শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢাকা অচল : আজ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ!
- আপলোড টাইম : ০৯:২১:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অগাস্ট ২০১৮
- / ৩৮৮ বার পড়া হয়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চতুর্থ দিনে অচল হয়ে পড়ে পুরো রাজধানী। বিভিন্ন সড়কে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাহত হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে চলমান এই আন্দোলনে গতকাল বুধবার রাজধানীতে চলাচলকারী বেশিরভাগ পরিবহনের বাস নামেনি। ফলে অফিসগামী ও অফিস ফেরত লোকজনকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। এরপরও দুর্ভোগের শিকার নগরবাসী বলছেন, শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে। পরিবহন সেক্টরের এই নৈরাজ্যের সমাধান হওয়া জরুরি। ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গতকাল বিকালে ঘাতক বাসের মালিক শাহাদত হোসেনকে র্যাব গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় জড়িত অপর দুইটি বাসের মালিক এখনও গ্রেফতার হয়নি। গতকাল শনির আখড়া, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, শাহবাগ, রামপুরা, খিলক্ষেত, মতিঝিল, ভাটারা, মিরপুর-১০ নম্বর গোল চক্কর, ফার্মগেট, বিমানবন্দর গোল চক্কর, হাউজ বিল্ডিং মোড়, ধানমন্ডি-২৭ নম্বর, নিউমার্কেট ও মোহাম্মদপুর এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় দুই একটি স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে বাস ভাংচুর করা হয়। এদিকে, আজ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
তবে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, বাস আটকের পর বহিরাগতরা আকষ্মিকভাবে বাস ভাংচুর করে। কাওরানবাজারে এরকম বাস ভাংচুর করার অভিযোগ এক বহিরাগতকে শিক্ষার্থীরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। ভাংচুর শেষে বিকালের দিকে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় পড়ে থাকা কাঁচ ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে দেয়। দিনব্যাপী চলতে থাকা এ আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বাসচালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করে। চালকরা তাদের লাইসেন্স দেখাতে না পারলে, শিক্ষার্থীরা গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে সেখানেই বাসটি আটকে রাখে। বিভিন্ন স্থানে লাইসেন্সবিহীন চালকের পুলিশের গাড়ি চালনার বিষয়টি ধরা পড়ে। অনেক সার্জেন্টের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় শিক্ষার্থীরা মোটরবাইক আটকে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে কথা শুনিয়ে দেন। এর বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ছাত্ররা পুলিশ সদস্যদের ফুল উপহার দিয়েছে। শনির আখড়ায় একটি ছোট ট্রাকের (পিকআপ) ড্রাইভিং লাইসেন্স তল্লাশি করতে গেলে চালক এক শিক্ষার্থীর ওপর চালিয়ে দেয়। আহমেদ ফারহান ওরফে ফয়সাল নামে ওই শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন গতকাল রাজধানীর বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। গাজীপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
সরকারি বিজ্ঞান কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাজিব হায়দার জানান, সড়কে মানুষের জীবনের ন্যূনতম মূল্য নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। কিন্তু বিচার হচ্ছে না। তেজগাঁও কলেজের আরেক শিক্ষার্থী মাহামুদুল হক জানান, প্রাণ নিয়ে এভাবে আর খেলা করতে দেয়া যায় না।
সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কিছুক্ষণের মধ্যে এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হবে।
এদিকে, আজ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষামন্ত্রী শোকার্ত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শোক সংবরণ করে শান্ত থাকতে এবং ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানান।
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর নিহত ও কয়েকজন শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের অনাকাক্ষিত দুর্ঘটনায় সহপাঠীর মৃত্যুতে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ আমরা শিক্ষা পরিবারের সবাই শোকার্ত।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ওই দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং সড়ক পরিবহনকে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করেছে। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়ে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ অব্যাহত আছে।
সভায় মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষক, অভিভাবক ও অন্যদের শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে শিক্ষা কার্যক্রমে সহযোগিতা করার জন্য ভূমিকা রাখতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।