সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ : পদোন্নতি বঞ্চিতের শঙ্কা
- আপলোড টাইম : ০৭:৫৩:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুলাই ২০১৮
- / ৩৮৯ বার পড়া হয়েছে
সম্মেলন থেকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফিরছেন ডিসিরা, যে সরকারে থাকে তারাই প্রশাসনকে ব্যবহার করে
ডেস্ক রিপোর্ট: তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শেষ হয়েছে। পাঁচ চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ ফিরে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসকরা। পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হবেন কিনা সে শঙ্কাও আছে তাদের। গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সেমিনারের মধ্যদিয়ে শেষ হলো এবারের ডিসি সম্মেলন। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে, অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা। যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষার করা। নদ-নদী দখল ও দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি বন্ধ এবং মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখার ক্ষমতা। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরছেন ডিসিরা।
সরকারি দলের লোকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা নাজেহাল হয়েছিলেন। সেটি প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাস পেয়েছেন ডিসিরা। তবে কাগজ-কলমে অনেক আইন বাস্তবায়নের ক্ষমতা ফিরে পাননি ডিসিরা। তাদের মতে, জেলা জজ ও পুলিশরা এখন অনেক ক্ষমতা ভোগ করছেন। তারা সেটা পাচ্ছেন না। সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো বাস্তবায়নের অনেক বাঁধা-বিপত্তির আশঙ্কা করছেন ডিসিরা। কারণ সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বর্তমান সরকারকে বেশি সুযোগ সুবিধা দিলে যদি ক্ষমতায় না আসে তখন তারা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হবেন সেই চিন্তাও রয়েছে। এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ৩৪৭টি প্রস্তাব ছাড়াও তাৎক্ষণিক বিভিন্ন দাবির বিষয়ে ২৫০ প্রস্তাব রেখে গেছেন ডিসিরা। এগুলো পর্যবেক্ষণে রেখেছে সরকার। জেলা প্রশাসকদের দাবিগুলো পূরণ না হলে সামনে সরকার ও মন্ত্রণালয়গুলো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এমন তথ্য সম্মেলনে আসা ডিসিদের সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলা প্রশাসক বলেন, আসলে যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন তারাই প্রশাসনকে ব্যবহার করে। কোনো সরকার সরকারি কর্মচারীদের (আচরণ) বিধিমালা মেনে কাজ করতে দেয় না। সে কারণে অনেক ডিসি অনেক সুযোগ সুবিধা নেয়, আবার কেউ পায় না। বিচার বিভাগ আলাদা হওয়ার পর জেলা জজ ও পুলিশ বাহিনী এখন অনেক ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। সেটা ডিসিরা পারছেন না।
যেসব প্রস্তাব আদায় করতে পারেনি ডিসিরা সেগুলো হচ্ছে, ফৌজদারি আইনের কয়েকটি ধারা প্রয়োগ করার ক্ষমতা তাদের হাতে নিতে চান। ফৌজদারি কার্যবিধি (সংশোধন) আইন ২০০৯ এর ৮৩ (ক) ধারা বর্তমানে ৪৩৫ ধারায় নথি তলবসহ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ও ১৪৫ ধারায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ক্ষমতাও দেওয়া হলো না। ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বিশেষ ভাতা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য চাওয়া হচ্ছে ঝুঁকি ভাতা। গ্রাম আদালতের কার্যক্রম দুর্বল। ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে বিরোধ নিস্পত্তিতে যথাযথ দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা।
উপজেলা প্রশাসনের পুরানো অর্গানোগ্রাম সংশোধন করাসহ বিভিন্ন দাবি আদায় করতে পারেননি ডিসিরা। আদালত অবমাননা মামলায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে মাঠ প্রশাসনের অভিমত গ্রহণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (ফেসবুক) ব্যবহারের নূন্যতম বয়স নির্ধারণ করা। আদালত অবমাননা মামলায় হাজিরা দেয়া থেকে মুক্তি চান ডিসিরা। কিন্তু তারা সেটি আদায় করতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও শিল্পমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রীসহ সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী-উপদেষ্টারা জাতীয় নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রতিটি জেলার নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেলেন ডিসিরা। গ্রহণযোগ্য, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন সারাদেশের মানুষ। সে কারণে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। মূলত এ কারণেই কাজটিকে জেলা প্রশাসকরা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছেন।
তিন দিনের সম্মেলনে ২২টি অধিবেশন ছিল। এর মধ্যে ছিল উদ্বোধনী অধিবেশন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনা, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও সমাপনী অধিবেশন। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ছিল ১৮টি কার্য-অধিবেশন। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রতিটি কার্য-অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ মোট ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ডিসিরা। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, সচিব ও সংস্থা প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। সরকারের নীতি-নির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে মুখোমুখি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। এবার তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুরু হয় গত ২৪ জুলাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন।ৎ
গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলেও গতকাল শুক্রবার ডিসি সম্মেলন শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে নাগরিকদের সর্বোচ্চ সরকারি সেবা নিশ্চিত করা, সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি বন্ধ, যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য পরিবহন ও আমদানি-রপ্তানি নির্বিঘ করা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সা¤প্রদায়িকতা দূর করা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিনা দ্বিধায় আপনারা টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি, সন্ত্রাস এবং মাদক নির্মূল করবেন। এখানে কে কোন দল করে, কে কী করে সেগুলো দেখার কোনো দরকার নেই। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেয়া। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় ডিসিদের এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারি সেবা পেতে মানুষের হয়রানি বন্ধ করাসহ ডিসিদের প্রতি নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।