বিআরটিসি নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে
- আপলোড টাইম : ০৮:২৩:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অগাস্ট ২০১৮
- / ৩৯৪ বার পড়া হয়েছে
চরম অব্যবস্থাপনায় ডুবতে বসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি। দেশের সবচেয়ে পুরনো এ পরিবহন সংস্থাটি দিনের পর দিন লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। যখন বেসরকারি পরিবহনগুলোর বাসের সংখ্যা ও রুট বাড়ছে, তখন বিআরটিসি ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেসরকারি পরিবহন সংস্থাগুলোর ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে লাভজনকভাবে। অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিআরটিসির ২১টি ডিপোর ২০টিতেই চালক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সংস্থাটির নিজস্ব হিসাবেই ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ৪৭৩ কোটি টাকা। প্রকাশিত খবরে এই লোকসানের কিছু নেপথ্য চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে ট্রিপ চুরি, বিভিন্নভাবে রাজস্ব লুট, রক্ষণাবেক্ষণের নামে অতিরিক্ত ব্যয়, ঋণ করে কেনা বাস সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় অচল করে রাখাসহ আরো নানা কারণে লোকসান দিচ্ছে বিআরটিসি। একসময় ঢাকা থেকে সারা দেশে বিআরটিসির বাস চলাচল করত। রাজধানীর গণপরিবহনেও যুক্ত ছিল বিআরটিসির বাস। কিন্তু এখন রাজধানীর গণপরিবহনে বিআরটিসির বাসের দেখাই পাওয়া কষ্টসাধ্য। এখন রাজধানীতে প্রায় আড়াই শ রুটে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার বাস চলাচল করে। কিন্তু বিআরটিসির বাস চলে নামমাত্র কয়েকটি রুটে। রাজধানীর সব রুটে লাভজনকভাবে বিআরটিসির বাস সার্ভিস পরিচালনা করা সম্ভব। কিন্তু বেসরকারি বাস কম্পানির মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশ ও সংস্থাটির ভেতরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারণেই বিআরটিসি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারছে না বলে সংশ্লিষ্ট সবার ধারণা। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এক হাজার ৫৩৮টি নতুন বাস কেনা হয়। এর ২০ শতাংশ বাস বিভিন্ন ডিপোতে পড়ে রয়েছে। ব্যয় বেশি হবে বলে পুরনো অচল বাসগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। এর পেছনেও রয়েছে সিন্ডিকেট। বিভিন্ন ডিপোতে লোকসান দেখানো হচ্ছে পরিকল্পনা করে। জানা যায়, রাজস্ব আত্মসাৎ, দরপত্র ছাড়াই বহিরাগতদের বাস ইজারা দেওয়া, বহিরাগত ও অবৈধভাবে নিযুক্ত কন্ডাক্টরদের দিয়ে ভাড়া আদায়, রেজিস্টারে আয়ের হিসাব না রাখার মতো ঘটনাও ঘটছে বিভিন্ন ডিপোতে। বিআরটিসিতে দুর্নীতির তদন্ত করার জন্য ২০১৫ সালে যে কমিটি হয়েছিল, সেই কমিটির তদন্তে বিআরটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছিল। বিভিন্ন ডিপোতে রক্ষণাবেক্ষণ না করে যেসব বাস ফেলে রাখা হয়েছে, সেগুলো বিক্রি করে দিলেও বিআরটিসি অনেক টাকা রাজস্ব পেতে পারে। বিআরটিসি শুধু যাত্রী পরিবহন করে না। পণ্য পরিবহনেও বিআরটিসির ট্রাক রয়েছে। কিন্তু শুধু সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। গতকাল থেকে বিআরটিসির ঈদের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। যাত্রী সেবা খাতে বিআরটিসির ঘুরে দাঁড়ানোর এটা বড় সুযোগ। আমরা আশা করব, সড়কপথে ঢাকার সঙ্গে দেশের সব জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ উপজেলাগুলোর যোগাযোগ গড়ে তুলতে যাত্রী সেবার আদর্শ হবে বিআরটিসি। মনে রাখতে হবে বিআরটিসির স্লোগান হচ্ছে ‘সেবাই আদর্শ’। বিআরটিসি আদর্শ পরিবহন সংস্থা হিসেবে গড়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াক।