ইপেপার । আজ বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

১১ জঙ্গির প্রাথমিক পরিচয় মিলেছে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:১১:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৪৪১ বার পড়া হয়েছে

35060_f1

সমীকরণ ডেস্ক: গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে পৃথক তিন অভিযানে নিহত ১১ জঙ্গির প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া গেছে। তবে তা শত ভাগ নিশ্চিত হতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কাছে থাকা আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখা হবে। এছাড়া সংগ্রহ করা হয়েছে তাদের ডিএনএ নমুনা। এগুলো সিআইডির ল্যাবে পাঠিয়ে তাদের স্বজনের নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। শনিবার নিহত নয়জনের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপর দু’জনের লাশের ময়নাতদন্ত টাঙ্গাইল মেডিকে কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। গাজীপুরে অপারেশন ‘স্পেট এইট’-এ সাত জঙ্গি নিহতের ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে আরও দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনটি জঙ্গি আস্তানাই সিলগালা করে রেখেছে পুলিশ। রোববার দিনভর জঙ্গি আস্তানাগুলোকে ঘিরে ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। গাজীপুর জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, রোববার জয়দেবপুর থানায় দায়ের করা এই মামলায় নিউ জেএমবির সমন্বয়ক ফরিদুল ইসলাম আকাশ ওরফে প্রভাতকে এজহার নামীয় আসামি করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৬ জনকে। জয়দেবপুর থানায় রোববার মামলাটি দায়ের করেন ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান। গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, সংঘবদ্ধ জঙ্গিরা হাঁড়িনাল পাতারটেক এলাকায় আস্তানা গেড়ে দুর্গাপূজায় নাশকতামূলক ঘটনা ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গোয়েন্দা অনুসন্ধানের মাধ্যমে খবর পেয়ে জেলা পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটি) ও সোয়াত যৌথভাবে অভিযান চালায়। দীর্ঘ ৮ ঘণ্টার অভিযানে দু’পক্ষের বন্দুকযুদ্ধের পর ৭ জঙ্গি নিহত হয়। তিনি বলেন, এতে গুলিবিদ্ধ হন একজন পুলিশ সদস্য। ঘটনাস্থলে মামলার আলামত হিসেবে ২২ বোরের রাইফেলের গুলি প্রায় ১০০ রাউন্ড, ১০৫ রাউন্ড পিস্তলের গুলির খোসা, একটি পাকিস্তানের তৈরি রিভলবারসহ তিনটি পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। জঙ্গিরা তাদের ব্যবহৃত ৩টি মোবাইল ফোন এবং কিছু কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলেছে। জঙ্গিদের জীবিত কেন গ্রেফতার করা যায়নি? এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া রোববার বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, তারা (জঙ্গি) সশস্ত্র অবস্থায় থাকে। তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান করলেও তারা সাড়া দেয় না। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড ছোড়ে। ফলে তাদের জীবিত গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড বরখাস্ত হওয়া মেজর জিয়া সম্পর্কে কমিশনার বলেন, তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা অন্য অভিযানগুলোর মতো তাকেও গ্রেফতারে সফল হব। স্পেট এইটে নিহত সাত জঙ্গির পরিচয়:  অপারেশন স্পেট এইটে নিহত জঙ্গি ফরিদুল ইসলাম আকাশ ওরফে প্রভাতের পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। আকাশ নিউ জেএমবির ঢাকা বিভাগের ‘অপারেশন কমান্ডার’ ও তামিম চৌধুরীর মৃত্যুর পর নিউ জেএমবির সমন্বয়ক ছিল। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। সে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড। আকাশের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নের বরইতলায় গ্রামে। তার বাবা আবু সাঈদ পেশায় সবজি ব্যবসায়ী। আকাশ সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা পাস করে। এলাকাবাসী জানায়, মা-বাবা তার নাম রেখেছিলেন ফরিদুল। তবে জেএমবিতে যোগ দেয়ার পর ছদ্মনাম দেয়া হয় আকাশ। শুধু নিজে নয়, জঙ্গি দলে যোগ দেয়ার পর মা ও বোনদেরও নব্য জেএমবিতে যোগ দিতে বাধ্য করেছিল আকাশ। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আকাশের মা ও দুই বোন এখন কারাগারে। নিজ গ্রামে তাকে সবাই ফরিদুল নামেই চেনে। সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে ডিপ্লোমা পাস করেন ফরিদুল। তার বিরুদ্ধে গত বছরেই জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। গত বছরের অক্টোবরে ডিবি পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার রাঘবাড়িয়ায় বেশ ক’জন জঙ্গি আটক হন। তাদের স্বীকারোক্তিতে ওই সময় ফরিদুল ওরফে আকাশের নাম আসে। ওই সময় ডিবির দায়ের করা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিল সে। উত্তরাঞ্চলে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের অন্যতম প্রশিক্ষক আকাশ গত এক বছর থেকে নিজ এলাকায় পলাতক ছিল। তার মা ফুলেরা বেগম ও দুই বোন শাকিলা খাতুন (১৮) ও সালমা খাতুন (১৬) জেএমবির আত্মঘাতী ইউনিটের সদস্য ছিল। ফরিদুলের মাধ্যমেই তার মা-বোনসহ অনেকেই জেএমবিতে জড়িয়ে পড়ে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশ তার মা ও দু’বোনকে আটক করে। আদালতে ১৬৪ ধারায় তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। আকাশের মা ও বোনসহ আত্মঘাতী দলের চার নারী সদস্য বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে আটক হওয়ার পর গা ঢাকা দিয়েছেন আকাশের বাবা কাঁচামাল ব্যবসায়ী আবু সাঈদও। কাজীপুরের বরইতলা গ্রামে বেশ কয়েকবার গিয়েও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ডিবির অভিযানের পর ছোট মেয়ে সুমাইয়া বর্তমানে বগুড়ার ধুনটের ভবনগাতী গ্রামের নানার বাড়িতে আছেন।

সিরাজগঞ্জে গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ওহেদুজ্জামান জানান, ফরিদুলের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তবে ঢাকা থেকে সরকারিভাবে আমাদের এখনও কিছু জানানো হয়নি। জানানো হলে তার স্বজনদের খবর দেয়া হবে। রোববার ফরিদুলের চাচা সাইফুল ইসলাম, গান্ধাইল ইউপি ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আসাদুল ইসলাম ও গ্রাম পুলিশ রফিকুল ইসলাম ডিবি কার্যালয়ে এসে বলেন, টেলিভিশনসহ পত্রিকায় খবর দেখে বিষয়টি জানতে পেরেছেন। সরকারিভাবে খবর দিলে তারা লাশ শনাক্ত ও গ্রহণ করবেন। ফরিদুল ইসলাম আকাশ ওরফে প্রাভাত ছাড়াও অপর ৬ জঙ্গির প্রাথমিক নাম সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন সূত্র। তারা বলছেন, হাঁড়িনালের পাতারটেকে নিহত দুই জনের পরিচয় প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হল- পুরান ঢাকার ইব্রাহিম ও গাইবান্ধার হাফেজ ছানাউল্লাহ। পুরান ঢাকার মোঘলটুলি এলাকার আজিম উদ্দিনের ছেলে মো. ইব্রাহিম (১৯)। সে গত ৮ আগস্ট থেকে নিখোঁজ ছিল। তার নিখোঁজের বিষয়ে গত ৯ আগস্ট বংশাল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা আজিম উদ্দিন। জিডি নম্বর ৫৬৩। তার বাবা একটি ডেভেলপার কোম্পানির কর্মকর্তা। এছাড়া ছানাউল্লাহ ওরফে ছানোয়ার (২২) হাফেজ ছানাউল্লাহ নামেই পরিচিত। তার বাবার নাম আবু শ্যামা। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। নিহতদের মধ্যে ঢাকার মিরপুর থেকে ২ আগস্ট নিখোঁজ হওয়া তরুণ আহমেদ রাফিদ আল হাসান (১৮) ও আয়াদ হাসান খান (১৮) থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। সমবয়সী এই দুই তরুণ মিরপুরের মনিপুর এলাকার ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। তারা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ও লেভেল পাস করে। তারা পরস্পরের খালাতো ভাই। দূরসম্পর্কের মামা আরেফিন ইসলামের মাধ্যমে উগ্রবাদে জড়িয়ে ঘর ছাড়ে। নিখোঁজ হওয়ার আগে রাফিদ আল হাসান মিরপুরের পূর্ব মনিপুরের ১২৭০ নম্বর বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। ওই বাসার সঙ্গে লাগোয়া ১২৭৯/১ নম্বর বাসায় থাকেন আরেফিন ইসলাম। দুই তরুণের নানা আইনউদ্দিন আহমেদ এক বছর আগে জামিয়া ইসলামিয়া দারুন নূর নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ওই মাদ্রাসায় যাতায়াতের সূত্রে আরেফিন ইসলামের সঙ্গে দুই তরুণের ঘনিষ্ঠতা হয়। তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য আত্মীয়দের খবর পাঠিয়েছে। রোবাবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিকে নিহতদের মধ্যে জেএমবি নেতা তানভীর কাদেরীর কিশোর ছেলে আফিফ কাদেরী আদর ওরফে নাবিল রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাবিল আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় নিহত সাবেক ব্যাংকার তানভীর কাদেরীর ছেলে। সে উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের ছাত্র ছিল। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করেননি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা। এ ছাড়া নিহত অপর একজনের সাংগঠনিক নাম জানা গেছে মেকানিক। তার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। নিহতের পরিচয়ের বিষয়ে ডিএমপির জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়, হাঁড়িনাল পাতারটেকে যেসব জঙ্গি ছিল তাদের সবাই নিহত হয়েছে। ফলে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কাছে থাকা আঙুলের ছাপ মিলিয়ে তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এটা আরও সময়সাপেক্ষ বিষয়। গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টার বেশি পার হলেও নিহতদের স্বজন লাশের সন্ধান করতে আসেননি। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে পাঠানো হবে। সেখানে লাশের পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের চিকিৎসক দল রোববার সন্ধ্যার আগে ৯টি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। অন্য চিকিৎসকরা হলেন : ডা. আবুল কালাম আজাদ ও ডা. শেখ কামরুল করিম। গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খান জানান, লাশগুলো এখানে রাখা হবে, না অন্য কোথাও নেয়া হবে- তা পুলিশ জানাতে পারবে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলিতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বুকে, মাথায়, পেটে, হাতে ও পায়ে গুলি লেগেছে। বাড়ি সিলগালা : পুলিশ আরও জানায়, মামলার আলামত হিসেবে পুলিশ হাঁড়িনাল পাতারটেক এলাকার বাড়িটি সিলগালা করে দিয়েছে। বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়াদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভাড়াটিয়ারা তাদের কিছু সরঞ্জাম নিয়ে বাড়ি থেকে চলে গেছেন। রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ওই জঙ্গি আস্তানা দুটি দেখার জন্য ছুটে আসে। গ্রাম্য এলাকায় জঙ্গিরা কীভাবে আস্তানা করে আত্মগোপনে ছিল তা স্থানীয়দের কাছে বোধগম্য নয়। বিষয়টি স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলেছে। সকালে হাঁড়িনাল লেবুবাগান এলাকার আতাউর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির প্রধান ফটকে তালা লাগানো হয়েছে। ভেতরে কোনো লোকজন নেই। তবে এক তলা ওই ভবনের অপর ভাড়াটিয়ারা কোথায় আছেন তাদের খবর আশপাশের কেউ জানাতে পারেননি। পাতারটেকের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, দোতলা বাড়ির নিচতলায় ক্রাইম সিনের হলুদ ট্যাপ দিয়ে কলাপসিবল গেট সিলগালা করে রাখা হয়েছে। নিচতলায় সিঁড়ির কাছে বিভিন্ন স্থানে রক্ত লেগে আছে। অসংখ্য সাধারণ মানুষ ভবনটিকে দেখার জন্য আসছে। ওই এলাকার স্থানীয়দের মধ্যেও রহস্য ঘুরপাক খাচ্ছে। জঙ্গিরা আত্মগোপনের জন্য গাজীপুরকে কেন বেছে নিল? দীর্ঘ দু’মাস ধরে জঙ্গিরা পাতারটেকের এ বাসায় অবস্থান নিয়ে চলাফেরা করলেও তাদের কেউ সন্দেহ করেনি। স্থানীয়রা ভেবেছিল তারা হয়তো কোনো কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বাড়ি দূরে থাকার কারণে হয়তো এ এলাকায় ভাড়া থাকে। ওই ভবনের নিচতলার ভাড়াটিয়া গাড়িচালক শুক্কুর আলীর স্ত্রী আসমা বেগম জানান, দু’মাস আগে চারজন অল্প বয়সী ছেলে দোতলা বাসাটি ভাড়া নেয়। তারা কখনোই ছাদে উঠেনি। তারা কাপড়চোপড়ও ছাদে শুকাতে দিত না। তাদের জুতাগুলোও ঘরের ভেতরে রাখত। চারটি ছেলে কখনোই একত্রে বের হতো না। একজন করে বের হতো। তারা কোথায় যাওয়া-আসা করত তা কেউ জানে না। মাঝে মধ্যে তাদের বয়সী দু-তিনজন ছেলে স্কুলব্যাগ পিঠে করে নিয়ে আসত আবার চলে যেত। তারা কখনোই কারও সঙ্গে কথা বলত না। তারা দেখতে ছিল অত্যন্ত সুদর্শন। দুই জঙ্গি নিহতের মামলা প্রক্রিয়াধীন : এদিকে গাজীপুরের হাঁড়িনাল পশ্চিমপাড়ায় নব্য জেএমবির আস্তানায় অভিযানে দুই জঙ্গি নিহতের ঘটনায় রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। পুলিশ বলছে, মামলাটি প্রক্রিয়াধীন। এ আস্তানায় অভিযানে নিহত দুই জঙ্গি হল- ডুয়েটের (ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্র তৌহিদুল ইসলাম ও নরসিংদীর রাশেদ মিয়া। ঘটনাস্থল থেকে একে-২২ বোরের একটি রাইফেল, ম্যাগাজিন, তিনটি চাপাতি, বিপুল পরিমাণ গুলি, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ল্যাপটপ উদ্ধার করে র‌্যাব। ওই বাড়িটির মালিক আতাউর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী। এ অভিযান শেষে বাড়িটি সিলগালা করে রাখে। এদিকে ডুয়েট এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তৌহিদুল ইসলাম মারূফ তাদের ছাত্র নয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী পরিচালক কামরুন নাহার স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি ঘেঁটে তৌহিদুল ইসলাম নামে সাতজন ছাত্র পাওয়া গেছে। কিন্তু তাদের কারও বাড়ি নরসিংদীতে নয়। টাঙ্গাইলে দুই জঙ্গির ময়নাতদন্ত : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুই জঙ্গির লাশের ময়নাতদন্ত টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। রোববার দুপুরে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ আবদুস সোবহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের লাশ টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। এর আগে শনিবার টাঙ্গাইল র‌্যাব-১২ সিপিসি-৩-এর কোম্পানি কমান্ডার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, নিহত দুই জঙ্গি হল- রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার ইউসুফ গ্রামের জোনায়েদ হোসেনের ছেলে সাগর হোসেন (২২) ও একই জেলা ও উপজেলার নিমপাড়া গ্রামের লতিফুর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান (২৫)। হদিস মেলেনি রাজশাহীতে : টাঙ্গাইলের কাগমারা মির্জামাঠ এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে নিহত দুই জঙ্গির বাড়ি রাজশাহীর চারঘাটে বলে র‌্যাব জানায়। তবে ওই ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে তাদের কোনো হদিস মেলেনি। আতিকুর রহমান ও সাগর হোসেন নামের কাউকে ওই ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। অভিযানের পর নিহত দুই জঙ্গির পরিবারের সন্ধানে নামে র‌্যাব-৫ ও চারঘাট মডেল থানা পুলিশ। কিন্তু ওই ঠিকানায় এ নামের কারও হদিস মেলেনি। রোববার র‌্যাব-৫-এর অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এখনও তাদের কোনো হদিস মেলেনি। তবে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ চারঘাট মডেল থানার ওসি বলেন, ‘নিমপাড়া এলাকায় আতিকুর রহমান নামে কাউকে পাইনি। ইউসুফপুরে সাগর নামে যাকে পাওয়া গেছে তিনি পরিবারের সঙ্গেই থাকেন। তাদের বাবার নামের সঙ্গে নাম মেলেনি। ওই দু’জনের পরিচয় শনাক্তে তারাও কাজ করছেন।’ চারঘাটের নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জানান, নিমপাড়ায় লতিফুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। তিনি জানান, আতিক নামে তার কোনো ছেলে নাই। তার ছেলে বা পারিবারের কেউ নিখোঁজও নেই। ইউসুফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম রতন জানান, জুনায়েদ হোসেনের ছেলে সাগর হোসেন নামেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

১১ জঙ্গির প্রাথমিক পরিচয় মিলেছে

আপলোড টাইম : ০১:১১:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০১৬

35060_f1

সমীকরণ ডেস্ক: গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে পৃথক তিন অভিযানে নিহত ১১ জঙ্গির প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া গেছে। তবে তা শত ভাগ নিশ্চিত হতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কাছে থাকা আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখা হবে। এছাড়া সংগ্রহ করা হয়েছে তাদের ডিএনএ নমুনা। এগুলো সিআইডির ল্যাবে পাঠিয়ে তাদের স্বজনের নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। শনিবার নিহত নয়জনের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপর দু’জনের লাশের ময়নাতদন্ত টাঙ্গাইল মেডিকে কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। গাজীপুরে অপারেশন ‘স্পেট এইট’-এ সাত জঙ্গি নিহতের ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে আরও দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনটি জঙ্গি আস্তানাই সিলগালা করে রেখেছে পুলিশ। রোববার দিনভর জঙ্গি আস্তানাগুলোকে ঘিরে ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। গাজীপুর জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, রোববার জয়দেবপুর থানায় দায়ের করা এই মামলায় নিউ জেএমবির সমন্বয়ক ফরিদুল ইসলাম আকাশ ওরফে প্রভাতকে এজহার নামীয় আসামি করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৬ জনকে। জয়দেবপুর থানায় রোববার মামলাটি দায়ের করেন ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান। গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, সংঘবদ্ধ জঙ্গিরা হাঁড়িনাল পাতারটেক এলাকায় আস্তানা গেড়ে দুর্গাপূজায় নাশকতামূলক ঘটনা ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গোয়েন্দা অনুসন্ধানের মাধ্যমে খবর পেয়ে জেলা পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটি) ও সোয়াত যৌথভাবে অভিযান চালায়। দীর্ঘ ৮ ঘণ্টার অভিযানে দু’পক্ষের বন্দুকযুদ্ধের পর ৭ জঙ্গি নিহত হয়। তিনি বলেন, এতে গুলিবিদ্ধ হন একজন পুলিশ সদস্য। ঘটনাস্থলে মামলার আলামত হিসেবে ২২ বোরের রাইফেলের গুলি প্রায় ১০০ রাউন্ড, ১০৫ রাউন্ড পিস্তলের গুলির খোসা, একটি পাকিস্তানের তৈরি রিভলবারসহ তিনটি পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। জঙ্গিরা তাদের ব্যবহৃত ৩টি মোবাইল ফোন এবং কিছু কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলেছে। জঙ্গিদের জীবিত কেন গ্রেফতার করা যায়নি? এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া রোববার বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, তারা (জঙ্গি) সশস্ত্র অবস্থায় থাকে। তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান করলেও তারা সাড়া দেয় না। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড ছোড়ে। ফলে তাদের জীবিত গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড বরখাস্ত হওয়া মেজর জিয়া সম্পর্কে কমিশনার বলেন, তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা অন্য অভিযানগুলোর মতো তাকেও গ্রেফতারে সফল হব। স্পেট এইটে নিহত সাত জঙ্গির পরিচয়:  অপারেশন স্পেট এইটে নিহত জঙ্গি ফরিদুল ইসলাম আকাশ ওরফে প্রভাতের পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। আকাশ নিউ জেএমবির ঢাকা বিভাগের ‘অপারেশন কমান্ডার’ ও তামিম চৌধুরীর মৃত্যুর পর নিউ জেএমবির সমন্বয়ক ছিল। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। সে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড। আকাশের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নের বরইতলায় গ্রামে। তার বাবা আবু সাঈদ পেশায় সবজি ব্যবসায়ী। আকাশ সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা পাস করে। এলাকাবাসী জানায়, মা-বাবা তার নাম রেখেছিলেন ফরিদুল। তবে জেএমবিতে যোগ দেয়ার পর ছদ্মনাম দেয়া হয় আকাশ। শুধু নিজে নয়, জঙ্গি দলে যোগ দেয়ার পর মা ও বোনদেরও নব্য জেএমবিতে যোগ দিতে বাধ্য করেছিল আকাশ। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আকাশের মা ও দুই বোন এখন কারাগারে। নিজ গ্রামে তাকে সবাই ফরিদুল নামেই চেনে। সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে ডিপ্লোমা পাস করেন ফরিদুল। তার বিরুদ্ধে গত বছরেই জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। গত বছরের অক্টোবরে ডিবি পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার রাঘবাড়িয়ায় বেশ ক’জন জঙ্গি আটক হন। তাদের স্বীকারোক্তিতে ওই সময় ফরিদুল ওরফে আকাশের নাম আসে। ওই সময় ডিবির দায়ের করা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিল সে। উত্তরাঞ্চলে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের অন্যতম প্রশিক্ষক আকাশ গত এক বছর থেকে নিজ এলাকায় পলাতক ছিল। তার মা ফুলেরা বেগম ও দুই বোন শাকিলা খাতুন (১৮) ও সালমা খাতুন (১৬) জেএমবির আত্মঘাতী ইউনিটের সদস্য ছিল। ফরিদুলের মাধ্যমেই তার মা-বোনসহ অনেকেই জেএমবিতে জড়িয়ে পড়ে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশ তার মা ও দু’বোনকে আটক করে। আদালতে ১৬৪ ধারায় তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। আকাশের মা ও বোনসহ আত্মঘাতী দলের চার নারী সদস্য বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে আটক হওয়ার পর গা ঢাকা দিয়েছেন আকাশের বাবা কাঁচামাল ব্যবসায়ী আবু সাঈদও। কাজীপুরের বরইতলা গ্রামে বেশ কয়েকবার গিয়েও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ডিবির অভিযানের পর ছোট মেয়ে সুমাইয়া বর্তমানে বগুড়ার ধুনটের ভবনগাতী গ্রামের নানার বাড়িতে আছেন।

সিরাজগঞ্জে গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ওহেদুজ্জামান জানান, ফরিদুলের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তবে ঢাকা থেকে সরকারিভাবে আমাদের এখনও কিছু জানানো হয়নি। জানানো হলে তার স্বজনদের খবর দেয়া হবে। রোববার ফরিদুলের চাচা সাইফুল ইসলাম, গান্ধাইল ইউপি ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আসাদুল ইসলাম ও গ্রাম পুলিশ রফিকুল ইসলাম ডিবি কার্যালয়ে এসে বলেন, টেলিভিশনসহ পত্রিকায় খবর দেখে বিষয়টি জানতে পেরেছেন। সরকারিভাবে খবর দিলে তারা লাশ শনাক্ত ও গ্রহণ করবেন। ফরিদুল ইসলাম আকাশ ওরফে প্রাভাত ছাড়াও অপর ৬ জঙ্গির প্রাথমিক নাম সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন সূত্র। তারা বলছেন, হাঁড়িনালের পাতারটেকে নিহত দুই জনের পরিচয় প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হল- পুরান ঢাকার ইব্রাহিম ও গাইবান্ধার হাফেজ ছানাউল্লাহ। পুরান ঢাকার মোঘলটুলি এলাকার আজিম উদ্দিনের ছেলে মো. ইব্রাহিম (১৯)। সে গত ৮ আগস্ট থেকে নিখোঁজ ছিল। তার নিখোঁজের বিষয়ে গত ৯ আগস্ট বংশাল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা আজিম উদ্দিন। জিডি নম্বর ৫৬৩। তার বাবা একটি ডেভেলপার কোম্পানির কর্মকর্তা। এছাড়া ছানাউল্লাহ ওরফে ছানোয়ার (২২) হাফেজ ছানাউল্লাহ নামেই পরিচিত। তার বাবার নাম আবু শ্যামা। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। নিহতদের মধ্যে ঢাকার মিরপুর থেকে ২ আগস্ট নিখোঁজ হওয়া তরুণ আহমেদ রাফিদ আল হাসান (১৮) ও আয়াদ হাসান খান (১৮) থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। সমবয়সী এই দুই তরুণ মিরপুরের মনিপুর এলাকার ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। তারা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ও লেভেল পাস করে। তারা পরস্পরের খালাতো ভাই। দূরসম্পর্কের মামা আরেফিন ইসলামের মাধ্যমে উগ্রবাদে জড়িয়ে ঘর ছাড়ে। নিখোঁজ হওয়ার আগে রাফিদ আল হাসান মিরপুরের পূর্ব মনিপুরের ১২৭০ নম্বর বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। ওই বাসার সঙ্গে লাগোয়া ১২৭৯/১ নম্বর বাসায় থাকেন আরেফিন ইসলাম। দুই তরুণের নানা আইনউদ্দিন আহমেদ এক বছর আগে জামিয়া ইসলামিয়া দারুন নূর নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ওই মাদ্রাসায় যাতায়াতের সূত্রে আরেফিন ইসলামের সঙ্গে দুই তরুণের ঘনিষ্ঠতা হয়। তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য আত্মীয়দের খবর পাঠিয়েছে। রোবাবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিকে নিহতদের মধ্যে জেএমবি নেতা তানভীর কাদেরীর কিশোর ছেলে আফিফ কাদেরী আদর ওরফে নাবিল রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাবিল আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় নিহত সাবেক ব্যাংকার তানভীর কাদেরীর ছেলে। সে উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের ছাত্র ছিল। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করেননি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা। এ ছাড়া নিহত অপর একজনের সাংগঠনিক নাম জানা গেছে মেকানিক। তার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। নিহতের পরিচয়ের বিষয়ে ডিএমপির জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়, হাঁড়িনাল পাতারটেকে যেসব জঙ্গি ছিল তাদের সবাই নিহত হয়েছে। ফলে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কাছে থাকা আঙুলের ছাপ মিলিয়ে তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এটা আরও সময়সাপেক্ষ বিষয়। গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টার বেশি পার হলেও নিহতদের স্বজন লাশের সন্ধান করতে আসেননি। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে পাঠানো হবে। সেখানে লাশের পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের চিকিৎসক দল রোববার সন্ধ্যার আগে ৯টি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। অন্য চিকিৎসকরা হলেন : ডা. আবুল কালাম আজাদ ও ডা. শেখ কামরুল করিম। গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খান জানান, লাশগুলো এখানে রাখা হবে, না অন্য কোথাও নেয়া হবে- তা পুলিশ জানাতে পারবে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলিতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বুকে, মাথায়, পেটে, হাতে ও পায়ে গুলি লেগেছে। বাড়ি সিলগালা : পুলিশ আরও জানায়, মামলার আলামত হিসেবে পুলিশ হাঁড়িনাল পাতারটেক এলাকার বাড়িটি সিলগালা করে দিয়েছে। বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়াদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভাড়াটিয়ারা তাদের কিছু সরঞ্জাম নিয়ে বাড়ি থেকে চলে গেছেন। রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ওই জঙ্গি আস্তানা দুটি দেখার জন্য ছুটে আসে। গ্রাম্য এলাকায় জঙ্গিরা কীভাবে আস্তানা করে আত্মগোপনে ছিল তা স্থানীয়দের কাছে বোধগম্য নয়। বিষয়টি স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলেছে। সকালে হাঁড়িনাল লেবুবাগান এলাকার আতাউর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির প্রধান ফটকে তালা লাগানো হয়েছে। ভেতরে কোনো লোকজন নেই। তবে এক তলা ওই ভবনের অপর ভাড়াটিয়ারা কোথায় আছেন তাদের খবর আশপাশের কেউ জানাতে পারেননি। পাতারটেকের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, দোতলা বাড়ির নিচতলায় ক্রাইম সিনের হলুদ ট্যাপ দিয়ে কলাপসিবল গেট সিলগালা করে রাখা হয়েছে। নিচতলায় সিঁড়ির কাছে বিভিন্ন স্থানে রক্ত লেগে আছে। অসংখ্য সাধারণ মানুষ ভবনটিকে দেখার জন্য আসছে। ওই এলাকার স্থানীয়দের মধ্যেও রহস্য ঘুরপাক খাচ্ছে। জঙ্গিরা আত্মগোপনের জন্য গাজীপুরকে কেন বেছে নিল? দীর্ঘ দু’মাস ধরে জঙ্গিরা পাতারটেকের এ বাসায় অবস্থান নিয়ে চলাফেরা করলেও তাদের কেউ সন্দেহ করেনি। স্থানীয়রা ভেবেছিল তারা হয়তো কোনো কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বাড়ি দূরে থাকার কারণে হয়তো এ এলাকায় ভাড়া থাকে। ওই ভবনের নিচতলার ভাড়াটিয়া গাড়িচালক শুক্কুর আলীর স্ত্রী আসমা বেগম জানান, দু’মাস আগে চারজন অল্প বয়সী ছেলে দোতলা বাসাটি ভাড়া নেয়। তারা কখনোই ছাদে উঠেনি। তারা কাপড়চোপড়ও ছাদে শুকাতে দিত না। তাদের জুতাগুলোও ঘরের ভেতরে রাখত। চারটি ছেলে কখনোই একত্রে বের হতো না। একজন করে বের হতো। তারা কোথায় যাওয়া-আসা করত তা কেউ জানে না। মাঝে মধ্যে তাদের বয়সী দু-তিনজন ছেলে স্কুলব্যাগ পিঠে করে নিয়ে আসত আবার চলে যেত। তারা কখনোই কারও সঙ্গে কথা বলত না। তারা দেখতে ছিল অত্যন্ত সুদর্শন। দুই জঙ্গি নিহতের মামলা প্রক্রিয়াধীন : এদিকে গাজীপুরের হাঁড়িনাল পশ্চিমপাড়ায় নব্য জেএমবির আস্তানায় অভিযানে দুই জঙ্গি নিহতের ঘটনায় রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। পুলিশ বলছে, মামলাটি প্রক্রিয়াধীন। এ আস্তানায় অভিযানে নিহত দুই জঙ্গি হল- ডুয়েটের (ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্র তৌহিদুল ইসলাম ও নরসিংদীর রাশেদ মিয়া। ঘটনাস্থল থেকে একে-২২ বোরের একটি রাইফেল, ম্যাগাজিন, তিনটি চাপাতি, বিপুল পরিমাণ গুলি, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ল্যাপটপ উদ্ধার করে র‌্যাব। ওই বাড়িটির মালিক আতাউর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী। এ অভিযান শেষে বাড়িটি সিলগালা করে রাখে। এদিকে ডুয়েট এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তৌহিদুল ইসলাম মারূফ তাদের ছাত্র নয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী পরিচালক কামরুন নাহার স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি ঘেঁটে তৌহিদুল ইসলাম নামে সাতজন ছাত্র পাওয়া গেছে। কিন্তু তাদের কারও বাড়ি নরসিংদীতে নয়। টাঙ্গাইলে দুই জঙ্গির ময়নাতদন্ত : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুই জঙ্গির লাশের ময়নাতদন্ত টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। রোববার দুপুরে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ আবদুস সোবহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের লাশ টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। এর আগে শনিবার টাঙ্গাইল র‌্যাব-১২ সিপিসি-৩-এর কোম্পানি কমান্ডার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, নিহত দুই জঙ্গি হল- রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার ইউসুফ গ্রামের জোনায়েদ হোসেনের ছেলে সাগর হোসেন (২২) ও একই জেলা ও উপজেলার নিমপাড়া গ্রামের লতিফুর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান (২৫)। হদিস মেলেনি রাজশাহীতে : টাঙ্গাইলের কাগমারা মির্জামাঠ এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে নিহত দুই জঙ্গির বাড়ি রাজশাহীর চারঘাটে বলে র‌্যাব জানায়। তবে ওই ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে তাদের কোনো হদিস মেলেনি। আতিকুর রহমান ও সাগর হোসেন নামের কাউকে ওই ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। অভিযানের পর নিহত দুই জঙ্গির পরিবারের সন্ধানে নামে র‌্যাব-৫ ও চারঘাট মডেল থানা পুলিশ। কিন্তু ওই ঠিকানায় এ নামের কারও হদিস মেলেনি। রোববার র‌্যাব-৫-এর অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এখনও তাদের কোনো হদিস মেলেনি। তবে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ চারঘাট মডেল থানার ওসি বলেন, ‘নিমপাড়া এলাকায় আতিকুর রহমান নামে কাউকে পাইনি। ইউসুফপুরে সাগর নামে যাকে পাওয়া গেছে তিনি পরিবারের সঙ্গেই থাকেন। তাদের বাবার নামের সঙ্গে নাম মেলেনি। ওই দু’জনের পরিচয় শনাক্তে তারাও কাজ করছেন।’ চারঘাটের নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জানান, নিমপাড়ায় লতিফুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। তিনি জানান, আতিক নামে তার কোনো ছেলে নাই। তার ছেলে বা পারিবারের কেউ নিখোঁজও নেই। ইউসুফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম রতন জানান, জুনায়েদ হোসেনের ছেলে সাগর হোসেন নামেও কাউকে পাওয়া যায়নি।