চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে নানামুখী সংকটের আশঙ্কা
- আপলোড টাইম : ০৮:৫৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ অগাস্ট ২০১৮
- / ৪৬৫ বার পড়া হয়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট: নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে নানামুখী সংকটে পড়েছে সরকার। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে কিছুটা কঠোর অবস্থানে যাওয়ার পক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতিমধ্যে এরকমটাই আভাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সরকারের বিভিন্ন মহলে কথা বলে জানা যায়, চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে বহুমুখী সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। একদিকে এই আন্দোলন দীর্ঘায়িত হলে সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণœ হবে। একইসঙ্গে এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা ত্বরান্বিত হবে সুযোগসন্ধানীদের। আবার ছাত্রদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিলে সৃষ্টি হতে পারে নতুন পরিস্থিতির, যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে। অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকরা যদি ছাত্রদের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায় সেটাও সৃষ্টি করবে জটিল পরিস্থিতির। তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার মতে, প্রধানমন্ত্রী আগেও অনেক কঠিন পরিস্থিতি খুব দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন, এবারো তিনি তা করতে পারবেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯ জুলাই দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে গত ৫ দিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে গাড়ির কাগজপত্র ও লাইসেন্স পরীক্ষা করা ছাড়াও ছাত্ররা গত কয়েকদিনে ৩০০ গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আগুন দিয়েছে ৮টি গাড়িতে। পুলিশেরও ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় তাদের হাতে নাজেহাল হতে হয়েছে মন্ত্রী, এমপি, পুলিশ, সাংবাদিকসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার লোকজনকে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর বাইরেও। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে ছাত্রদের সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও ছাত্ররা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত বাস মালিকরা বন্ধ করে দিয়েছেন বাস চলাচল। তাদের পাল্টা বাস ধর্মঘটের কারণে রাজধানীর সঙ্গে কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে সব জেলার সড়ক যোগাযোগ। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগী, হজযাত্রী, বৃদ্ধ ও শিশুদের। এই পরিস্থিতি আরো কিছুদিন চললে তার প্রভাব পড়বে দ্রব্যমূল্যের ওপর।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রাজধানীর কিছু স্থানে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ছাত্রদের বিপক্ষে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা। ছাত্রদের গায়ে হাত না দিতে সরকারের শীর্ষ মহল থেকেও দেয়া হয়েছে নির্দেশনা। তবে বুধবার পর্যন্ত সরকার ছাত্রদের এই আন্দোলনের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল থাকলেও বৃহস্পতিবারের পরিস্থিতিতে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে প্রশাসনের উচ্চ মহলে। বৃহস্পতিবার সরকারে পক্ষ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর পরিস্থিতি আগের কয়েকদিনের চাইতেও খারাপ হয়। তাই বৃহস্পতিবার রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে চলমান ছাত্র অন্দোলন নিয়ে করণীয় সম্পর্কে মতামত চাওয়া হয় শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। কর্মকর্তারা কঠোর অবস্থানে যাওয়ার পক্ষে তাদের মতামত দেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়। তবে আপাতত সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আজ শনিবার থেকে সেই ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে থাকবেন তারা।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী চলমান ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ গোষ্ঠী তাদের ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা করছে। সরকারকে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে একাধিক চক্র ছাত্র অন্দোলনকে উসকে দেয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য তারা ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ছাত্র ছদ্মবেশে ছাত্রদের সঙ্গে মিশে গিয়ে বিভিন্ন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এসব উসকানিদাতাদের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, পরিস্থিতি যেদিকে গড়িয়েছে, তাতে কঠোর অবস্থানে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প থাকবে না। তিনি বলেন, আন্দোলনের সঙ্গে স্বার্থান্বেষী মহল ও ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ ঢুকে পড়েছে। তাই সরকারের পক্ষে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, কোমলমতি শিশুদের আন্দোলনে নামার পর একটি স্বার্থান্বেষী মহল এর সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। এই আন্দোলনের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কিছু গ্রুপ বা পেজ খুলে উসকানি ছড়ানো হচ্ছে। এই সুযোগসন্ধানীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তারা ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। উসকানিদাতাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। শিক্ষার্থীদের কোনো গুজবের ফাঁদে পা না দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এখন পর্যন্ত কোনো অস্ত্র প্রয়োগ করিনি। আমরা তাদের আন্দোলনকে মানবিক এবং সহানুভূতির সঙ্গে দেখছি।