সংলাপ সংযোগ
- আপলোড টাইম : ০৯:৩৯:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুলাই ২০১৮
- / ৪৭০ বার পড়া হয়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট: শ্রাবণের গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যেই দেশের রাজনীতির বাতাসে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। কাকঁভেজা বৃষ্টির দিনে যেন রাজনৈতিক অঙ্গনে বরফ গলতে শুরু করেছে। বিদেশীদের অব্যাহত চাপ এবং নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন ‘সংলাপ ইস্যু’য় অনেকটা নমনীয়। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যাপারে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল কঠোর অবস্থানে। বার্নিকাটের দৌঁড়ঝাপ আর দিল্লির ‘সব দলের অংশগ্রহণ এবং জনগণের ভোটে নির্বাচন’ বার্তা নির্বাচনের নামে জনগণকে ক্ষমতাসীনদের বায়স্কোপ দেখানোর স্বপ্ন চূড়মার করে দিয়েছে। বাধ্য হয়েই সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের পথে হাটতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নেতাদের এই পরিবর্তন গণতন্ত্রের জন্য শুভ বার্তা। যুদ্ধক্ষেত্রেও সংলাপ হয়। সংলাপই সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
নির্বাচনী ইস্যুতে বছরের পর বছর ধরে বিএনপি, ডান-বামদলসহ দেশের বেশির ভাগ দল, সুশীল সমাজ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপের তাগিদ দিয়ে আসছেন। নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়েই তারা মূলত সংলাপ চায়। জাতিসংঘের মহাসচিবসহ দাতাদেশ, সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংলাপের মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্র প্রস্তুতের উপদেশ দেয়। বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম-বিতর্কের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সবার দাবি-আবেদন-উপদেশ-অনুরোধ হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে ‘কোনো সংলাপ নয়’ শক্ত অবস্থান নেয় ক্ষমতাসীন দল। অবশেষে ২৭ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে সংলাপে বসার প্রয়োজন নেই; তবে টেলিফোনে কথাবার্তা হতে পারে। ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য ‘নিছক কথার কথা’ নয়। পরিস্থিতিই তাকে এই পথ বাতলে দিয়েছে। প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংলাপের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফোন পেলে ফিরতি কল করবো। এলডিপির সভাপতি কর্ণেল (অব) অলি আহমদ বলেছেন, আমরা সংলাপের অপেক্ষায় রয়েছি।
বিএনপিসহ সকল দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের টেলিসংলাপের ইচ্ছা প্রকাশ পায় মূলত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে ঢাকায় কর্মরত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লম বার্নিকাটের বৈঠকের পর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র চর্চা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরে মার্শা বার্নিকাট সিইসিকে বলেছেন, ‘আমি এখানে যেটা বলি, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের হয়েই বলি। আমার কোনও মন্তব্যে কারও দ্বিমত থাকলে তিনি এটা নিয়ে কথা বলতেই পারেন। মত প্রকাশ এবং সমালোচনা বিতর্ক গণতন্ত্রে সৌন্দয্য। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্থানীয় ও জাতীয় সকল নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায়। বার্নিকাটের এই বক্তব্যে প্রকাশ ঘটে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটি চায় বাংলাদেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার হোক; মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পাবে। গত সাপ্তাহে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দিল্লি গিয়েছিলেন। তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে মোদী সরকার চায় বাংলাদেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার। চীনের প্রভাব এবং পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির কারণে বাংলাদেশে নির্বাচন ইস্যুতে ওয়াশিংটন ও দিল্লি এখন একাট্ট। ভারতের বিগত কংগ্রেস ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী প্রতিবেশি দেশের নির্বাচনের সময় যে ভুল পথে পা বাড়িয়েছিল তার প্রায়চিত্র দলটি করেছে নিজ দেশে নির্বাচনে ভরাডুবির মধ্যদিয়ে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ ইস্যুতে কথাবার্তা বলছেন। গত সাপ্তাহে ২৪ জুলাই তিনি হঠাৎ করে পুরানা পল্টনস্থ সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান। সেখানে তাকে স্বাগত জানালেও রাজনীতি নিয়ে কোনো কথাবার্তা বলার সুযোগ পাননি। বাংলা ভিশনের টকশোতে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ওবায়দুল কাদের এসেছিলেন সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য। অফিসে এলে স্বাগত জানাই। তার সঙ্গে নির্বাচন বা অন্য কোনো বিষয়ে আমাদের কথা হয়নি। আমি তাকে বলেছি নির্বাচন নিয়ে দেশে প্রহসন তৈরি করা হয়েছে। এই প্রহসন রুখে দাঁড়াতেই আমরা ৮ দলীয় জোট গঠন করেছি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশের মানুষের মধ্যে যে আকাঙ্খা তৈরি হয়েছিল সে আকাঙ্খা ফিরিয়ে আনতে আর একটা গণঅভ্যূত্থান ও গণজোয়ারের প্রয়োজন। পরের দিন ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সচিবালয়ে দেখা করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী ও বিএনএফের ব্যারিষ্টার নাজমূল হুদা। ইতোমধ্যেই নাজমূল হুদা কয়েক দিন আগে ১৪ দলীয় জোটে যোগদানের আবেদন করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ২৭ জুলাই কয়েকটি দলের নেতার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম বলেন, এই মুহূর্তে কার্যকর সংলাপের প্রশ্নে বা কার্যকর উদ্যোগের প্রশ্নে অবশ্যই ওবায়দুল কাদেরকে টেলিফোন করতে হবে অথবা চিঠি দিতে হবে। বিএনপির মহাসচিব চিঠি দিলে লাভ নেই। আওয়ামী লীগ যদি বলে বিএনপিকে ফোন করতে হবে তার অর্থ হচ্ছে সংলাপকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। মির্জা ফখরুল টেলিফোন করলে কিছু হবে না। যদি ওবায়দুল কাদের ফোন করেন, যে আসেন আমরা বসি তখন হয়ত মহাসচিব বলতে পারেন অব্যশই বসবো, কোথায় বসবো, কখন বসবো, সময় ও স্থানটা বলেন। আলোচনা করলেই আস্তে আস্তে সমস্যার সমাধান হয়।
অক্টোবরে দেশের রাজনীতির চিত্র পাল্টে যাবে মন্তব্য করে গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো সংলাপের সম্ভাবনা নেই। ভোটের মাত্র তিন মাস বাকি। এই তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। এর মধ্যে বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো সংলাপের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। তাই বলে সবই কি আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমিত থাকবে? আমরা কি কথাবার্তা বলবো না? টেলিফোনে কথা বলতে অসুবিধা কী? আমি বলেছি, বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেল (মূলত মহাসচিব) কখনো আমাকে কোনো বিষয়ে ফোন করেননি। প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আলোচনা যে কোনোভাবেই হতে পারে। টেলিফোনে হোক বা কোথাও এক সঙ্গে বসে হোক, আমরা রাজি আছি আলোচনার জন্য। দেখা যাক, তারা যদি টেলিফোন করে আমরা তাদের ফোন ব্যাক করব। অপেক্ষায় থাকলাম, আমাদের ফোন খোলা আছে। আমরা বারবারই আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছি। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। তাই আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে বিশ্বাসী। আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান বের করা সম্ভব। ক্ষমতাসীন দল যদি আলোচনা করতে চায় আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি।