ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্ত এলাকাগুলো ছেয়ে গেছে অন্ধকারে মাদকসহ নানা ধরণের উপকরণ পাচার হচ্ছে এ সীমান্ত পথে!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:৩২:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৩৯০ বার পড়া হয়েছে

fencidile

বিক্রম সাদিক/আওয়াল হোসেন: দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথ ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। সীমান্তে অন্ধকারে থমথমে পরিবেশের মধ্যে দিয়ে আসছে মরণ নেশা মাদক দ্রব্য। যা কখনো সীমান্ত রক্ষীদের চোখের আড়াঁলে দেশের মধ্যে প্রবেশ করছে। সীমান্ত পথে কেউ চলেছেন বাই-সাইকেল নিয়ে। কেউ গুটগুট করে হাঁটছেন অন্ধকার পথে। আলো বলতে মাঝে মধ্যে ধেয়ে আসা গাড়ির হেডলাইট টুকুই। চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্ত এলাকার সড়ক গুলোর পরিস্থিতি এমনই। ঠিকমতো বিদ্যুৎ পোল গুলোতে আলো না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অপর দিকে সীমান্ত এলাকায় রাতে ঐ সব সড়কে দুস্কৃিতদের আনাগোনাও চলে গভীর রাত পর্যন্ত। পাচারকারীদের ঘোরাফেরাও চোখে পড়ে বলে জানালেন স্থানীয় মানুষজন। পুলিশের দেখা মেলে না এসব  অভিজ্ঞতা প্রতিনিয়ত দেখতে হয় রাস্তার দু’পাশের বসবাসরত সীমান্ত এলাকার মানুষের। নম্বর প্লেটহীন মোটরবাইক, ‘প্রেস’ লেখা উটকো গাড়িও যাতায়াত করে এ সীমান্ত এলাকায়। উপজেলার দর্শনা, কুড়–লগাছি, কার্পাসডাঙ্গা, মদনা, সারাবাড়ী, নাস্তিপুর, বাড়াদী, কামাড়পাড়া, ফুলবাড়ী সবখানে একই চিত্র। সীমান্ত এলাকা ঘুরে এসব চিত্র সাংবাদিকদের চোখে পড়ে। রাত ১২টা দিকে দর্শনার রেল বাজারে দেখা গেল, একটি পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। চালকের পাশে বসে ঘুমে ঢুলছেন এক পুলিশ কর্মী। পাশ দিয়ে নম্বর প্লেটহীন মোটরবাইকে দুই যুবক হুঁশ করে চলে গেল। মনে হলো নজর দেয়ার কেউ নেই। এরপর দর্শনা হল্টস্টেশন দিকে আসার পথে দেখলাম কিছু জায়গায় বাতি আলো জ্বলছে। কিছু ব্যাচেলার যুবক একটি বন্ধ দোকানের বারান্দায় বসে। কয়েকজন যাত্রীশেডের তলায় বসে গুলতানী মারছেন। স্টেশন বাজারের বেশির ভাগ অংশ অন্ধকারে ডুবে আছে। পাশে কয়েকটি হাসাপাতাল দেখতে পেলাম। সেখানে দেখলাম তেমন কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। ইতো পূর্বে মা ও শিশু হাসপাতালে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এবার এলাম দর্শনা কাঁচাপট্টি ভিসিপি বাজারে। ঘড়ির কাঁটায় রাত প্রায় একটা। ২জন নাইটগার্ড রাস্তার পাশে ঘুরছিলেন। আমাদের দেখে তাঁরা এগিয়ে এলেন। পরিচয় দেওয়ার পরে আর কোনও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হল না। খানিকক্ষণ ঘুরে ঘুরে দেখলাম কাঁচাপট্টির পাশে রেল লাইনের ধারে কয়েকজন কত্তামাশাই বাংলা মদের হিসাব নিকাশ করছেন। আবার কেউ মাল খেয়ে বেতাল হয়ে ঢুলছেন। শুধু তাই নই এখানে নাকি দিদিদের ও আনাগোনা মেলে। দাদারা নাকি দিদিদের ভাড়া করে আনে। একদিন মোটর বাইকে চরে রাত সাড়ে এগাড়োটা নাগাদ কুড়–লগাছি বাজারে গেলাম দেখা গেল কোন আলো নেই। গা ছমছমে পরিবেশ। দোকানপাট বন্ধ। নৈশ প্রহরী পর্যন্ত চোখে পড়লো না। দু’একটি শিয়াল চকিতে লেজ দেখিয়ে সটকে পড়লো। এখানে নাকি আগে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবার কেউ নেই। তারপর চলে গেলাম কার্পাসডাঙ্গা বাজার এলাকায়। তখন রাত প্রায় অনেক। চারিদিকে সুনসান। কয়েকজন পুলিশ দেখলাম টহল দিচ্ছে। তবে রেগুলার পুলিশি টহল চোখে পড়ে না। এই এলাকায় দুস্কৃতীদের আনাগোনাও থাকে বলে জানা গেছে। অতীতে খুন-অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে নিরাপত্তা জোরদার নয় বলেই এলাকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। অথচ কার্পাসডাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ীক কেন্দ্র হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ। দর্শনা জয়নগর সীমান্তবর্তী এলাকাটা  চারিদিকে অন্ধকার কয়েকটা পোলে বাঁতি জ্বলছে। রাস্তায় দেখলাম ডজন খানিক কুকুরের চেচামেছি। আমাদের দেখে কয়েকটা কুকুর এগিয়ে এলে ছেই ছেই করতে ওখান থেকে কেটে পড়লাম। সামনে গিয়ে দেখি কাস্টমস চেকপোষ্ট। তখন রাত প্রায় সাড়ে বাড়োটা বাজে। দোকান পাট বন্ধ রয়েছে। তবে কয়েকজন কত্তামাশাই দেখলাম একটি দোকানের সামনে ঢুলছে। আমাদের দেখে বললেন, কে তোমারা? আমরা হালকার উপর ঝাপসা উত্তর দিয়ে সোজা কাস্টমসের পাশে দাড়ালাম। তারপর একি হালরে দাদা। চারিদিকে বাংলা মদ আর মাতালদের উৎপাত। একজনকে কাছে ডেকে পরিচয় দিলাম লোকটা একটু ভালো যেহেতেু ভ্যান চালক। সে আমাদের অনেক কিছু শুনালো কাস্টমসের হাল বেহাল। কাস্টমসের পাশে নাকি ফেন্সিডিল, ইয়াবা, মদ বেচাকেনার দারুন একটা স্পট আছে। স্পটের মূল হোতার নাম ও বলে দিলেন। সে নাকি ওখানে একটা আবাসিক মেস ও তৈরী করেছেন। সেখানে নাকি দেশ-বিদেশ থেকে রমণীরা মাঝে মধ্যে আসেন। আবার নাকি দিনের বেলায় কাস্টমসে দালালদের হাতাহাতি সেই রকম চলে। “আসেন আপা আপনার বইটা দেন স্যারের কাছে নিয়ে যাই” এটা হলো দালালদের ধান্দার ভাষা। তবে এই কাস্টমসে দালালি নাকি কখনো বন্ধ হয়না। দালালদের সঙ্গে প্রশাসনের কিছু কতিপয় সদস্যের হাত আছে। তাদের মাধ্যমে নাকি দালালি পরিচালনা হয় এবং কাঁচা পয়সা কামায়। চলবে…..!

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্ত এলাকাগুলো ছেয়ে গেছে অন্ধকারে মাদকসহ নানা ধরণের উপকরণ পাচার হচ্ছে এ সীমান্ত পথে!

আপলোড টাইম : ০১:৩২:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ অক্টোবর ২০১৬

fencidile

বিক্রম সাদিক/আওয়াল হোসেন: দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথ ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। সীমান্তে অন্ধকারে থমথমে পরিবেশের মধ্যে দিয়ে আসছে মরণ নেশা মাদক দ্রব্য। যা কখনো সীমান্ত রক্ষীদের চোখের আড়াঁলে দেশের মধ্যে প্রবেশ করছে। সীমান্ত পথে কেউ চলেছেন বাই-সাইকেল নিয়ে। কেউ গুটগুট করে হাঁটছেন অন্ধকার পথে। আলো বলতে মাঝে মধ্যে ধেয়ে আসা গাড়ির হেডলাইট টুকুই। চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্ত এলাকার সড়ক গুলোর পরিস্থিতি এমনই। ঠিকমতো বিদ্যুৎ পোল গুলোতে আলো না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অপর দিকে সীমান্ত এলাকায় রাতে ঐ সব সড়কে দুস্কৃিতদের আনাগোনাও চলে গভীর রাত পর্যন্ত। পাচারকারীদের ঘোরাফেরাও চোখে পড়ে বলে জানালেন স্থানীয় মানুষজন। পুলিশের দেখা মেলে না এসব  অভিজ্ঞতা প্রতিনিয়ত দেখতে হয় রাস্তার দু’পাশের বসবাসরত সীমান্ত এলাকার মানুষের। নম্বর প্লেটহীন মোটরবাইক, ‘প্রেস’ লেখা উটকো গাড়িও যাতায়াত করে এ সীমান্ত এলাকায়। উপজেলার দর্শনা, কুড়–লগাছি, কার্পাসডাঙ্গা, মদনা, সারাবাড়ী, নাস্তিপুর, বাড়াদী, কামাড়পাড়া, ফুলবাড়ী সবখানে একই চিত্র। সীমান্ত এলাকা ঘুরে এসব চিত্র সাংবাদিকদের চোখে পড়ে। রাত ১২টা দিকে দর্শনার রেল বাজারে দেখা গেল, একটি পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। চালকের পাশে বসে ঘুমে ঢুলছেন এক পুলিশ কর্মী। পাশ দিয়ে নম্বর প্লেটহীন মোটরবাইকে দুই যুবক হুঁশ করে চলে গেল। মনে হলো নজর দেয়ার কেউ নেই। এরপর দর্শনা হল্টস্টেশন দিকে আসার পথে দেখলাম কিছু জায়গায় বাতি আলো জ্বলছে। কিছু ব্যাচেলার যুবক একটি বন্ধ দোকানের বারান্দায় বসে। কয়েকজন যাত্রীশেডের তলায় বসে গুলতানী মারছেন। স্টেশন বাজারের বেশির ভাগ অংশ অন্ধকারে ডুবে আছে। পাশে কয়েকটি হাসাপাতাল দেখতে পেলাম। সেখানে দেখলাম তেমন কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। ইতো পূর্বে মা ও শিশু হাসপাতালে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এবার এলাম দর্শনা কাঁচাপট্টি ভিসিপি বাজারে। ঘড়ির কাঁটায় রাত প্রায় একটা। ২জন নাইটগার্ড রাস্তার পাশে ঘুরছিলেন। আমাদের দেখে তাঁরা এগিয়ে এলেন। পরিচয় দেওয়ার পরে আর কোনও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হল না। খানিকক্ষণ ঘুরে ঘুরে দেখলাম কাঁচাপট্টির পাশে রেল লাইনের ধারে কয়েকজন কত্তামাশাই বাংলা মদের হিসাব নিকাশ করছেন। আবার কেউ মাল খেয়ে বেতাল হয়ে ঢুলছেন। শুধু তাই নই এখানে নাকি দিদিদের ও আনাগোনা মেলে। দাদারা নাকি দিদিদের ভাড়া করে আনে। একদিন মোটর বাইকে চরে রাত সাড়ে এগাড়োটা নাগাদ কুড়–লগাছি বাজারে গেলাম দেখা গেল কোন আলো নেই। গা ছমছমে পরিবেশ। দোকানপাট বন্ধ। নৈশ প্রহরী পর্যন্ত চোখে পড়লো না। দু’একটি শিয়াল চকিতে লেজ দেখিয়ে সটকে পড়লো। এখানে নাকি আগে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবার কেউ নেই। তারপর চলে গেলাম কার্পাসডাঙ্গা বাজার এলাকায়। তখন রাত প্রায় অনেক। চারিদিকে সুনসান। কয়েকজন পুলিশ দেখলাম টহল দিচ্ছে। তবে রেগুলার পুলিশি টহল চোখে পড়ে না। এই এলাকায় দুস্কৃতীদের আনাগোনাও থাকে বলে জানা গেছে। অতীতে খুন-অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে নিরাপত্তা জোরদার নয় বলেই এলাকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। অথচ কার্পাসডাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ীক কেন্দ্র হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ। দর্শনা জয়নগর সীমান্তবর্তী এলাকাটা  চারিদিকে অন্ধকার কয়েকটা পোলে বাঁতি জ্বলছে। রাস্তায় দেখলাম ডজন খানিক কুকুরের চেচামেছি। আমাদের দেখে কয়েকটা কুকুর এগিয়ে এলে ছেই ছেই করতে ওখান থেকে কেটে পড়লাম। সামনে গিয়ে দেখি কাস্টমস চেকপোষ্ট। তখন রাত প্রায় সাড়ে বাড়োটা বাজে। দোকান পাট বন্ধ রয়েছে। তবে কয়েকজন কত্তামাশাই দেখলাম একটি দোকানের সামনে ঢুলছে। আমাদের দেখে বললেন, কে তোমারা? আমরা হালকার উপর ঝাপসা উত্তর দিয়ে সোজা কাস্টমসের পাশে দাড়ালাম। তারপর একি হালরে দাদা। চারিদিকে বাংলা মদ আর মাতালদের উৎপাত। একজনকে কাছে ডেকে পরিচয় দিলাম লোকটা একটু ভালো যেহেতেু ভ্যান চালক। সে আমাদের অনেক কিছু শুনালো কাস্টমসের হাল বেহাল। কাস্টমসের পাশে নাকি ফেন্সিডিল, ইয়াবা, মদ বেচাকেনার দারুন একটা স্পট আছে। স্পটের মূল হোতার নাম ও বলে দিলেন। সে নাকি ওখানে একটা আবাসিক মেস ও তৈরী করেছেন। সেখানে নাকি দেশ-বিদেশ থেকে রমণীরা মাঝে মধ্যে আসেন। আবার নাকি দিনের বেলায় কাস্টমসে দালালদের হাতাহাতি সেই রকম চলে। “আসেন আপা আপনার বইটা দেন স্যারের কাছে নিয়ে যাই” এটা হলো দালালদের ধান্দার ভাষা। তবে এই কাস্টমসে দালালি নাকি কখনো বন্ধ হয়না। দালালদের সঙ্গে প্রশাসনের কিছু কতিপয় সদস্যের হাত আছে। তাদের মাধ্যমে নাকি দালালি পরিচালনা হয় এবং কাঁচা পয়সা কামায়। চলবে…..!