শিক্ষার্থীদের ওপর ফের হামলা, আহত অর্ধশতাধিক
- আপলোড টাইম : ০৯:৪৩:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ অগাস্ট ২০১৮
- / ৪৪৮ বার পড়া হয়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট: নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ফের হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রাজধানীর ঝিগাতলা এলাকায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আগের দিন একই স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল শাহবাগ থেকে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ঝিগাতলার দিকে গেলে প্রথমে পুলিশ ও পরে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় হামলার শিকার হন তারা। ঝিগাতলা থেকে সায়েন্সল্যাব হয়ে বাটা সিগন্যাল পর্যন্ত এলাকায় দুপুর থেকে থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। পাশাপাশি হেলমেট পরে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে দেশীয় অস্ত্র লাঠিসোটা, রড, রামদা নিয়ে একদল যুবককে হামলা করতে দেখা গেছে। তারা ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। হামলাকারীরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নামে সেøাগানও দিচ্ছিলেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হামলার সময় দু’পক্ষের মধ্যেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়েছে একাধিকবার। হামলা ও সংঘর্ষ চলাকালে সাধারণ পথচারী ও নারীরাও ছাত্রলীগের হাতে হেনস্থার শিকার হন।
প্রথম দফা সংঘর্ষের পর সায়েন্সল্যাব এলাকায় দোকানপাটে ভাঙচুর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তারা সায়েন্সল্যাব থেকে বাটা সিগন্যাল এলাকায় লাঠিসোটা নিয়ে দফায় দফায় মহড়া দেন। এসময় আশেপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রলীগের হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতারা সায়েন্সল্যাব, গ্রিনরোড, ঝিগাতলা, এলিফেন্ট রোডসহ আশেপাশের এলাকার অলিগলিতে ছড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়। বিকাল তিনটার দিকে ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সরজমিন দেখা যায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগ চত্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সিটি কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, কবি নজরুল কলেজসহ আরো বেশ কয়েকটি কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে ঝিগাতলার দিকে এগিয়ে যায়। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ‘আমার ভাই কবরে খুনি কেন বাহিরে’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই, নৌ-মন্ত্রীর পদত্যাগ চাই, ভুয়া ভুয়াসহ বিভিন্ন সেøাগান দেয়। দুপুর ১টার দিকে মিছিলটি ঝিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে পৌঁছায়। তখনও শিক্ষার্থীরা নানান সেøাগান দিতে থাকে। পরে মিছিলটি ঝিগাতলা বাসস্ট্যান্ড ঘুরে ফের সায়েন্সল্যাবমুখো হয়। এসময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে থাকা পুলিশ হঠাৎ করেই শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে ল-ভ- হয়ে যায় ৪/৫ হাজার শিক্ষার্থীর মিছিল। টিয়ালশেল নিক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা আশেপাশের বাসাবাড়ি, রেস্তরাঁ, ব্যাংকসহ বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পড়ে।
তাদের কেউ কেউ ধানমন্ডি লেকের পানিতে ঝাঁপ দেয়। সেখানে গিয়েও টিয়ালশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। তাদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। পানিতে পড়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের দিকে পুলিশকে ঢিল ছুড়তেও দেখা যায়। আবার অনেকেই সিটি কলেজ হয়ে সায়েন্সল্যাব, এলিফ্যান্ট রোডের দিকে দৌড়ে চলে যায়। পরে পুলিশ বিভিন্ন অলিগলিতে গিয়ে লাঠি হাতে ধাওয়া করে। এসময় বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা পাল্টা ধাওয়া করে, সঙ্গে ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করে। এসময় বিজিবি সদর দপ্তরের সামনের সড়ক, ঝিগাতলা মোড়, ২ নম্বর সড়কে শিক্ষার্থীদের পায়ের জুতাসহ অনেক সামগ্রী ও ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা যায়। দুপুর দেড়টার দিকে বিজিবি সদর দপ্তরের সামনে শতাধিক বিজিবি সদস্য অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ, বিজিবি ও সাংবাদিকদের সহযোগিতায় আশেপাশের বিভিন্ন অফিস, রেস্তরাঁ ও বাসাবাড়িতে আটকে পড়া শিক্ষার্থীরা বের হয়ে সায়েন্সল্যাবের দিকে যায়। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ ছিল। ধাওয়া খেয়ে যখন শিক্ষার্থীরা পাল্টা ধাওয়া করতে থাকে তখন পেছ থেকে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র, লাঠি, রড, রামদা, লোহার পাইপ, এলুমিনিয়ামের পাইপ, গ্রিলের পাইপ হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
ছাত্রলীগের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয় বেশকিছু শিক্ষার্থী। সায়েন্সল্যাব মোড় হতে ছাত্রলীগের এই হামলা থেকে বাদ যায়নি সাংবাদিক, পথচারীসহ সাধারণ মানুষ। গুরুতর আহত অনেককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে ছাত্রলীগের হামলার সময় পুলিশের অবস্থান ২০০ গজের মধ্যে ছিল। পুলিশের চোখের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালালেও পুলিশ নীরব ভূমিকায় ছিল।