ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দর্শনায় ভয়াবহ বাড়ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা! পেটের তাগিদে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ : নষ্ট হচ্ছে কোমলমতি শিশু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:০৮:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৪৮৮ বার পড়া হয়েছে

দর্শনা অফিস: দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় দিন দিন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে শিশু শ্রমিকেরা। যে বয়সে শিশুদের বই, খাতা  আর কলম নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে শিশুরা বেছে নিয়েছে নানা রকমের ঝুঁকিপূর্ণ আয়ের কাজ। পরিবারের অভাব অনটনে শিশুরা নিজের জীবনকে নানা প্রকার ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে জড়িয়ে ফেলছে। জীবন সংগ্রামের কঠিন বাস্তবতায় কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ জানা সত্ত্বেও অভিভাবকেরা বাধ্য হয়েই এমন কাজে নিজেদের শিশুটিকে সম্পৃক্ত করে  তাদের জীবনকে করে তুলছে দূর্বিসহ। আবার অনেক সময় দেখা গেছে, শিশুরা ঝুঁকি নিতে গিয়ে মারাত্মক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে অনিশ্চয়তায় জীবন যাপন করছে। যার কারণে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের উজ্জল ভবিষ্যৎ। তেমনি ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের শিশুর লেখাপড়া ও অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। আমাদের দেশে শিশু অধিকার ও শিশু শ্রম আইন অনুযায়ী ১৮ বছর বয়সের নিচে সকলেই শিশু। এ বয়সে শিশুশ্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ হলেও শিশু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় শিশু শ্রম দিনে দিনে উদ্বেগের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৮ বছরের নিচে শিশুশ্রম দন্ডনীয় অপরাধের বিধান থাকা সত্ত্বেও চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরসহ জেলার দামুড়হুদা উপজেলার গ্রামগঞ্জে ১০ বছর বয়সের নিচে শিশুরা নানা রকম ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। এছাড়া পরিবারের অভাব অনটন আর সামাজিক নানা বাস্তবতার শিকার হয়ে বেশির ভাগ শিশুরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে সংসার চালাচ্ছে। এদিকে মালিকপক্ষ শিশুদের পরিবারের অভাব অনটনের সুযোগ নিয়ে স্বল্প বেতনে শিশুদের কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে সবার চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোমলমতি শিশুদের উজ্জল ভবিষ্যৎ। সরেজমিনে দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন হোটেল, চায়ের দোকান, ওয়ার্কশপ ও বিভিন্ন প্রকার পরিবহনে হেলপার এবং বিভিন্ন ফ্যাক্টরীর কাজে উদ্বেগজনক হারে শিশুদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অথচ সংবিধানে ১৮ বছরের কম বয়সী সকল শিশুর মর্যাদা দেওয়ার কথা থাকলেও সার্বক্ষনিক কর্মী, অসামাজিক বা অমর্যাদাকর ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা হচ্ছে। শিশু আইন-১৯৭৪ অনুযায়ী, কোন শিশুর কাছে উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নেশা হয়-এমন কোন পানীয় বা ওষুধ বিক্রয় করা যাবেনা। এমনকি যেসব স্থানে নেশাদ্রব্য বিক্রয় হয় সেখানে শিশুদের নিয়ে যাওয়াও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইন আছে কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। জাতীয় শিশুশ্রম নীতি-২০১১ অনুসারে ৫ থেকে ১৮বছরের শিশু কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো যাবে না। ৫ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুশ্রম দন্ডনীয় অপরাধ কিন্তু এ আইন শুধু কাগজে-কলমেই। খোঁজনিয়ে দেখা গেছে, শ্রমে নিয়োজিত অধিকাংশ শিশু মানসিক ও শারীরকিভাবে নানা ঝুঁকির মধ্যে জীবনযাপন করছে। শিশুশ্রমের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এখনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগী ভূমিকা জরুরী। তা না হলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্ন পিছিয়ে পড়বে অনেক দূর।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

দর্শনায় ভয়াবহ বাড়ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা! পেটের তাগিদে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ : নষ্ট হচ্ছে কোমলমতি শিশু

আপলোড টাইম : ০১:০৮:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০১৬

দর্শনা অফিস: দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় দিন দিন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে শিশু শ্রমিকেরা। যে বয়সে শিশুদের বই, খাতা  আর কলম নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে শিশুরা বেছে নিয়েছে নানা রকমের ঝুঁকিপূর্ণ আয়ের কাজ। পরিবারের অভাব অনটনে শিশুরা নিজের জীবনকে নানা প্রকার ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে জড়িয়ে ফেলছে। জীবন সংগ্রামের কঠিন বাস্তবতায় কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ জানা সত্ত্বেও অভিভাবকেরা বাধ্য হয়েই এমন কাজে নিজেদের শিশুটিকে সম্পৃক্ত করে  তাদের জীবনকে করে তুলছে দূর্বিসহ। আবার অনেক সময় দেখা গেছে, শিশুরা ঝুঁকি নিতে গিয়ে মারাত্মক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে অনিশ্চয়তায় জীবন যাপন করছে। যার কারণে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের উজ্জল ভবিষ্যৎ। তেমনি ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের শিশুর লেখাপড়া ও অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। আমাদের দেশে শিশু অধিকার ও শিশু শ্রম আইন অনুযায়ী ১৮ বছর বয়সের নিচে সকলেই শিশু। এ বয়সে শিশুশ্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ হলেও শিশু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় শিশু শ্রম দিনে দিনে উদ্বেগের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৮ বছরের নিচে শিশুশ্রম দন্ডনীয় অপরাধের বিধান থাকা সত্ত্বেও চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরসহ জেলার দামুড়হুদা উপজেলার গ্রামগঞ্জে ১০ বছর বয়সের নিচে শিশুরা নানা রকম ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। এছাড়া পরিবারের অভাব অনটন আর সামাজিক নানা বাস্তবতার শিকার হয়ে বেশির ভাগ শিশুরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে সংসার চালাচ্ছে। এদিকে মালিকপক্ষ শিশুদের পরিবারের অভাব অনটনের সুযোগ নিয়ে স্বল্প বেতনে শিশুদের কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে সবার চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোমলমতি শিশুদের উজ্জল ভবিষ্যৎ। সরেজমিনে দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন হোটেল, চায়ের দোকান, ওয়ার্কশপ ও বিভিন্ন প্রকার পরিবহনে হেলপার এবং বিভিন্ন ফ্যাক্টরীর কাজে উদ্বেগজনক হারে শিশুদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অথচ সংবিধানে ১৮ বছরের কম বয়সী সকল শিশুর মর্যাদা দেওয়ার কথা থাকলেও সার্বক্ষনিক কর্মী, অসামাজিক বা অমর্যাদাকর ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা হচ্ছে। শিশু আইন-১৯৭৪ অনুযায়ী, কোন শিশুর কাছে উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নেশা হয়-এমন কোন পানীয় বা ওষুধ বিক্রয় করা যাবেনা। এমনকি যেসব স্থানে নেশাদ্রব্য বিক্রয় হয় সেখানে শিশুদের নিয়ে যাওয়াও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইন আছে কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। জাতীয় শিশুশ্রম নীতি-২০১১ অনুসারে ৫ থেকে ১৮বছরের শিশু কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো যাবে না। ৫ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুশ্রম দন্ডনীয় অপরাধ কিন্তু এ আইন শুধু কাগজে-কলমেই। খোঁজনিয়ে দেখা গেছে, শ্রমে নিয়োজিত অধিকাংশ শিশু মানসিক ও শারীরকিভাবে নানা ঝুঁকির মধ্যে জীবনযাপন করছে। শিশুশ্রমের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এখনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগী ভূমিকা জরুরী। তা না হলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্ন পিছিয়ে পড়বে অনেক দূর।