জন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সরকারের প্রধান থাকবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩০ বা ৩১ অক্টোবর নির্বাচনকালীন নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হবে। এ সরকার গঠনের পর বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো নিয়েই এ সরকার গঠন হবে। এতে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মন্ত্রিসভায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিএনপির অংশগ্রহণের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দেশবাসীর কাছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আছে এমন মন্ত্রিরাই থাকবেন নির্বাচনকালীন সরকারে।
এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টি সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, লিবারেল ডেমোক্স্যাটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ প্রমুখের নাম শোনা যাচ্ছে।
এদিকে, সরকারকে চাপে ফেলতে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আন্দোলনের টার্গেট নিয়েছে বিএনপি ও যুক্তফ্রন্ট। বিএনপির নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখায় সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবিসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি থাকবে। এদিকে অনেক দিন থেকেই সরকারের বাইরে থাকা অধিকাংশ দল বলে আসছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। বিরোধী দলসমূহের এমন দাবির প্রেক্ষিতে বিগত সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রধামমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে তাদের পছন্দমতো মন্ত্রণালয় বেছে নেয়ার সুযোগও দিয়েছিলেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির যোগ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ড. আবদুর রাজ্জাকসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সংবিধানে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কোনো বিধান নেই। অর্থাৎ কোনো ‘অন্তর্র্বতীকালীন’ দায়িত্ব এ সরকারকে পালন করতে হবে না। ম্যান্ডেটকালীন সময়ের দায়িত্ব পালনের কারণে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগের ইচ্ছা ব্যক্ত করারও কোনো প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রয়োগ করছেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবেও তিনি একই ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। অন্যদিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতিকেও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে সব কাজ করতে হবে। সরকার চাইলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন করতে পারবে। যদিও সরকারের পক্ষে বলা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকার শুধু মাত্র রুটিন কার্যাবলী পরিচালনা করবে। নীতি নির্ধারণী কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না। একটি অবাধ সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা দেবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে সংবিধানের ১২৩-এর ৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’
সংবিধানে সংসদ বহাল থাকলে সংসদের মেয়াদ শেষের পূর্বের ৯০ দিন সময়কে এবং সংসদ বিলুপ্ত বা ভেঙে গেলে পরবর্তী ৯০ দিন সময়কে নির্বাচনকালীন সরকার বলে অভিহিত করা হয়েছে। আসছে জানুয়ারি মাসে যেহেতু সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এবং ক্ষমতাসীনরা যেহেতু সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে চায় সে কারণে অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা বলা হচ্ছে। ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচনগুলোতে নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে সব ধরনের নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছেন ক্ষমতাসীন সরকার। ১৯৯১ সালে সর্ব প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের কারণে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রয়োজন দেখা দেয়। ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয়’ মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব দেন। সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনকালীন সরকারের সময় শুরু হয়।
নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য ২০১৩ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হয়। দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব বিএনপি প্রত্যাখ্যান করে। নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় বিরোধী দল ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এবং জাতীয় পার্টির সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির ফলে এ সরকার সর্বদলীয় সরকারে রূপ নেয় বলে দাবি করা হয়। ২৮ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় ২১ জন মন্ত্রী এবং ৭ জন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগের ছিলেন ১৫ জন মন্ত্রী এবং ৫ জন প্রতিমন্ত্রী। জাতীয় পার্টির ৪ জন মন্ত্রী, মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন একজন উপদেষ্টা ও ২ জন প্রতিমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পান। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে এবং সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়–য়াসহ ১০ উপদেষ্টা ঠাঁই পান।