ইপেপার । আজ শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

গাংনীতে এলজিইডি কর্মকর্তা ও অসাধু ঠিকাদারের কান্ড!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৯:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অগাস্ট ২০১৮
  • / ৩৮০ বার পড়া হয়েছে

হাঁটুজলের মধ্যে চলছে সড়ক নির্মাণ কাজ!
গাংনী অফিস: মেহেরপুরের গাংনীতে নতুন পাঁকা রাস্তা নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডি কর্মকর্তার যোগসাজসে কোন প্রকার রুলিং ছাড়াই নি¤œমানের মালামাল দিয়ে হাঁটুজলের মধ্যে রাস্তা নির্মাণের কাজ চলমান রেখেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আর স্থানীয়রা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। গাংনী উপজেলা এলজিইডি’র তথ্য মতে, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে খুলনা প্রজেক্টের আওয়তায় ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়নের ভোমরদহ গ্রামের মোড় পূর্বপাড়া পযন্ত ৭শ ৭ মিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু এ কাজটি গত জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। সেই সময়ে কাজটি না করে বর্তমানে ভরা বর্ষায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে রাস্তা নির্মাণ কাজের মালামাল নি¤œমানের হওয়া, রাস্তায় রুলিং না করা ও হাটু জলের মধ্যেদিয়ে মিক্সারকৃত মালামাল ফেলা নিয়ে ঠিকাদার ও স্থানীয়দের উত্তেজনা হলেও নিরব রয়েছে এলজিইডি। এদিকে সরকারী নিয়ম বর্হিভূতভাবে অফিসের লোকজন বাদেও কাজ চালালেও তাতেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গাইলেন এলজিইডি।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৭শ’ ৭মিটার রাস্তায় ১ টনের একটি রুলার এসে সড়কে এক পাক না যেতেই রুলারে সমস্যা দেখা দিলে সেটা ঘুরে যায়। রুলারে সমস্যা থাকায় কোন প্রকার রুলিং ছাড়াই ২ ও ৩ নং ইট ভেঙ্গে ১ ডালি খোয়া ও ৩ ডালি নি¤œমানের বালু মিশ্রণ করে সাথে হাটু জলের মধ্যে বিছিয়ে রাস্তা নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন। অথচ ওই রাস্তায় ৮টনের রুলার দিয়ে কয়েক দফা ঢলার পরেই নিয়মমাফিক হয়। কিন্তু সেখানে রুলিং ছাড়াই এ কাজ করা নিয়ে রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন হুমকি ধামকি দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ তাদের। পরে উপায় না পেয়ে ওই এলাকার অনেকে সাংবাদিক ও প্রশাসনের পাশাপাশি মোখিকভাবে এলজিইডির নিবার্হী প্রধানের নিকট অভিযোগ করেই কোন ফল মেলাতে পারেনি বলে জানান তারা। স্থানীয়রা জানান তারপরও নি¤œমানের সামগ্রী পানির ভিতর দিয়ে নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এ কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছে উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তারা।
ভমরদহ গ্রামের স্থানীয় আলী হোসেন জানান, নি¤œমানের ইট ও বালু বালু দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজে আমি বাধা দিই বলে ঠিকাদার পিন্টু আমাকে গিলে খেয়ে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছেন। আরেক গ্রামবাসী রেজাউল ইসলাম জানান, ছোট একটি রুলার নিয়ে আসে সেটি নষ্ট হওয়ায় ঘুরে যায়। তারপর আর কোন রুলার আসেনা। রুলিং না করেই হাটু জলের মধ্যে রাস্তা নির্মাণ শুরু করে। বাধা দিলে বলে চাঁদাবাজ।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া এহসানুলের প্রতিনিধি গাংনীর কাজিপুরের পিন্টু জানান, এলজিইডি অনুমতি দিয়েছেন তার জন্য আমি পানির ভিতরে কাজ করছি আর মালামাল কম দেওয়ার বিষয়ে এলজিইডি দেখবে জনগন বাধা দেবে কেন বলে তিনি জানান। এলজিইডির এ কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী সামসুল হক জানান, ল্যাব টেষ্টে কাজের অনুমতি দিয়েছে পানি থাকলে কি আর না থাকলে কি কাজ চলবে।
তবে ল্যাব প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, সড়কে পানি জমে থাকলে সেই পানি শুকিয়ে আবার নতুন করে বালু ফেলে রুলিং করে তারপর সড়ক নির্মাণ করতে হবে। এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী রুহুল ইসলাম জানান, নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে হাটু জলে রাস্তা নির্মাণ করা হলেও ফাইনালে তো আমরা টেষ্ট করব। জেলা ল্যাবে টেষ্ট করা হবে সমস্যা হলে আবার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ঠিক করে দিতে হবে। অন্যদিকে কাজের নিকট অফিসের লোকজন কাজের কাছে যাবে এমন নিয়ম নেই।
জাগোও মেহেরপুরের সভাপতি ও বিশিষ্ট সংগঠক সিরাজুল ইসলাম বলেন, অনেক ঠিকাদার এলজিইডি অফিস ম্যানেজ করে নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছে। মাসখানি না যেতেই রাস্তা ভেঙ্গে পরছে আর দায় গিয়ে পরছে আওয়ামী লীগের উপর। এসব কর্মকর্তা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গাংনী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নিবার্হী কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, আমি এলজিইডির সাথে কথা বলে এবং নিজে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়াও পানি থাকা অবস্থায় কিভাবে এ রাস্তা নির্মাণ করে চলেছে বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এলজিইডির জেলা নিবার্হী প্রকৌশলী আজিম উদ্দীন সর্দার জানান, আমি মেহেরপুরের বাইরে আছি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

গাংনীতে এলজিইডি কর্মকর্তা ও অসাধু ঠিকাদারের কান্ড!

আপলোড টাইম : ০৯:০৯:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অগাস্ট ২০১৮

হাঁটুজলের মধ্যে চলছে সড়ক নির্মাণ কাজ!
গাংনী অফিস: মেহেরপুরের গাংনীতে নতুন পাঁকা রাস্তা নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডি কর্মকর্তার যোগসাজসে কোন প্রকার রুলিং ছাড়াই নি¤œমানের মালামাল দিয়ে হাঁটুজলের মধ্যে রাস্তা নির্মাণের কাজ চলমান রেখেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আর স্থানীয়রা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। গাংনী উপজেলা এলজিইডি’র তথ্য মতে, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে খুলনা প্রজেক্টের আওয়তায় ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়নের ভোমরদহ গ্রামের মোড় পূর্বপাড়া পযন্ত ৭শ ৭ মিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু এ কাজটি গত জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। সেই সময়ে কাজটি না করে বর্তমানে ভরা বর্ষায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে রাস্তা নির্মাণ কাজের মালামাল নি¤œমানের হওয়া, রাস্তায় রুলিং না করা ও হাটু জলের মধ্যেদিয়ে মিক্সারকৃত মালামাল ফেলা নিয়ে ঠিকাদার ও স্থানীয়দের উত্তেজনা হলেও নিরব রয়েছে এলজিইডি। এদিকে সরকারী নিয়ম বর্হিভূতভাবে অফিসের লোকজন বাদেও কাজ চালালেও তাতেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গাইলেন এলজিইডি।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৭শ’ ৭মিটার রাস্তায় ১ টনের একটি রুলার এসে সড়কে এক পাক না যেতেই রুলারে সমস্যা দেখা দিলে সেটা ঘুরে যায়। রুলারে সমস্যা থাকায় কোন প্রকার রুলিং ছাড়াই ২ ও ৩ নং ইট ভেঙ্গে ১ ডালি খোয়া ও ৩ ডালি নি¤œমানের বালু মিশ্রণ করে সাথে হাটু জলের মধ্যে বিছিয়ে রাস্তা নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন। অথচ ওই রাস্তায় ৮টনের রুলার দিয়ে কয়েক দফা ঢলার পরেই নিয়মমাফিক হয়। কিন্তু সেখানে রুলিং ছাড়াই এ কাজ করা নিয়ে রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন হুমকি ধামকি দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ তাদের। পরে উপায় না পেয়ে ওই এলাকার অনেকে সাংবাদিক ও প্রশাসনের পাশাপাশি মোখিকভাবে এলজিইডির নিবার্হী প্রধানের নিকট অভিযোগ করেই কোন ফল মেলাতে পারেনি বলে জানান তারা। স্থানীয়রা জানান তারপরও নি¤œমানের সামগ্রী পানির ভিতর দিয়ে নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এ কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছে উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তারা।
ভমরদহ গ্রামের স্থানীয় আলী হোসেন জানান, নি¤œমানের ইট ও বালু বালু দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজে আমি বাধা দিই বলে ঠিকাদার পিন্টু আমাকে গিলে খেয়ে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছেন। আরেক গ্রামবাসী রেজাউল ইসলাম জানান, ছোট একটি রুলার নিয়ে আসে সেটি নষ্ট হওয়ায় ঘুরে যায়। তারপর আর কোন রুলার আসেনা। রুলিং না করেই হাটু জলের মধ্যে রাস্তা নির্মাণ শুরু করে। বাধা দিলে বলে চাঁদাবাজ।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া এহসানুলের প্রতিনিধি গাংনীর কাজিপুরের পিন্টু জানান, এলজিইডি অনুমতি দিয়েছেন তার জন্য আমি পানির ভিতরে কাজ করছি আর মালামাল কম দেওয়ার বিষয়ে এলজিইডি দেখবে জনগন বাধা দেবে কেন বলে তিনি জানান। এলজিইডির এ কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী সামসুল হক জানান, ল্যাব টেষ্টে কাজের অনুমতি দিয়েছে পানি থাকলে কি আর না থাকলে কি কাজ চলবে।
তবে ল্যাব প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, সড়কে পানি জমে থাকলে সেই পানি শুকিয়ে আবার নতুন করে বালু ফেলে রুলিং করে তারপর সড়ক নির্মাণ করতে হবে। এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী রুহুল ইসলাম জানান, নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে হাটু জলে রাস্তা নির্মাণ করা হলেও ফাইনালে তো আমরা টেষ্ট করব। জেলা ল্যাবে টেষ্ট করা হবে সমস্যা হলে আবার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ঠিক করে দিতে হবে। অন্যদিকে কাজের নিকট অফিসের লোকজন কাজের কাছে যাবে এমন নিয়ম নেই।
জাগোও মেহেরপুরের সভাপতি ও বিশিষ্ট সংগঠক সিরাজুল ইসলাম বলেন, অনেক ঠিকাদার এলজিইডি অফিস ম্যানেজ করে নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছে। মাসখানি না যেতেই রাস্তা ভেঙ্গে পরছে আর দায় গিয়ে পরছে আওয়ামী লীগের উপর। এসব কর্মকর্তা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গাংনী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নিবার্হী কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, আমি এলজিইডির সাথে কথা বলে এবং নিজে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়াও পানি থাকা অবস্থায় কিভাবে এ রাস্তা নির্মাণ করে চলেছে বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এলজিইডির জেলা নিবার্হী প্রকৌশলী আজিম উদ্দীন সর্দার জানান, আমি মেহেরপুরের বাইরে আছি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।