কৌশলগত অংশীদারিত্ব এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়
- আপলোড টাইম : ০১:১২:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৬
- / ৩৯৫ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যামান সম্পর্কে দীর্ঘ মেয়াদি কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সফররত চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত এবং আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে দেয়া যৌথ বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কৌশলগত অংশীদারিত্বে সম্পর্ক জোরদারের বিষয় উল্লেখ করেন। দুই দিনের সফরের প্রথম দিনে গতকাল দুপুরে ঢাকা পৌঁছলে চীনা প্রেসিডেন্টকে লালগালিচা অভ্যর্থনা জানানো হয়। পরে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। দুই নেতার উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয় ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক। যৌথভাবে উদ্বোধন করা হয় ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্প। সন্ধ্যার পর চীনা প্রেসিডেন্ট বঙ্গভবনে যান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। সেখানে চীনা প্রেসিডেন্টের জন্য নৈশ ভোজের আয়োজন করেন প্রেসিডেন্ট। এর আগে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এদিকে চীনা প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথমদিনে তার সঙ্গে আসা ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৩৬০ কোটি ডলার পৃথক বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরকে ভূরাজনৈতিক কারণে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এ সফরকে ঘিরে ইতিমধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দুই নেতার একান্ত বৈঠকের পর সেখানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে স্বাক্ষরিত হয় চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকসমূহ। এরপরই যৌথ বিবৃতি দেন চীনা প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের জায়গা থেকে ‘কৌশলগত সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের’ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে একসঙ্গে কাজ করতে চীন প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ উন্নীত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। সরকার প্রধান বলেন, দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা এগিয়ে নিতে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে নিয়ে যেতে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। এ সহযোগিতার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় চীনের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতায় সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়টি উল্লেখ করেন। ওই চুক্তির মধ্য দিয়ে সহযোগিতার ‘একটি উচ্চতর ভিত্তি’ তৈরি হলো বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, অবকাঠামো, শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ?্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সহযোগিতা জোরদারে আমরা ঐক্যমত্যে পৌঁছেছি। চীনা প্রেসিডেন্ট তার বক্তৃতায় আরো বলেন, উচ্চপর্যায়ের মতো বিনিময় এবং কৌশলগত যোগাযোগে আমরা সম্মত হয়েছি, যাতে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একটি উচ্চতর পর্যায়ের দিকে অগ্রসর হয়। দুই দেশের এই সহযোগিতা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হবে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, বাংলাদেশ চীনের ‘ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু ও ভালো অংশীদার’। প্রেসিডেন্ট শি বলেন, চীন, বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন একটি নতুন ঐতিহাসিক সূচনা বিন্দুতে এবং একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে। পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল এবং একে-অন্যকে সমর্থন করে এমন বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত চীন। এবং কৌশলগত সহযোগিতায় নতুনত্ব আনতেও চীন প্রস্তুত। এই প্রক্রিয়ায় চীন বাংলাদেশ সহযোগিতা জনগণের জন্য আরো সুফল বয়ে আনবে এবং এ অঞ্চলের শান্তি, স্থিতি ও উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট শি। তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন কৌশলসমূহের মধ্যে সঙ্গতি তৈরি, যৌথভাবে ওয়ান- বেল্ট, ওয়ান রোড উদ্যোগ নিয়ে এগোনো, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদারে চীন-বাংলাদেশ এফটিএ সম্ভাব?্যতা যাচাই এবং অবকাঠামো, উৎপাদন সক্ষমতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন, আইসিটি ও কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সহযোগিতা জোরদারে আমরা সম্মত হয়েছি। র আগে বিকাল ৩টার অল্প আগে চীনের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল কক্ষে একান্ত বৈঠকে অংশ নেন দুই নেতা। পরে চামেলী কক্ষে দুই দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ও চীনা প্রেসিডেন্ট নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ঘণ্টাব্যাপী ওই আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে দুই শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে উভয় দেশের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ পক্ষে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেন। পরে সেখানে দুই শীর্ষ নেতা যৌথভাবে ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল এবং চীনের জন্য প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোন রয়েছে।
২৭ চুক্তি, অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্তে চীন-বাংলাদেশ; পররাষ্ট্র সচিব: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পররাষ্ট্র সচিব এম. শহীদুল হক উপস্থিত দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের ব্রিফ করেন। সেখানে তিনি চীনা প্রেসিডেন্টের ‘ঐতিহাসিক’ বাংলাদেশ সফরে ‘সফল’ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মধ?্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের ‘নতুন দিগন্ত’ উন্মোচিত হয়েছে বলে মন্তব?্য করেন। শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে চীন ও বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ‘কৌশলগত সম্পর্কে’ উন্নীত হয়েছে বলেও তিনি মন্তব?্য করেন। সচিব জানান, সহযোগিতা এগিয়ে নিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুইদেশের সরকারের মধ্যে মোট ২৭টি ডকুমেন্ট সই হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক এবং ১২টি ঋণ ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে। তবে ঋণ চুক্তির আর্থিক পরিমাণ ও বিস্তারিত জানতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি। ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে’ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ‘সফল’ হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্টের সফর ঐতিহাসিক, দুইদেশের মধ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। “দুইদেশের সম্পর্কে বহুমাত্রিকতা আরও বিস্তৃত ও গভীর হবে, ব্যাপ্তি বাড়বে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এখন কৌশলগত সম্পর্কে উন্নীত হয়েছে। দুইদেশের মধ্যে আমরা সম্পর্কের নতুন অবয়ব দেখবো।’ প্রায় ৩০ বছর পর ঢাকায় আসা চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের তাৎপর্যপূর্ণ ওই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উঠে আসা বিষয়গুলোর ‘রাজনৈতিক দিক রয়েছে’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আগামীতে বিভিন্ন পর্যায়ে দুইদেশের সফর দেখা যাবে। ‘ট্রেড ও ইনভেস্টমেন্টে নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কৃৃত হয়েছে। আইসিটিতে নতুন ফ্রেমওয়ার্কের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে।’ শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ও পাটে বিনিয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছে চীন। উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ যে উন্নয়ন করেছে সেখান থেকে চীনের অনেক কিছু শেখার রয়েছে।’ জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে দুইদেশ একসঙ্গে কাজ করতেও একমত হয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, ‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ও তথ্য আদান-প্রদানে এমওইউ হয়েছে।”
ঢাকায় উষ্ণ অভ্যর্থনা: এর আগে দুপুর ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকা- বেইজিং সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেয়ার বার্তা নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকায় পৌঁছান। প্রেসিডেন্টকে বহনকারী এয়ার চায়নার বিশেষ বিমানটি বাংলাদেশের আকাশসীমায় এসে পৌঁছালে সেটিকে পাহারা দিয়ে বিমানবন্দরে নিয়ে আসে বিমানবাহিনীর দু’টি জেট বিমান। বিশেষ ফ্লাইট থেকে বিমানবন্দরে নেমে এলে তাঁকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। এ সময় তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় একটি শিশু। এরপর তিনি অভিবাদন মঞ্চে গিয়ে গার্ড অব অনার নেন এবং গার্ড পরিদর্শন করেন। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল চীনের প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার দেয়। সেখানে একুশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। এ সময় দু’দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেমাসরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ তাঁর পাশে থাকা মন্ত্রীবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কঠোর নিরাপত্তায় মোটর শোভাযাত্রা সহকারে চীনা প্রেসিডেন্টকে হোটেল লা মেরিডিয়ানে নিয়ে যাওয়া হয়। জিনপিং তাঁর ২২ ঘণ্টার সফরে ওই হোটেলেই থাকছেন। ঢাকায় ৭৯ সদস্যের চীনা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর সফরসঙ্গীদের মধ্যে আছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরোর (সিসিসিপিসি) সদস্য ওয়াং হুনিং ও লি ঝানশু, স্টেট কাউন্সিলর ইয়াং জেইচি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের মন্ত্রী সু সাউসি, অর্থমন্ত্রী লাউ জিউই, বাণিজ্যমন্ত্রী গাউ হুচেং, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ঝাউ শিয়াওছুয়েন প্রমুখ।
‘ওয়ান-বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতি ধরে এগিয়ে যাওয়া চীনের সহযোগিতা সমপ্রসারণের অংশ হিসেবে শি জিনপিংয়ের এই ঢাকা সফর। ১৯৮৬ সালে লিশিয়ানইয়ানের পর বাংলাদেশে আসা প্রথম চীনা রাষ্ট্রপ্রধান তিনি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের রাষ্ট্রপ্রধানের এ সফরকে সম্পর্কের ‘নতুন যুগের সূচনা’ বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন শি জিনপিং। এরপর তিনি ভারতের গোয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাবেন। সেখানে আজ ব্রিকস এবং আগামীকাল ব্রিকস-বিমসটেক সামিটে অংশ নেবেন শি জিনপিং। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে বিমসটেকের ওই আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছেন প্রেসিডেন্ট: প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বর্তমান ভারসাম্যহীনতা হ্রাসে চীনের বাজারে বাংলাদেশের সব পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে চীনের সফররত প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে আবদুল হামিদ বলেন, ‘বর্তমান বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা হ্রাসে আমরা চীনের বাজারে বাংলাদেশের সব পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের অনুমতির জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠকে শি জিনপিং বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে চীন তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির বিষয়টি তার দেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। আবদুল হামিদ বলেন, চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আপনার এই সফরের মধ্যদিয়ে আমাদের ঘনিষ্ঠ সার্বিক সহযোগিতার অংশীদারিত্বে এক নতুন যুগের সূচনা হবে। প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিরাজ করছে এবং দু’দেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তিনি বলেন, আপনার চীনা স্বপ্নের মতো আমরাও রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ গ্রহণ করেছি। এর লক্ষ্য হচ্ছে- ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করা। এ ক্ষেত্রে চীনকে আমরা বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি। চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, পারস্পরিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব, অনাক্রমণ, একে-অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা, পারস্পরিক কল্যাণে সহযোগিতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শ্রদ্ধার নীতির ভিত্তিতে এ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত। তিনি বলেন, আমরা সবসময়ই চীনের জাতীয় স্বার্থে সে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো বিশেষ করে এক-চীন নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছি। তিনি বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ খাতে চীনের সহযোগিতাকে আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কারণ, এগুলো আমাদের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে তারা একটি মাস্টার প্লান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, বাণিজ্য ও কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।
৬ বছর আগে ঢাকা সফরের কথা উল্লেখ করে শি জিনপিং বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে বর্তমানে চমৎকার পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ এবং আমাদের দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব এবং সচিববৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে শি জিনপিং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেন। ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন।
চীনের সঙ্গে সংসদীয় সম্পর্ক বাড়াতে চান স্পিকার: চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের সঙ্গে জাতীয় সংসদের সম্পর্ক নিবিড় করার প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। গতকাল বিকালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতে এ প্রস্তাব দেয়া হয় বলে স্পিকার সাংবাদিকদের জানান। বিকাল ৫টা থেকে ২০ মিনিট ধরে হোটেল লা মেরিডিয়ানে স্পিকারের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল শি’র সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে শিরীন শারমিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের আলোচনায় যেটা প্রাধান্য পেয়েছে সেটা হচ্ছে, ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস অব চায়না এবং আমাদের জাতীয় সংসদের মধ্যকার সম্পর্ক আরো সুসংহত করা। আমাদের সংসদ সদস্যরা যাতে আরো এক্সচেঞ্জ ভিজিটে চীনে যাওয়ার সুযোগ পান এবং তাদের কংগ্রেস সদস্যরা যাতে বাংলাদেশ সংসদে ভিজিট করতে পারেন সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি মনে করি, এই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও আইনসভার বিষয়গুলো জানা যাবে। পরে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চীনের প্রেসিডেন্টকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ একটি চমৎকার সম্ভাবনাময় দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে অনেক এগিয়েছে। বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের অগ্রগতি অন্য অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে। চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় এবং বহু বিনিয়োগকারী এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে। চীনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের সংসদের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করার বিষয়ে সফররত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদের সফর বিনিময়ের বিষয়টি এ সময় তুলে ধরা হয় বলে জানান তিনি। হুইপ মাহবুব আরা গিনি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ফারুক খান ও সংসদ সচিবালয়ের সচিব আবদুর রব হাওলাদার প্রতিনিধি দলে ছিলেন।