কমেছে জিপিএ-৫ ও পাসের হার : সারাদেশে জিপিএ-৫’র সংখ্যা ২৯ হাজার ২৬২ : যশোর বোর্ডে ২ হাজার ৮৯
- আপলোড টাইম : ১০:১১:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুলাই ২০১৮
- / ৬৫১ বার পড়া হয়েছে
এইচএসসি/সমমানের ফলপ্রকাশ: সারাদেশে পাসের হার ৬৬.৬৪ শতাংশ : যশোর বোর্ডে ৬০.৪০ : চুয়াডাঙ্গায় ৫৩.৯০ শতাংশ
৭ বছরে সর্বনিম্ন ফল; যশোর বোর্ডের ১০ জেলার ফলাফলে চুয়াডাঙ্গা ৭ম : ৮ম মেহেরপুর
নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে একযোগে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এবার গড় পাসের হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সারাদেশে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন শিক্ষার্থী। পাসের হারে এবারো ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে মেয়েরা। গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩৭ হাজার ৭২৬ জন। সেই হিসাবে এবার উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হার কমেছে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ পয়েন্ট। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৮ হাজার ৪৬৪ জন। প্রকাশের পর পরই খুদেবার্তা ও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে ফলাফল সংগ্রহ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা উল্লাসে ফেটে পড়ে। উৎকণ্ঠা ছিল ভালো ফলাফলের প্রত্যাশাও ছিল। সব কিছু ছাপিয়ে ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙ্গা উল্লাস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ফলাফল পেতে কলেজগুলোতে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। ফলাফল প্রকাশের পর ব্যক্তিগত সাফল্য রূপ নেয় সামষ্টিক অর্জনে। তাইতো সম্মেলিত আনন্দে মুখর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণ। সকলের অভিব্যক্তিতেও ছিল উচ্ছ্বাস আর আনন্দের বর্ণিল প্রকাশ।
দশ শিক্ষা বোর্ডে এবার সব মিলিয়ে পরীক্ষার্থী ছিল ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন। এর মধ্যে এইচএসসিতে আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৫৮ জন। অর্থাৎ, পাসের হার ৬৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর তাদের মধ্যে ২৫ হাজার ৫৬২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। মাদ্রাসা বোর্ড থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯৭ হাজার ৭৯৩ জনের মধ্যে ৭৬ হাজার ৯৩২ জন পাস করেছে। অর্থাৎ, পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ২৪৪ জন। আর কারিগরি ও ভোকেশনাল বোর্ড থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৮৯ হাজার ৮৯ জন। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৪৫৬ জন। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। আর ৪০০টি প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থীই পাস করেছে।
আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে বরিশাল বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৭০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সবচেয়ে কম পাস করেছে দিনাজপুর বোর্ডে। এ বোর্ডে পাসের হার ৬০ দশমিক ৪০ শতাংশ। কুমিল্লা বোর্ডে গত বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি পাস করেছে। এবারো পাসের হার ৬০ দশমিক ২১ শতাংশ। ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৬৬ দশমিক ১৩ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৬৬ দশমিক ৫১ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৬০ দশমিক ৪০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৬২ দশমিক ৭৩ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৬২ দশমিক ১১ শতাংশ। মাদরাসা বোর্ডে এবার ৯৭ হাজার ৭৯৩ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৭৬ হাজার ৯৩২ জন। এ বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অন্য নয়টি বোর্ডে পাসের হার কমলেও মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার বেড়েছে এক দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে জিপিএ-৫ কমেছে। এ বছর মাদরাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ২৪৪ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮১৫ জন। জিপিএ-৫ কমেছে ৫৭১ জন। কারিগরি বোর্ডে এক লাখ ১৮ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮৯ হাজার ৮৯ জন। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পাসের হার কমেছে পাঁচ দশমিক ৮৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৪৫৬ জন। গত বছর দুই হাজার ৬৬৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। গত বছরের চেয়ে জিপিএ-৫ কমেছে ২১৩ জন। ঢাকা বোর্ডের অধীনে বিদেশের সাতটি কেন্দ্রে ২৮৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ২৬৩ জন। পাসের হার ৯২ দশমিক ২৮। ১৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
গত সাত বছরের মধ্যে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সর্বনিম্ন ফল হয়েছে। গত বছরের চেয়ে কমেছে জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও। বেড়েছে নেতিবাচক শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে। পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে থাকলেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে ছেলেরা। চলতি বছর পাসের হার কমার জন্য মানবিক বিভাগে পাসের হার কমা, ইংরেজি, পদার্থ ও আইসিটিতে খারাপ ফলকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, যশোর বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় এবার পাসের হার ও জিপিএ কমেছে। পাসের হার ৬০ দশমিক ৪০। ফলাফলে দেখা গেছে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৮৯ জন। গতবার বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ০২। জিপিএ- ৫ প্রাপ্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৪৭। যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন খুলনা বিভাগের ১০ জেলার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে শীর্ষে খুলনা এবং সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে মাগুরা জেলা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য জানা গেছে। যশোর বোর্ডের ১০ জেলার মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে খুলনা জেলা, দ্বিতীয় স্থানে যশোর, তৃতীয় স্থানে কুষ্টিয়া, চতুর্থ স্থানে সাতক্ষীরা, পঞ্চম স্থানে বাগেরহাট, ষষ্ঠ স্থানে ঝিনাইদহ, সপ্তম স্থানে চুয়াডাঙ্গা, অষ্টম স্থানে মেহেরপুর, নবম স্থানে নড়াইল এবং সর্বশেষ দশম স্থানে রয়েছে মাগুরা জেলা। ৬ স্থান অধিকারী ঝিনাইদহ জেলার ৭১টি কলেজের ১৫ হাজার ৫৭৭ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯ হাজার ৩০ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এ জেলার পাসের হার ৫৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সপ্তম স্থান অধিকারী চুয়াডাঙ্গা জেলার ২৩টি কলেজের ৬ হাজার ৮৪৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ৬২৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এ জেলার পাসের হার ৫৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। অষ্টম স্থান অধিকারী মেহেরপুর জেলার ১৯টি কলেজের ৪ হাজার ০১ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২ হাজার ১০৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এ জেলার পাসের হার ৫২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ জেলার পাসের হার ৪৯ দশমিক ৪০ শতাংশ।
আলমডাঙ্গা অফিস জানিয়েছে, চলতি ২০১৮ সালের অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী আলমডাঙ্গা উপজেলার সকল কলেজের মধ্যে আলমডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজের ৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। তারা হলেন- আলমডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক আলম হোসেনের ছেলে নাইম হাসান অয়ন, একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মোনায়েম ও খাসকররা ডিগ্রী কলেজের সাইদা খানমের মেয়ে মুশফিকা খানম ও আলমডাঙ্গা সরকারী বহুমুখী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল হান্নানের মেয়ে সাবেকুন নাহার ঐশী। জিপিএ-৫ পাওয়ায় ৩ জন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আলমডাঙ্গা চারতলা মোড় সোনাপট্টিতে অবস্থিত কুটুমবাড়ী ফুড এন্ড সুইটস সার্ডেনের প্রোপাইটার আনোয়ার হোসেনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা, ফুলের শুভেচ্ছা ও মিষ্টিমুখ করানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ্ আলম মন্টু, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার হামিদুল ইসলাম আজম, যুগ্ম সম্পাদক প্রশান্ত বিশ্বাস, সাংবাদিক সদু, সহকারী অধ্যাপক শেখ শফি উজ্জামান, কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ সাংবাদিক জামসিদুল হক মুনিসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীবৃন্দ।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা সদরের বড় সলুয়া নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজ কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জেলার দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। এবারে এইসএসসি পরীক্ষায় ১৮৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১৪ জন ও বাণিজ্য বিভাগে ১২ জন পরিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে শতভাগ ফলাফল নিশ্চিত করলেও মানবিক বিভাগে ১৫৭ জন পরিক্ষার্থী অংশগ্রহন করে ১০৭ জন উত্তীর্ণ হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে এ গ্রেড পেয়েছেন ১৪ জন। মোট পাশের হার ৭২.৬৭। প্রকাশিত ফলাফলে কলেজটি জেলায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করায় এলাকাবাসী কলেজের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এলাকার ঘরে ঘরে উচ্চ শিক্ষার আলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে বড় সলুয়া নিউ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন, আমরা কলেজের লেখাপড়ার মান নিয়ে সকল সময় আন্তরিক। কিন্তু কলেজটি প্রত্যান্ত গ্রাম অঞ্চলে হওয়ায় এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকার সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া এখানে গরীব ও দারিদ্র ঘরের মধ্য ও নিম্ন মেধাবী সন্তানেরা লেখাপড়া করছে। তারা পাইনা কোন লেখাপড়ার সু-ব্যবস্থা। তাই কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় শিক্ষির্থীরা ফলাফল ভালো করছে। তবে আগামীতে আরো ভালো ফলাফল করার আপ্রাণ চেষ্টা করবো।
ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, ২০১৮ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে শতভাগ পাশের ধারা অব্যাহত রেখেছে। মোট ৫১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৪ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। অন্যান্য বারের ন্যায় এ বছরও ফলাফলে শতভাগ পাশের গৌরব অর্জন করেছে ঐতিহ্যবাহী এই ক্যাডেট কলেজটি। এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ন ক্যাডেটবৃন্দ হল ক্যাডেট এখলাস, মুহতাদি, রাইন, তাহমীদ, তারিক, কায়েস, ফারদিন, সামেন, অরিত্র, জুহায়ের, নাদিম, সাজিদ, তামিম, জাভেদ, আহমেদ, দাইয়ান, আসমার, ফয়সাল, মাহমুদ, আশিব, সোহান, সাদিক, নোমান, মাহফুজ, জাহিদ, আনজুম, ইশরাক, আবির, সাকিব, রাব্বি, জামী, তানজিম, মানসিফ, শাহরিয়ার, মুরসালিন, জামান, জুবায়ের, হায়দার, রিয়াদ, ইশতিয়াক, জিসান, ওয়ালি, তৌফিক, আহনাফ, মেহেরাব, রাইন, মুহতাসিম, তামজীদ, মুহিবুল্লাহ ও ক্যাডেট ইশমাম। কলেজ অধ্যক্ষ কর্ণেল মো. সাদীকুল বারী জানান যে, ক্যাডেটদের অক্লান্ত পরিশ্রম, অভিভাবকদের আন্তরিকতা ও শিক্ষকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।