পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে মহাপরিকল্পনা
- আপলোড টাইম : ১২:০৫:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অক্টোবর ২০১৬
- / ৫১৭ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে গঠন করা হচ্ছে কাউন্টার টেরোরিজম ও পুলিশ এন্টি-টেরোরিজম ইউনিট। পরিকল্পনার মধ্যে আরও রয়েছে পুলিশ এভিয়েশন ইউনিট গঠন, বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোয় পুলিশ নিয়োগ ও ডিজিটালাইজড ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। পাশাপাশি যুগোপযোগী তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ, উন্নতমানের অস্ত্র ও গাড়িসহ লজিস্টিক সাপোর্ট, গোয়েন্দা তথ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রযুক্তিগত তদন্ত ব্যবস্থার প্রসার, ভবন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এছাড়া এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুলিশে নেয়া হচ্ছে নতুন আরও ৫০ হাজার জনবল। পুলিশ সদস্যদের জন্য উন্নত খাবার এবং পোশাক সরবরাহও রয়েছে এই পরিকল্পনায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের নয়া এই পরিকল্পনার বিষয়টি অবহিত করা হয়। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বাংলাদেশকে একটি ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট ‘কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট’ (সিটিএন্ডটিসিইউ) গঠন করা হয়েছে, যা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মাঠ পর্যায়ে বিস্তৃত হওয়ায় সারা দেশের জন্য এ ইউনিট গঠন করার কথা ভাবা হচ্ছে। পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে অত্যাধুনিক অস্ত্র, প্রয়োজনীয় যানবাহন সরবরাহ, দেশে ও বিদেশে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনে হেলিকপ্টার এবং ড্রোন ব্যবহারেরও অনুমতি প্রদানের কথাও ভাবা হচ্ছে। পুলিশের গোয়েন্দা সক্ষমতা বাড়াতেও নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সময়ের প্রয়োজনেই পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই এখন জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে পুলিশ বাহিনীর আরও আধুনিকায়নসহ তাদের সক্ষমতা-দক্ষতা এবং যোগ্যতা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’
পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ পুলিশ আরও দক্ষতার সঙ্গে জনসাধারণকে উন্নত সেবা দিতে সক্ষম হবে।’
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, পুলিশ বাহিনীর সার্বিক সক্ষমতা বাড়ানো ও আধুনিকায়নের জন্য সরকার এই বাহিনীতে নতুন করে আরও (দ্বিতীয় পর্যায়) ৫০ হাজার জনবল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ সদর দফতরের বিদ্যমান বিভিন্ন ইউনিটের জন্য সর্বমোট ১৩ হাজার ৬৪১টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। অবশিষ্ট পদ সৃষ্টির কার্যক্রম বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বা দফতরে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এতে সব জেলা ও বিভিন্ন ইউনিটের জনবল বাড়ানোসহ রংপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা মেট্রোপলিটন ইউনিট এবং পুলিশ এন্টি-টেরোরিজম ইউনিট গঠনের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
যানবাহনসংক্রান্ত বিষয়ে কার্যপত্রে বলা হয়, পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যানবাহন ও জলযান গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুলিশ বাহিনীর গতিশীলতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিশেষায়িত, দীর্ঘস্থায়ী, মাসসম্পন্ন যানবাহন এবং জলযানের বিকল্প নেই। যানবাহন ক্রয়ে বাজেট কোড প্রতিবন্ধকতা দূর করে ব্যবহার উপযোগী, টেকসই ও মানসম্পন্ন যানবাহন দ্রুততার সঙ্গে ক্রয় করতে হবে।
কার্যপত্রে প্রশিক্ষণসংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়, বর্তমানে পুলিশের কমান্ডো কোর্স চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার ও প্রয়োগের মাধ্যমে তদন্তের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ফরেনসিক ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, সিআইডি, ঢাকায় ফরেনসিক এবং আইটিসংক্রান্ত নানাবিধ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এবং ডিসিএমএস প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
খাদ্য ও পোশাকসংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়, প্রাধিকারপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য কাপড়, বুট, জুতা, বেল্ট, রিফ্লেক্টিং ভেস্ট, রেইন কোটসহ সব ধরনের পোশাক সামগ্রীর গুণগত মান উন্নত করে যুগোপযোগী করা হয়েছে, যা পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে রেশনিং প্রথার মাধ্যমে চাল, গম বা আটা, ডাল, তেল, চিনি সরবরাহ করে থাকে, যা পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, সরকারি গুদামের যে চাল সরবরাহ করা হয় তা অনেকাংশেই স্বাদহীন ও দুর্গন্ধযুক্ত থাকে। ফলে ওই চাল খাওয়া যায় না। পুলিশ বাহিনীর জন্য ওয়ারেন্টি প্রথা শিথিল না থাকায় ভালো মানের চাল খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলনের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে একাধিকবার পত্রালাপ করা হলেও আশানুরূপ অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। এই সুবিধা পাওয়া গেলে এবং রেশনিং প্রথা আরও উন্নত করা হলে পুলিশের সক্ষমতা আরও বাড়বে। বর্তমান পরিস্থিতি, জঙ্গি তৎপরতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ কৌশলগত অপরাধ মোকাবেলায় সক্ষম ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সরঞ্জামাদি পুলিশ বাহিনীতে সংযোজন করা হলে পুলিশের সক্ষমতা আরও বাড়বে।
ভবন ও অবকাঠামোসংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়, পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে রাজস্ব বাজেটের অর্থায়নে দেশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য আবাসিক টাওয়ার নির্মাণ, বিভিন্ন জেলা ও ইউনিটের ফোর্সের আবাসনের জন্য ব্যারাক, বিদ্যমান ব্যারাকের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, থানা, ফাঁড়ি, তদন্ত কেন্দ্র, অফিস এবং ফোর্স ও অস্ত্রের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ইউনিটগুলোর সীমানা প্রাচীরসহ অত্যাবশকীয় কাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। নারী পুলিশ সদস্যদের আবাসন সমস্যা নিরসনে বিভিন্ন জেলায় ৫৫টি মহিলা ব্যারাক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিশেষায়িত ইউনিট ও ফোর্স গঠন বিষয়ে কার্যপত্রে বলা হয়, বর্তমানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বাংলাদেশকে একটি ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এজন্য সিটিএন্ডটিসিইউ গঠন করার পাশাপাশি নিড বেজড ট্রেনিং, দেশ ও বিদেশে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশেষ টিম, ফোর্স ও ব্যাটালিয়ন গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে।
প্রযুক্তিগত অপরাধ তদন্ত ব্যবস্থাপনার প্রসার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সাক্ষ্য-প্রমাণভিত্তিক তদন্ত ব্যবস্থাপনায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের বিবিধ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অতি সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের অপরাধের মাত্রা, ধরন ও কৌশলগত ভিন্নতার কারণে প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
গোয়েন্দা তথ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিয়কায়ন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ধারাবাহিক সফলতা বজায় রাখার জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের মাধ্যমে নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবন করে সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এভিয়েশন পুলিশ ইউনিট গঠন প্রসঙ্গে বলা হয়, ত্রিমাত্রিক (জল, স্থল ও আকাশ পথে) সক্ষমতা অর্জনের জন্য বাংলদেশ পুলিশে ‘পুলিশ এভিয়েশন ইউনিট’ গঠন করা প্রয়োজন।