বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা
- আপলোড টাইম : ০৯:৩২:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ অগাস্ট ২০১৮
- / ৬৪৯ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে গতকালও বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানীজুড়ে। সকাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে কার্যত প্রধান প্রধান সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে ক্রমে নগরীতে গণপরিবহন চলাচল কমে আসে। দফায় দফায় বিক্ষোভ চলাকালে কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এদিকে দুপুরে অবৈধ ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভা শেষে নগরীতে চলাচলকারী পরিবহনে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অবৈধ চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। রোববার শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় মারা যান। এতে আহত হন আরও ১০ থেকে ১২ শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করে। তারা শতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করে। শিক্ষার্থী মৃত্যুর বিষয়ে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের হাসিমুখে প্রতিক্রিয়া দেন। যা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা হয়। পরের দিন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে নৌ-মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠে। মন্ত্রী গতকাল হাসিমুখে কথা বলায় দুঃখ প্রকাশ করেন। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অনেকটা অচলাবস্থা ছিল। গতকালও সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নামে। গতকাল সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধও রাখা হয়। আজও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে বন্ধ করার তথ্য জানিয়েছে অভিভাবকদের। মঙ্গলবার নগরীর মতিঝিল, উত্তরা, ফার্মগেট, মিরপুর, ধানমন্ডিসহ আরো কিছু এলাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। ব্যস্ততম সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করায় আশপাশের এলাকায় যানজট লেগেছিল চরমে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অনেক গাড়ি ভাঙচুর করেন। বেশকিছু বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়। ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর খবর পেয়ে অনেক মালিক-চালকরা ভয়ে যানবাহন বের করেননি। যানবাহন কম থাকায় ও যানজটের কারণে সাধারণ যাত্রীদের দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। একাধিক এলাকায় বিক্ষোভ চলায় অনেকটা অচল হয়ে পড়ে ঢাকা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনেন। সরজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিয়েই বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। আর সঙ্গে ছিল তাদের ৯ দফা দাবি। গতকাল দুপুরে মতিঝিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা শাপলা চত্বর ঘেরাও করেছেন। এ সময় তারা নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ ও ঘাতক বাস চালকদের ফাঁসির দাবি জানান। প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী শাপলা চত্বর এলাকায় অবস্থান নেয়ায় ব্যস্ততম ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে ওই সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। ওই সময় তারা একটি বাস ভাঙচুর করেন। পূর্ব-ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টার দিকে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেটে সড়ক আটকে রেখে অবরোধ করেন। এতে ব্যস্ততম ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় ২ ঘণ্টা কাওরান বাজার, বিজয় সরণি সড়কে যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিমানবন্দর সড়কে বাস দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনায় ঘাতক জাবালে নূর পরিবহনের চালককে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে ফাঁসি দেয়া, নৌ পরিবহনমন্ত্রীর পদত্যাগ ও নিরাপদ সড়কের দাবি জানান।
অবরোধে প্রায় ৫-৬ শ’ শিক্ষার্থী অংশ নেন। এদিকে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সাইন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন সিটি কলেজ এবং ধানমন্ডি আইডিয়ালসহ বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর রোড, নীলক্ষেত এবং শাহবাগ থেকে সাইন্সল্যাব এলাকায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের অবরোধ ভেদ করে হিমাচল পরিবহনের একটি বাস সাইন্সল্যাব মোড়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সকাল সাড়ে ১১টায় মিরপুর-১ নম্বর সড়ক অবরোধ করেন কমার্স কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা দু’টি বাসে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর চালায়। মিরপুর-১০ নম্বর চত্বরেও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক আটকে রেখে অবরোধ করেন। এ সময় তারা জসীম উদ্দীন রোডে এনা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেন। এছাড়া ৫টি বাস এবং একটি পিকআপ ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বিমানবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিক্ষার্থী ও পুলিশ-র্যাব’র সঙ্গে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। দুপুরের পরে রামপুরা ব্রিজে শিক্ষার্থীদের অবরোধ করতে দেখা যায়। এতে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।
ট্রাফিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ততম সড়কে অবস্থান নেয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। কর্মদিবস থাকায় পুরো নগরীতেই ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। গাড়ি ভাঙচুর, যানবাহনে আগুন লাগানোর কারণে বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়। কিছু কিছু এলাকায় শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে অবস্থান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। আর যেসব স্থানে শিক্ষার্থীরা অনড়ভাবে অবস্থান নিয়েছিল সেখান থেকে তাদের সরাতে বেগ পেতে হয়েছে। কর্মদিবসে শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থানের কারণে পুরো নগরীতে ব্যাপক যানবাহন সংকট দেখা যায়। ট্রাফিক কর্মকর্তাদের এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনেক হিমশিম খেতে হয়।