ইপেপার । আজ বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

স্বাগতম চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:০৪:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৪৫৮ বার পড়া হয়েছে

a0e9602efc8230c340b840fb7cca95c3-FE7F0613

সমীকরণ ডেস্ক: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুই দিনের সফরে আজ সকালে ঢাকা আসছেন। তাকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। তার এই সফরে সইয়ের জন্য সাতটি চুক্তিপত্র ও তিনটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করেছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। শি জিনপিংয়ের ঢাকায় আসার একদিন আগে বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তৈরি করা একটি সারসংক্ষেপে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তিন দশক পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটির কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সফরে অর্থায়নের জন্য উপস্থাপন করতে আরও ২৮টি প্রকল্পের তালিকাও তৈরি করেছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা। ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আবুল মনসুর মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষ ও আমাদের মধ্যে অনেক কাটছাঁটের পর ২৮টি প্রকল্পের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে চীনা অর্থায়নের জন্য শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। ক্রমান্বয়ে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দুপক্ষের মধ্যে এসব প্রকল্পের জন্য চূড়ান্ত চুক্তি হবে।
সারসংক্ষেপে দেখা যায়, একটি অনুদান, দুটি কাঠামোগত এবং তিনটি ঋণচুক্তি প্রস্তুত রয়েছে। আট কোটি ৩০ লাখ ডলারের চীনা অনুদানটি ব্যবহার হবে উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগকালে তথ্য দেয়া এবং উদ্ধার কাজ ত্বরিত করতে ফায়ার সার্ভিসের জন্য একহাজার মোটর সাইকেল কিনতে। কাঠামো চুক্তি হবে দুটি; একটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল এবং অন্যটি দাশেরকান্দি পয়ঃনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্প নিয়ে। চট্টগ্রাম মূল শহরের সঙ্গে অন্য কর্ণফুলীর ওপারকে সরাসরি যুক্ত করতে টানেল নির্মিত হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামে যানজট যেমন কমবে, তেমনি কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগের সময় কমে আসবে। কর্ণফুলি টানেল নিয়ে একটি কাঠামোগত চুক্তির পাশাপাশি দুটি ঋণচুক্তি সই হবে। এর আওতায় বাংলাদেশকে ৭০ কোটি ডলার ঋণ দেবে চীন। দাশেরকান্দি পয়ঃনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের কাঠামোগত চুক্তির সঙ্গে ২৮ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হবে। ঢাকা ওয়াসার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বালু নদী দূষণমুক্ত হওয়ার পাশাপাশি ধানম-ি, বনানী, বারিধারা, মহাখালী, তেজগাঁওসহ এলাকার পয়ঃবর্জ্য শোধন হবে। তিন ঋণ চুক্তির অন্যটি হবে ছয়টি নৌযান, তিনটি অয়েল ট্যাংকার ও তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার প্রকল্পে। সমঝোতা স্মারকগুলোর একটি চীনের আর্থিক সহায়তায় নবম, দশম ও একাদশ মৈত্রী সেতু নির্মাণের বিষয়ে। আরেকটি হবে দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে। এর আওতায় জরুরি অপারেশন কেন্দ্র নির্মাণ, সরকারি কর্মকর্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকর্মীদের প্রশিক্ষণ, আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ হবে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটি সই হবে। এর বাইরে বিনিয়োগ ও উৎপাদন শক্তিশালীকরণ, সেতু নির্মাণে বিশেষ সহায়তাসহ ২৮টি প্রকল্পের জন্য সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ জানান, যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে ২২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের এক-তৃতীয়াংশের বেশি। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরে এর আগে ৪০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আভাস দিয়েছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা। সে বিষয়ে ফয়জুল্লাহ বলেন, এরকম আভাস আমরাও পেয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত ইআরডির পক্ষ থেকে আমরা প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের ২৮টি প্রকল্প চূড়ান্ত করলাম। এর বাইরেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অন্য কোনো এজেন্ডা থাকতেও পারে। দুদেশের চূড়ান্ত সমঝোতার মধ্যে এ অর্থের পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। তিনি বলেন, আগের তালিকা থেকে রেলের দুটি প্রকল্প বাদ দিয়ে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী চীনের সঙ্গে চুক্তির জন্য বাচাই করা ২৮ প্রকল্পের মধ্যে দুটি রয়েছে শিল্পোন্নয়ন প্রকল্প, রেলের উন্নয়নে পাঁচটি, সড়ক পরিবহনে চারটি, বিদ্যুতের সাতটি, জ্বালানির একটি, জীবনমান উন্নয়নে পাঁচটি এবং তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে চারটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চীনের প্রেসিডেন্টের সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায় তৈরি হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত বিভিন্ন বড় প্রকল্পে একক দেশ হিসেবে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করেছে চীন। এতে বাণিজ্য ও অর্থনীতি, বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে নেয়া বড় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। সফরের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকবেন দেশটির তিনজন স্টেট কাউন্সিলর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী এবং উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের নির্বাহী চেয়ারম্যানসহ ২৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল। উল্লেখ্য, গত ৩০ বছরের মধ্যে চীনের কোনো প্রেসিডেন্টের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। চীন এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সাতটি সেতু ও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা দিয়েছে। চীনের একটি অগ্রবর্তী প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে চুক্তিগুলো চূড়ান্ত করেছে। যা আজ দুপুরে দুদেশের স্বাক্ষর শেষে ঋণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ফজলুল করিম এ বিষয়ে ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে এগিয়ে নিতে রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ নামের একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি তার নিজের ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ। এর অধীনে বিশ্বের ৬৫টি দেশ চীনের সঙ্গে সড়ক ও সমুদ্রপথে সংযুক্ত হবে। বাংলাদেশও এই উদ্যোগের আওতাভুক্ত। পুরনো রেশমপথ ও সামুদ্রিক রেশমপথের পুনরুজ্জীবন নামের এই উদ্যোগের আওতায় উপ-আঞ্চলিক কানেকটিভিটি এবং বিশ্বের দেশে দেশে অবকাঠামো উন্নয়নে হাত দিয়েছে চীন। বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারকে সংযুক্ত করে বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডর এবং সমুদ্রপথে চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও ভারতকে সংযুক্ত করা হবে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরে রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ-এর আওতায় একটি কাঠামোগত চুক্তি সই হবে। চীনের সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কাজ ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৭৭৪ একর ভূমিতে চাইনিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন (সিইআইজেড) উন্নয়নে ঋণ ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৫-১৬ সালে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ আমদানি করেছে আট হাজার ২২৩ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আর বাংলাদেশ চীনে রপ্তানি করেছে মাত্র ৭৯১ দশমিক শূন্য তিন মিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ আট বিলিয়ন ডলারের বেশি। এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট (আপটা)-এর অধীনে বাংলাদেশ চীনের বাজারে চার হাজার ৭২১টি পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। এদিকে চীনের পক্ষ থেকে দুদেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সফরকালে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির প্রভাব ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ঘোষণা দেয়া হতে পারে। এ চুক্তি হলে এটি হবে বাংলাদেশের সঙ্গে পৃথিবীর কোনো দেশের প্রথম দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আশাবাদ
এদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফর বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্বের স্মারক ও দু�দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পথে এক ঐতিহাসিক নবযাত্রার সূচনা করবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।
বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্টের সফর উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, �বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ককে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার অংশ হিসেবে ৩০ বছর পর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শুক্রবার বাংলাদেশ সফর করবেন। এ সফরে ২৫টির বেশি চুক্তি ও সমঝোত স্মারক সই হবে। এ চুক্তি সইয়ের ফলে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি, ভৌত অবকাঠামো, সড়ক সেতু, রেল ও জলপথে যোগাযোগ, কৃষিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও সহজ হবে।�
তিনি আরও বলেন, �এসব চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে দু�দেশের মধ্যে সমুদ্র সম্পদসহ দুর্যোগ মোকাবেলা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র সংযোজিত হবে।�
মাহমুদ আলী বলেন, �চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অভ্যর্থনা জানাবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের দুটি জেট চীনের প্রেসিডেন্টের বিমানকে স্কট করে নিয়ে আসবে।�

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

স্বাগতম চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

আপলোড টাইম : ০২:০৪:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

a0e9602efc8230c340b840fb7cca95c3-FE7F0613

সমীকরণ ডেস্ক: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুই দিনের সফরে আজ সকালে ঢাকা আসছেন। তাকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। তার এই সফরে সইয়ের জন্য সাতটি চুক্তিপত্র ও তিনটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করেছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। শি জিনপিংয়ের ঢাকায় আসার একদিন আগে বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তৈরি করা একটি সারসংক্ষেপে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তিন দশক পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটির কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সফরে অর্থায়নের জন্য উপস্থাপন করতে আরও ২৮টি প্রকল্পের তালিকাও তৈরি করেছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা। ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আবুল মনসুর মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষ ও আমাদের মধ্যে অনেক কাটছাঁটের পর ২৮টি প্রকল্পের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে চীনা অর্থায়নের জন্য শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। ক্রমান্বয়ে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দুপক্ষের মধ্যে এসব প্রকল্পের জন্য চূড়ান্ত চুক্তি হবে।
সারসংক্ষেপে দেখা যায়, একটি অনুদান, দুটি কাঠামোগত এবং তিনটি ঋণচুক্তি প্রস্তুত রয়েছে। আট কোটি ৩০ লাখ ডলারের চীনা অনুদানটি ব্যবহার হবে উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগকালে তথ্য দেয়া এবং উদ্ধার কাজ ত্বরিত করতে ফায়ার সার্ভিসের জন্য একহাজার মোটর সাইকেল কিনতে। কাঠামো চুক্তি হবে দুটি; একটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল এবং অন্যটি দাশেরকান্দি পয়ঃনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্প নিয়ে। চট্টগ্রাম মূল শহরের সঙ্গে অন্য কর্ণফুলীর ওপারকে সরাসরি যুক্ত করতে টানেল নির্মিত হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামে যানজট যেমন কমবে, তেমনি কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগের সময় কমে আসবে। কর্ণফুলি টানেল নিয়ে একটি কাঠামোগত চুক্তির পাশাপাশি দুটি ঋণচুক্তি সই হবে। এর আওতায় বাংলাদেশকে ৭০ কোটি ডলার ঋণ দেবে চীন। দাশেরকান্দি পয়ঃনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের কাঠামোগত চুক্তির সঙ্গে ২৮ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হবে। ঢাকা ওয়াসার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বালু নদী দূষণমুক্ত হওয়ার পাশাপাশি ধানম-ি, বনানী, বারিধারা, মহাখালী, তেজগাঁওসহ এলাকার পয়ঃবর্জ্য শোধন হবে। তিন ঋণ চুক্তির অন্যটি হবে ছয়টি নৌযান, তিনটি অয়েল ট্যাংকার ও তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার প্রকল্পে। সমঝোতা স্মারকগুলোর একটি চীনের আর্থিক সহায়তায় নবম, দশম ও একাদশ মৈত্রী সেতু নির্মাণের বিষয়ে। আরেকটি হবে দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে। এর আওতায় জরুরি অপারেশন কেন্দ্র নির্মাণ, সরকারি কর্মকর্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকর্মীদের প্রশিক্ষণ, আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ হবে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটি সই হবে। এর বাইরে বিনিয়োগ ও উৎপাদন শক্তিশালীকরণ, সেতু নির্মাণে বিশেষ সহায়তাসহ ২৮টি প্রকল্পের জন্য সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ জানান, যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে ২২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের এক-তৃতীয়াংশের বেশি। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরে এর আগে ৪০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আভাস দিয়েছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা। সে বিষয়ে ফয়জুল্লাহ বলেন, এরকম আভাস আমরাও পেয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত ইআরডির পক্ষ থেকে আমরা প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের ২৮টি প্রকল্প চূড়ান্ত করলাম। এর বাইরেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অন্য কোনো এজেন্ডা থাকতেও পারে। দুদেশের চূড়ান্ত সমঝোতার মধ্যে এ অর্থের পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। তিনি বলেন, আগের তালিকা থেকে রেলের দুটি প্রকল্প বাদ দিয়ে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী চীনের সঙ্গে চুক্তির জন্য বাচাই করা ২৮ প্রকল্পের মধ্যে দুটি রয়েছে শিল্পোন্নয়ন প্রকল্প, রেলের উন্নয়নে পাঁচটি, সড়ক পরিবহনে চারটি, বিদ্যুতের সাতটি, জ্বালানির একটি, জীবনমান উন্নয়নে পাঁচটি এবং তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে চারটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চীনের প্রেসিডেন্টের সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায় তৈরি হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত বিভিন্ন বড় প্রকল্পে একক দেশ হিসেবে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করেছে চীন। এতে বাণিজ্য ও অর্থনীতি, বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে নেয়া বড় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। সফরের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকবেন দেশটির তিনজন স্টেট কাউন্সিলর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী এবং উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের নির্বাহী চেয়ারম্যানসহ ২৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল। উল্লেখ্য, গত ৩০ বছরের মধ্যে চীনের কোনো প্রেসিডেন্টের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। চীন এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সাতটি সেতু ও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা দিয়েছে। চীনের একটি অগ্রবর্তী প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে চুক্তিগুলো চূড়ান্ত করেছে। যা আজ দুপুরে দুদেশের স্বাক্ষর শেষে ঋণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ফজলুল করিম এ বিষয়ে ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে এগিয়ে নিতে রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ নামের একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি তার নিজের ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ। এর অধীনে বিশ্বের ৬৫টি দেশ চীনের সঙ্গে সড়ক ও সমুদ্রপথে সংযুক্ত হবে। বাংলাদেশও এই উদ্যোগের আওতাভুক্ত। পুরনো রেশমপথ ও সামুদ্রিক রেশমপথের পুনরুজ্জীবন নামের এই উদ্যোগের আওতায় উপ-আঞ্চলিক কানেকটিভিটি এবং বিশ্বের দেশে দেশে অবকাঠামো উন্নয়নে হাত দিয়েছে চীন। বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারকে সংযুক্ত করে বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডর এবং সমুদ্রপথে চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও ভারতকে সংযুক্ত করা হবে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরে রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ-এর আওতায় একটি কাঠামোগত চুক্তি সই হবে। চীনের সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কাজ ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৭৭৪ একর ভূমিতে চাইনিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন (সিইআইজেড) উন্নয়নে ঋণ ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৫-১৬ সালে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ আমদানি করেছে আট হাজার ২২৩ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আর বাংলাদেশ চীনে রপ্তানি করেছে মাত্র ৭৯১ দশমিক শূন্য তিন মিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ আট বিলিয়ন ডলারের বেশি। এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট (আপটা)-এর অধীনে বাংলাদেশ চীনের বাজারে চার হাজার ৭২১টি পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। এদিকে চীনের পক্ষ থেকে দুদেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সফরকালে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির প্রভাব ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ঘোষণা দেয়া হতে পারে। এ চুক্তি হলে এটি হবে বাংলাদেশের সঙ্গে পৃথিবীর কোনো দেশের প্রথম দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আশাবাদ
এদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফর বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্বের স্মারক ও দু�দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পথে এক ঐতিহাসিক নবযাত্রার সূচনা করবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।
বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্টের সফর উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, �বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ককে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার অংশ হিসেবে ৩০ বছর পর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শুক্রবার বাংলাদেশ সফর করবেন। এ সফরে ২৫টির বেশি চুক্তি ও সমঝোত স্মারক সই হবে। এ চুক্তি সইয়ের ফলে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি, ভৌত অবকাঠামো, সড়ক সেতু, রেল ও জলপথে যোগাযোগ, কৃষিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও সহজ হবে।�
তিনি আরও বলেন, �এসব চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে দু�দেশের মধ্যে সমুদ্র সম্পদসহ দুর্যোগ মোকাবেলা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র সংযোজিত হবে।�
মাহমুদ আলী বলেন, �চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অভ্যর্থনা জানাবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের দুটি জেট চীনের প্রেসিডেন্টের বিমানকে স্কট করে নিয়ে আসবে।�