নিরাপদ সড়ক ও বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর হত্যার বিচারের দাবিসহ ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে
- আপলোড টাইম : ১০:৩২:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অগাস্ট ২০১৮
- / ৫৭৮ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর-ঝিনাইদহে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
ডেস্ক রিপোর্ট: নিরাপদ সড়ক ও বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর হত্যার বিচারের দাবিসহ ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে সাধারণ ছাত্ররা। সারা দেশের ন্যায় চলমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছে, সাধারণত ছুটি পেলে শিক্ষার্থীরা খুশি হয়। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারিভাবে সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ঘোষিত ছুটি তাদের মধ্যে আনন্দ নিয়ে আসতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার কুর্মিটোলায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় রাস্তায় নেমে আসে ছাত্র-ছাত্রীরা। এর সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান ছাত্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। থেমে নেই চুয়াডাঙ্গার সাধারণ ছাত্ররাও। গতকাল বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা থাকলেও কাঁধে ব্যাগ, স্কুল পোশাক ও আবার কেউ স্বাভাবিক পোশাকেই বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে চুয়াডাঙ্গা বড়বাজার শহীদ হাসান চত্বরে। সকাল সাড়ে ১০টায় মানববন্ধনের মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া এই আন্দোলন। যেটি চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত।
শহীদ হাসান চত্বরে মানববন্ধন করার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা র্যালি নিয়ে পুরাতন হাসপাতাল রোড, কোর্ট রোডসহ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদিক্ষণ শেষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গনের চুয়াডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে পুনরায় মানববন্ধন এবং সমাবেশ করে। সমাবেশে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক কলেজ ছাত্র অধিকারকর্মী মেহেরাব্বিন সানভী’র পরিচালনায় বক্তব্য রাখে- আন্দোলনের সংগঠক কলেজছাত্র সাফফাতুল ইসলাম, সৌম্যজিতা শ্রুতি, শাওন কুমার রায়, মাহফুজা লুবনা শোভা, ফারহান লায়েস আবেগ, তৌফিক শুভ, সাম্মি জামান। এসময় শিক্ষির্থীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের করা নয়টি দাবি উপস্থাপন করে। তারা বলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না, বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না, শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভারব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, প্রত্যেক সড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিডব্রেকার দিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে, শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের নিতে হবে, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ-ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বক্তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের করা ৯ দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য এবং দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আরো বলে এটা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন না এটা আমাদের অধিকার।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলো- সোহান, পিয়াস, ফয়সাল, আল মামুন, আসাদ, সাকিব, প্রিন্স, সাজিদ, অন্তর, সৈকত, সাজ, ইয়াসসহ চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, নিরাপদ সড়ক ও বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর হত্যার বিচারের দাবিসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে মেহেরপুরে মানববন্ধন করেছে সাধারন ছাত্ররা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনে ওই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। কলেজ শিক্ষার্থী মোহাইমিনুর রহমান আবির ও হৃদয় খানের নেতৃত্বে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নেয়। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক, দুই শিক্ষার্থী হত্যার বিচারসহ তাদের দাবি সমূহ মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় তারা বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে রাজধানীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একমত পোষন করে এবং নৌ মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ চাই, নিরাপদ সড়ক চাই, শিক্ষার্থী হত্যার বিচার চাইসহ কেন্দ্রীয় ঘোষিত ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানায়।
ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, ঢাকায় বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ায় ঘটনায় এবার মাঠে নেমেছে ঝিনাইদহের শিক্ষাথীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সাধারণ ছাত্র ঐক্য পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে বেলা সাড়ে ১১ পর্যন্ত শহরের মেইন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মানববন্ধন করে তারা। উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী মানববন্ধনে অংশ নেয়। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন প্লাকার্ড দেখা যায়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, মোস্তফা বিন মাসুদ, তৌহিদুল ইসলাম, নুসরাত জাহান নিশি, মাইতুয়া ফাইরিয়া, শরিফ হাসান প্রমুখ। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল ও অদক্ষ চালকের কারণে প্রতিনিয়ত অনেক মায়ের বুক খালি হচ্ছে। আমাদের ৯ দফা দাবি অবিলম্বে পুরণ করতে হবে। সেই সাথে কালীগঞ্জে সড়কের পাশে যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কে স্পিড ব্রেকার দিতে হবে। এছাড়া কালীগঞ্জ হাসপাতাল সড়ক সংস্কারের দাবি জানায় তারা।